রান্না ঘরেই ল্যাবরেটরি – সমাধান | বিজ্ঞান – অনুশীলন বই | ১০ম অধ্যায় | ষষ্ঠ শ্রেণী

রান্না ঘরেই ল্যাবরেটরি - সমাধান | বিজ্ঞান - অনুশীলন বই | ১০ম অধ্যায় | ষষ্ঠ শ্রেণী

এই পোস্টে আমরা জানব ষষ্ঠ  শ্রেনীর, বিষয় বিজ্ঞান (অনুশীলন বই) এর দশম অধ্যায়, রান্না ঘরেই ল্যাবরেটরি সম্পর্কে।

∞ রান্নাঘরে ব্যবহৃত উপকরণগুলোর মধ্যে কোনটা কীসের তৈরি তা কী তোমরা জানো? না জেনে থাকলে বাসায় বাবা-মায়ের কাছ থেকে জেনে নিতে পারো। একই সঙ্গে এসব তৈয়পত্রের আকার- আকৃতিসহ অন্যান্য বৈশিষ্ট্যও একটু ভালোভাবে লক্ষ করো। দেখো তো, কোনগুলোকে আলোতে রাগলে চকচক করে? আবার কোনগুলোকে অন্য কিছু দিয়ে আঘাত করলে ঝনঝন শব্দ করে? আবার কোনগুলো হাত থেকে পড়ে গেলে ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকে। এসব তথ্য নিয়ে ছক-১ এর সবগুলো উপকরণের বৈশিষ্ট্যগুলো ছক-২ এ লিপিবদ্ধ করো।

নমুনা উত্তর: 

বাসার রান্নাঘরে ব্যবহৃত তৈজসপত্রগুলোর বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য ছক-২ এ উপস্থাপন করি।

তৈজসপত্রের নামকি দিয়ে তৈরি? আলোতে চকচক করে?আঘাত করলে ঝনঝন করে?পড়ে গেলে ফেটে বা ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকে?
হাড়ি-পাতিল, ডেকচিঅ্যালুমিনিয়ামহ্যাঁ হ্যাঁ না
প্রেসার কুকারস্টেইনলেস স্টিলহ্যাঁ হ্যাঁ না
নন-স্টিক ফ্রাইপ্যান/ সস প্যানঅ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের মিশ্রণ হ্যাঁ হ্যাঁ না
বাউল /গামলাস্টেইনলেস স্টিলহ্যাঁ হ্যাঁ না
চামচস্টেইনলেস স্টিলহ্যাঁ হ্যাঁ না
কড়াইলোহাহ্যাঁ হ্যাঁ না
গ্যাসের চুলাস্টেইনলেস স্টিলহ্যাঁ হ্যাঁ না
বটি, দালোহাহ্যাঁ হ্যাঁ না
গ্রাস-প্লেট সেটকাচহ্যাঁ নাহ্যাঁ 
ডিনার সেট কোকারিজমেলামাইননানাহ্যাঁ 
মসলা রাখার পাত্রকাচহ্যাঁ হ্যাঁ না
সবজি রাখার ঝুড়িপ্লাস্টিক নানানা
ছোট ছোট কাসার বাটিতামা ও টিনের সংকরহ্যাঁ নানা
শিল নোড়া পাথর খন্ডনানাহ্যাঁ 
মাটির হাড়িমাটিনানাহ্যাঁ 
সিলভারের হাড়িসিলভারহ্যাঁ হ্যাঁ না

একইভাবে ভেবে দেখো তো তোমাদের বাসাবাড়িতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সংযোগ তারগুলোতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য কেমন? সেগুলো কী চকচক করে।

নমুনা উত্তর :

আমাদের বাসাবাড়িতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সংযোগ তারগুলোতে কভার হিসেবে প্লাস্টিক (রাবার) ও ভিতরে বিদ্যুৎ পরিবাহী হিসেবে তামা ব্যবহার করা হয়। নিচে প্লাস্টিক ও তামার

বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো- 

প্লাস্টিকের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য :

১. প্লাস্টিক বিদ্যুৎ পরিবাহী নয় ।

২. একে সহজে ভাংগা যায় না।

৩. তাপে প্লাস্টিক নরম হয়ে যায়।

৪. গরম প্লাস্টিক ঠাণ্ডা অবস্থায় কঠিন ও দৃঢ় হয়।

তামার বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য :

১. তামা বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। 

২. এটি অধিক তাপে গলে যায়।

৩. এটিকে সহজে সংকুচিত করা যায়।

8. এটি ভঙ্গুর নয়।

প্লাস্টিক চকচক করে না কিন্তু তামা চকচক করে।

প্রথম সেশন

প্রশ্ন ১। তামার মধ্য দিয়ে কী তাপ পরিবহন করে।

উত্তর : তামা তাপের সুপরিবাহী। তামা একটি ধাতু। তাই এর ধাতব কেলাসের বিদ্যমান সঞ্ছারনশীল ইলেকট্রনের কারণে তামার মধ্য দিয়ে তাপ পরিবহন করে।

প্রশ্ন ২। কাপড়ের মধ্য দিয়ে কী তাপ পরিবহন করে?

উত্তর : কাপড় তাপের কুপরিবাহী। কারণ কাপড় তাপ ভাল পরিবহন করতে পারে না।

★ একটু ভেবে দেখো তো ঢাকনা অথবা চামচের হাতল হিসেবে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় কেন? যদি প্লাস্টিকের হাতল না থাকে তাহলে কাপড় পেঁচিয়ে নেওয়া হয় কেন? কেনই বা গ্যাসের চুলার বার্নারটি লোহার বা পিতলের হয় কিন্তু সুইচটি প্লাস্টিকের হয়। ভেবে নিচে তোমার মতামত দেখো। 

নমুনা উত্তর : চামচ সাধারণত স্টিলের হয়, যা অত্যন্ত তাপ সুপরিবাহী। ফলে তাপের প্রভাবে খুব দ্রুত গরম হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে চামচের এক প্রান্তে অন্তরক পদার্থ হিসেবে প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যাতে করে তাপ পরিবাহিত হয়ে অন্যপ্রান্ত উত্তপ্ত করতে পারে না। অর্থাৎ এইরূপে ঢাকনা ও অ্যালুমিনিয়ামের বা স্টিলের তৈরি। অ্যালুমিনিয়াম অত্যন্ত তাপ সুপরিবাহী। তাই যাতে করে উভয় প্রাপ্ত তাপ পরিবাহিত হয়ে গরম না করতে পারে। এক্ষেত্রে হাতল হিসেবে কুপরিবাহী হিসেবে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। আবার যদি প্লাস্টিক হাতল না থাকে সেক্ষেত্রে কাপড় পেঁচিয়ে নেওয়া হয়। কারণ কাপড়ত তাপ কুপরিবাহী, যা তাপ পরিবহন করতে পারে না। প্লাস্টিকের হাতল লাগানো স্টিলের চামচের এক প্রান্ত আগুনে ধরে বা তাপ প্রয়োগ করলে অন্যপ্রান্ত গরম হয়ে যায় না। প্লাস্টিক অধাতু বলে তাপ পরিবহন করতে পারে না। অন্যদিকে, তাপ পরিবহন তথা সহজে গরম করার জন্য চুলার বার্নারটি লোহা ও পিতলের হয়। আর সুইচটি যেহেতু হাত দিয়ে অন- অফ করা লাগে, তাই সেটি প্লাস্টিকের বানানো হয়, যাতে গরম না লাগে এবং হাত পুড়ে না যায়।

দ্বিতীয় সেশন

ভেবে দেখেছ, কেন ধাতব চামচ থেকে কয়েনটি আগে আলাদা হয়ে গেল। তিন ধরনের পদার্থের মধ্যে কোনটার তাপ পরিবাহিতা বেশি। 

নমুনা উত্তর : ধাতব চামচ থেকে কয়েনটি আগে আলাদা হয়ে যাওয়ার কারণ হলো ধাতব পদার্থের তাপ পরিবাহিতা বেশি। এ কারণে ধাত চামচটি মুক্ত গরম হয় এবং চামচে থাকা মোমের প্রলেপটি দ্রুত গলে যায়। এর ফলে ধাতম চামচের মধ্যে মোমের প্রলেপ দ্বারা লাগানো কয়েনটি দ্রুত আলাদা হয়ে যায়। কাঠের চামচ, প্লাস্টিক চামচ ও ধাতব চামচের মধ্যে ধাতব চামচের পরিবাহিতা বেশি।

বাড়ির কাজ

ভেবে দেখো তো চায়ের কাপ কেন সাধারণত ধাতব না হয়ে কাচ বা সিরামিকের হয়, আবার অন্যদিকে রান্নার হাঁড়ি প্লাস্টিকের না হয়ে ধাতব কেন হয়? তোমার ভাবনা নিচে লিখে ফেলো-

নমুনা উত্তর : চায়ের কাপ সাধারণত ধাতব না হয়ে কাচ বা সিরামিকের হয়। কারন – 

গরম চা হলেও সিরামিকের তৈরি কাপ গরম হয় না ফলে নিরাপদে কাপে ঠোঁটে লাগানো যায়। সিরামিকের আসল সুবিধাটা হচ্ছে, সিরামিক ভাপে বেশি প্রসারিত হয় না। ফলে সিরামিকের কাপ চায়ের কাপে ফেটে যায় না। আবার খুব পাতলা কাচের চায়ের কাপ সাধারণত খুবই মজবুত হয়। পাতলা কাচের গ্লাসে গরম চা ঢাললেও গ্লাস ফেটে যায় না। কারণ চায়ের উত্তাপে পাতলা কাচের ভেতর আর বাইরের তল প্রায় একই সঙ্গে উত্তপ্ত ও প্রসারিত হয়। এই সম্প্রসারণ কাচের কাপের গায়ে চাপ সৃষ্টি করে না। ফলে চায়ের কাপ ফেটেও যায় না। এজন্য চায়ের কাপ কাচের বা সিরামিকের তৈরি হয়।

অন্যদিকে, রান্নার হাঁড়ি প্লাস্টিকের না হয়ে ধাতব হওয়ার কারণ- ধাতুর তাপ পরিবহন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। ফলে তাপের প্রভাবে ধাতুর তৈরি হাঁড়ি সহজেই খুব গরম হয়ে ওঠে। কিন্তু প্লাস্টিক তাপ কুপরিবাহী, এজন্য দ্রুত গরম হয় না। তাই রান্নার হাঁড়ি প্লাস্টিকের না হয়ে ধাতব হয়।

তৃতীয় সেশন

উপরোক্ত পরীক্ষণ থেকে নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝতে পেরেছ, তামা, গুনা, পেরেকের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে বলে বাল্বটি জ্বলেছে। অন্যগুলোর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ যেতে পারেনি বলে বাল্বটি জ্বলেনি। তাহলে নিশ্চয়ই এটাও বলতে পারবে, কেন বৈদ্যুতিক তার বা যন্ত্রাংশে তামার তারের ওপর প্লাস্টিক বা রাবারের আস্তরণ দেওয়া থাকে। ঝটপট নিচে লিখে ফেলো। কেন বৈদ্যুতিক তার বা যন্ত্রাংশে তামার তারের ওপর প্লাস্টিক বা রাবারের আস্তরণ দেওয়া থাকে।

নমুনা উত্তর: বৈদ্যুতিক তার বা যন্ত্রাংশে তামার তারের ওপর প্লাস্টিক বারবারের আস্তরন দেওয়া থাকে। কারণ-

বৈদ্যুতিক তারের মধ্যে তামার তার থাকে। তামার তার বিদ্যুতের সুপরিবাহী। অর্থাৎ, তামার তারের মধ্যে দিয়ে খুব সহজেই বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে। এই বৈদ্যুতিক তার যদি খোলা থাকে, তাহলে খোলা তারে বিদ্যুৎ প্রবাহের সংস্পর্শে বিপদ ঘটার আশঙ্কা থাকে। এ কারণেই মান্টিক বা রাবার জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক তার ঢেকে দেওয়া হয়। এই প্লাস্টিক বা রাবার জাতীয় পদার্থ কুপরিবাহী পদার্থ। অর্থাৎ এসব পদার্থের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে না। বলে এরা কুপরিবাহী পদার্থ। তাই বৈদ্যুতিক তার বা যন্ত্রাংশে প্লাস্টিক বা রাবার জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যাতে কেউ বিদ্যুতের সংস্পর্শে না আসে এবং শর্ট সার্কিট হয়ে যাতে আগুন লাগার কোনো সম্ভাবনা তৈরি না হয়।

ধাতু ও অধাতুসমূহের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য তোমরা ইতোমধ্যে জেনে গেছ। এখন তোমরা এগুলোকে আলাদাও করতে পারো। কিন্তু ধাতু ও অধাতুকে বল প্রয়োগ করলে এদের কী কোনো পরিবর্তন হয় কী? চলো আরেকটা পরীক্ষণ করে দেখা যাক।

প্রয়োজনীয় সামগ্রী : এই পরীক্ষা করতে লাগবে একটা অ্যালুমিনিয়ামের প্লেট ও এক টুকরো কয়লা। নিজেদের বাসা থেকেই এগুলো নিয়ে আসতে পারো। বাবা মায়ের কাছ থেকে চেয়ে আনতে হলে পুরোনো, ব্যবহার হয় না এমন প্লেট আনলে ভালো। কেন? তা একটু পরেই দেখব। 

যা করতে হবে, এবার এগুলো মেঝেতে রেখে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করো

বাড়ির কাজ

★ একটা পেরেক ৭ দিন পানিপূর্ণ বিকারে রেখে দিয়ে দেখো তো কি হয়। ৭ দিন পর পেরেকটি পর্যবেক্ষণ করার পর নিচের ছকে ছবি আঁক ও পেরেকের কী পরিবর্তন হয়ে তা লিখে রেখো। 

কী পরিবর্তন দেখছ? নিচে লেখ-

নমুনা উত্তর পেরেকটিকে ৭ দিন পানিপূর্ণ বিকারে রেখে দিলে এর ওপর মরিচা পড়ার দৃশ্য দেখা যায়। ৭ দিন আগে পেরেকটি ছিল পরিষ্কার ও ঝকঝকে। এর উপর কোন দাগ ছিল না। কিন্তু ৭ দিন পানিতে থাকার ফলে এর সাথে বাতাসের অক্সিজেন ও পানির সাথে বিক্রিয়া করে পানিযুক্ত ফেরিক অক্সাইড তৈরি করে। মূলত এই পানিযুক্ত ফেরিক অক্সাইড হলো মরিচা। অর্থাৎ ৭ দিন পানিতে রাখার পর পেরেকের উপর মরিচা পড়ে লালচে রং ধারণ করেছে।

চতুর্থ সেশন

তাপ দিলে যে কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয় আর তরল পদার্থ বায়বীয় পদার্থে পরিণত হয় সে তো তোমরা ইতোমধ্যেই জানো। কিন্তু সকল কঠিন পদার্থ কি একই তাপমাত্রায় গলতে শুরু করে? আবার সকল তরল কি একই তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় চলে যায়? চলো একটা পরীক্ষা করে দেখা যাক- 

লক্ষ করো মোমের গলনাঙ্ক, পানির স্ফুটনাঙ্ক ও মোমের হিমাঙ্ক

নমুনা উত্তর : 

যে তাপমাত্রায় মোম গলেছে (গলনাঙ্ক)৫৭° সেলসিয়াস
যে তাপমাত্রায় পানি ফুটেছে (স্ফুটনাঙ্ক ) ১০০ সেলসিয়াস
যে তাপমাত্রায় মোম জমেছে (হিমাঙ্ক) ৫৭° সেলসিয়াস।

একটু ভেবে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো-

প্রশ্ন ৩। আমরা রান্নার কাজে এমন কোনো পাত্র যদি ব্যবহার করতাম যার গলনাঙ্ক কম তাহলে রান্না করা সম্ভব হতো কী না। ভেবে দেখো তো, ধাতব পাত্রে রান্না করা সুবিধাজনক কেন। 

উত্তর : আমরা রান্নার কাজে ধাতব পাত্র ব্যবহার করি। কারণ ধাতব পাত্রের গলনাঙ্ক অনেক বেশি হওয়ায় এতে রান্না করতে সুবিধা হয়। এ ধরনের পাত্র দ্রুত ও বেশি তাপ পরিবহন করায় খাবারের উপাদানগুলো দ্রুত সিদ্ধ হয়। যদি কম গলনাঙ্কের পাত্র নিয়ে রান্না করা হতো, তাহলে সে পাত্র চুলায় আগুনের তাপে কিছুক্ষণ পরই গলতে শুরু করত। ফলে রান্না করা সম্ভব হতো না।

রাজার করার হাঁড়ি-পাতিল সাধারণত অ্যালুমিনিয়াম ধাতুর তৈরি। এছাড়াও আয়রন ধাতুর সংকর স্টেইনলেস স্টিল পার রান্নার জন্য বহু ব্যবহৃত হয়। এসব ধাতব পাত্রে রান্না করার প্রধান কারণ এতে মুত তাপ সম্পায়িত হয়ে খাদ্যদ্রব্য তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয় এবং এর কোনো বাসায়নিক খারাপ বিক্রিয়া নেই বললেই চলে। আবার এখানে যে বিষয়টির তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে পাত্রের তাপ পরিবহন ক্ষমতা বা পরিবাহকত্ব। রান্না করার সময় তাপকে পারের মাধ্যমে খাদ্যবস্তু/খাবারে নিতে হবে। এক্ষেত্রে যে পাত্র বেশি তাপ সরবরাহ করতে পারবে, সেটাই দ্রুত রান্না করতে সক্ষম হবে। সে হিসেবে আলুমিনিয়াম, স্টেইনলেস স্টিল ইত্যাদি ধাতু বা ধাতু সংকরের পাত্র তাপ পরিবাহক হিসেবে অনেকগুণ বেশি ভালো। এজন্যই ধাতব পাত্রে রান্না করা সুবিধাজনক।

প্রশ্ন ৪। খোলা বা ঢাকনা ছাড়া হাঁড়ির তুলনায় বন্ধ হাঁড়িতে অথবা প্রেসার কুকারে দ্রুত রান্না কেন হয়?

উত্তর : খোলা বা ঢাকনা ছাড়া হাঁড়ির তুলনায় বহু হাঁড়িতে বা প্রেসার কুকারে রান্না দ্রুত হয়। কারণ-

বন্ধ হাঁড়িতে বা প্রেসার কুকারে রান্নার পদ্ধতি হলো তাপ ও চাপের সমন্বয়ে রানা দ্রুত সম্পন্ন করা। সাধারণত আমরা যখন খোলা বা ঢাকনা ছাড়া হাড়িতে রান্না করি তখন তাপ থাকলেও সেখানে চাপ থাকে না বললেই চলে। এছাড়া বাষ্প হয়ে সব কিছু সিদ্ধ হতেও সময় লাগে। কিন্তু প্রেসার কুকারে খাবার যতক্ষণ সিদ্ধ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এর ভেতরের চাপ সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। এরপর যখন চাপ অতিরিক্ত হয়ে যাবে তাপের কারণে তখনই খাবার দ্রুত রান্না হবে। এক্ষেত্রে তাপের ফলে ভিতরের থাকা পানি বাষ্পে পরিণত হয়। আর জানা আছে, তরল থেকে বাষ্পে পরিণত হলে আয়তন বৃদ্ধি পায়, অর্থাৎ চাপ বাড়ে। এখনাই তাপ এ চাপ একসাথে প্রেসার কুকারে ব্যবহারের কারণেই তাড়াতাড়ি রাখা হয়।

প্রশ্ন ৫। কোনো খাবার বেশিক্ষণ গরম রাখতে তুমি ধাতব পাত্র ব্যবহার করবে নাকি মাটি অথবা প্লাস্টিক?

উত্তর: আগের দিনে খাবার রান্না এবং সংরক্ষণের জন্য মাটির পাত্র ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে আমরা কাচ, অ্যালুমিনিয়াম কিংবা লোহার বানানো ধাতব পাত্র ব্যবহার করি। কারণ-

মাটির পাত্র তাপ প্রতিরোধী উচ্চ তাপে মাটির পাত্র রাখলে তা ভেঙে যায় না। মাটির পাত্রগুলো উচ্চতাপে পুড়িয়ে বানানো হয় বলে এটি অনেকটা তাপ প্রুফ হয়ে উঠে। এছাড়া মাটির পাত্র তাপ প্রতিরোধী বলে পরিচিত। এজন্য এগুলো খাবারকে দীর্ঘ সময়ের জন্য গরম রাখতে পারে তবে বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত হটপট খাবারকে দীর্ঘ সময় ধরে র রাখে। এ হটপটগুলোর বডি প্লাস্টিকের, তবে ভেতরের অংশ স্টেইনলেস স্টিল তথা ধাতব সংকর দিয়ে তৈরি। দীর্ঘ সময় ধরে খাবার গরম রাখতে হটপটের জুড়ি নেই। আবার তরল খাবার গরম রাখতে ব্যবহার করি থার্মোফ্লাক্স। থার্মোফ্লাক্সের দেওয়াল কাচের তৈরি এবং মুখ কর্ক দিয়ে বন্ধ থাকে। তাই পরিবহন খুব কম হয়। কারণ কাচ ও কর্ক তাপ কুপরিবাহী। 

অন্যদিকে, প্লাস্টিক পাত্রে গরম খাবার রাখা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্লাস্টিকের পারে থাকা রাসায়নিক পদার্থ খাবারের সে মিশে, খাবার থেকে শরীরের ভেতর প্রবেশ করে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হচ্ছে পুরনো সম্ভা, শক্ত প্লাস্টিকের পাত্রে গরম খাবার রাখলে প্লান্টিকে বিষাক্ত মনোমারগুলো প্লাস্টিক থেকে বেরিয়ে খাবারে মিশে যায়।

সংক্ষেপে উত্তর দাও:

প্রশ্ন ১। পদার্থ কাকে বলে?

উত্তর: যা জায়গা দখল করে, যার ভর আছে, আকার ও আকৃতি আছে এবং বল প্রয়োগে বাধার সৃষ্টি করে তাকে পদার্থ বলে। যেমন- ইট, টেবিল, পানি, নাইট্রোজেন ইত্যাদি।

প্রশ্ন ২। ঘনত্ব কাকে বলে?

উত্তর: একক আয়তনে বস্তুর ভরকে ঘনত্ব বলে।

প্রশ্ন ৩। সুপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?

উত্তর: যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে সহজেই তড়িৎ পরিবহন করে তাদের সুপরিবাহী পদার্থ বলে। যেমন- কপার, লোহা ইত্যাদি

প্রশ্ন ৪। কপার তার কোনটির জন্য বিদ্যুৎ সুপরিবাহী।

উত্তর: কপার তার মুক্ত ইলেকট্রনের জন্য বিদ্যুৎ সুপরিবাহী।

প্রশ্ন ৫। অপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে।

উত্তর: যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে তাপ ও বিদ্যুৎ সহজে পরিবহন করা যায় না সেগুলোকে অপরিবাহী পদার্থ বলে। যেমন- কাঠ প্লাস্টিক ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৬। অর্ধপরিবাহী পদার্থ কাকে বলে?

উত্তর: যেসব পদার্থের তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা অপরিবাহীর চেয়ে বেশি কিন্তু পরিবাহীর তুলনায় কম এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে পদার্থের পরিবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় তাদেরকে অর্ধপরিবাহী পদার্থ বলে। যেমন- সিলিকন, জার্মেনিয়াম ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৭। ধাতু কাকে বলে?

উত্তর: যেসব পদার্থ সাধারণত তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী, আঘাত করলে কনকন শব্দ হয়, পিটিয়ে পাত তৈরি করা যায়, চক চক করে সেসব উপাদানকে ধাতু বলে। যেমন- কপার, লোহা, পটাশিয়াম।

প্রশ্ন ৮। অধাতু কাকে বলে?

উত্তর: যেসব পদার্থ সাধারণত তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়, আঘাত করলে তেমন শব্দ হয় না, পিটিয়ে পাত তৈরি করা যায় না সেসব পদার্থকে অধাতু বলে। যেমন- অক্সিজেন, কার্বন ইত্যাদি।

প্রশ্ন ৯। হিমাঙ্ক কাকে বলে?

উত্তর: যে তাপমাত্রার একটি তরল পদার্থ তার অবস্থা পরিবর্তন করে কঠিন পদার্থে পরিণত হয় তাকে হিমাঙ্ক বলে। যেমন- পানির হিমাঙ্ক।

প্রশ্ন ১০। গলনাঙ্ক কাকে বলে? 

উত্তর : যে তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ তার অবস্থা পরিবর্তন করে তরল পদার্থে পরিণত হয়, সেই তাপমাত্রাকে ঐ কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক বলে। 

প্রশ্ন ১১। স্ফুটনাঙ্ক কাকে বলে?

উত্তর: যে তাপমাত্রায় কোনো তরল পদার্থ বাষ্পে পরিণত হতে থাকে তাকে ঐ পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক বলে।

পরবর্তী অধ্যায়ের সমাধান পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন 👇

👉 দেহঘড়ির কলকব্জা – সমাধান | বিজ্ঞান – অনুশীলন বই | ১১ অধ্যায় | ষষ্ঠ শ্রেণী