এই পোস্টে আমরা জানব ষষ্ঠ শ্রেনীর, বিষয় বিজ্ঞান (অনুশীলন বই) এর চতুর্দশ অধ্যায়, রঙের দুনিয়া সম্পর্কে।
প্রথম সেশন
প্রশ্ন ১। কী রং দেখতে পাচ্ছ?
নমুনা উত্তর: সাত রঙের চাকাটা যখন ভীষণ দ্রুত ঘুরছে তখন সবগুলো রংকে আলাদা করা যায় না। এসময় শুধু সাদা রং দেখা যাচ্ছে।
প্রশ্ন ২। এর কারণ কী? অনুমান করো তো?
নমুনা উত্তর: চাকতিতে থাকা রংগুলো ছিল বেগুনি, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। এ সাতটি রং একসাথে মিশে থাকলে আমাদের চোখে সেটাকে সাদা হিসেবে দেখা যায়।
★ একটা কাচের গ্লাস বা স্বচ্ছ পলিব্যাগে পানি নিয়ে তাতে অল্প লাল রং (জলরঙের রং, খাবারের রং, বা যেকোনো রঙ যা পানিতে গুলে যায়) গুলিয়ে এর ভেতর দিয়ে অন্যপাশে কী আছে তা দেখার চেষ্টা করো। গ্লাসের অন্যপাশের বিভিন্ন জিনিসের আসল যে রং তা কি দেখতে পাচ্ছ, নাকি অন্যরকম দেখাচ্ছে? এই লাল রঙের মধ্য দিয়ে কোনো সবুজ পাতা দেখার চেষ্টা করে দেখো। তোমার পর্যবেক্ষন নিচে লিখে রাখো-
নমুনা উত্তর: লাল রঙের মধ্য দিয়ে কোনা সবুজ পাতাকে দেখা চেষ্টা করলে তাকে কুচকুচে কালো দেখায়।
লাল রঙের মধ্য দিয়ে দেখা সবুজ পাতাকে কালো দেখানোর কারণ হলো আলোর শোষণ। গাছের সবুজ পাতার উপর সূর্যের আলো পড়লে আমরা পাতাটিকে সবুজ দেখি আলোর প্রতিফলনের জন্য। এ সময় সবুজ পাতা সবুজ রংকে প্রতিফলিত করে কিন্তু অন্যসব রংকে শোষণ করে। কিন্তু সবুজ পাতায় লাল এর আলো ফেললে পাতাটি লাল রঙ শোষণ করে ফলে সেখান থেকে আর কোনো রং-ই প্রতিফলিত হয় না। তাই সবুজ পাতাকে কালো দেখায়।
দ্বিতীয় সেশন
★ একটা ছোট কাজ করা যাক। খোলা জানালা বা দরজা দিয়ে ঘরের ভেতরে সরাসরি সূর্যের আলো ঢোকে এমন একটা জায়গায় একটা গ্লাসে পানি কানায় কানায় ভর্তি করে রেখে দাও। কী কী ঘটছে লক্ষ করো। নিচের ঘটনাগুলো কি ঘটতে দেখছো ডান পাশে লিখে রাখো-
নমুনা উত্তর :
সম্ভাব্য ঘটনা | তোমার পর্যবেক্ষণ |
পানির পৃষ্ঠদেশ থেকে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে ঘরের ছাদে এসে পড়েছে | আলোর প্রতিফলনের কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। |
সূর্যের আলো পানির ভেতর দিয়ে গ্লাসের ভেতরে ঢুকে গেছে। | আলোর প্রতিসরাঙ্কের কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। |
★ কাপটাতে পানি ঢালতে থাকো। কী ঘটছে? মুদ্রাটা কি আবার দেখতে পাচ্ছ? মনে হচ্ছে না যে মুদ্রাটা উপরে উঠে এসেছে। কীভাবে এটা ঘটল বলে তোমার মনে হয়। তোমার বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করে নিচে তোমার অনুমান লিখে রাখো-
নমুনা উত্তর: আমার বন্ধুর সাথে আলোচনা করে আমার অনুমান নিচে লিখে রাখলাম-
আলোর প্রতিসরণের জন্য মুদ্রাটি উপরে দেখা যাচ্ছে। আলো যখন এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে ঢোকার চেষ্টা করে তখন সেটা সরলরেখায় যায় না। বাকা হয়ে ঢোকে। আলো যদি হালকা মাধ্যে (বাতাস) থেকে ঘন মাধ্যমে (পানি) এ যায় তাহলে আলোর রেখাটি ভেতরের দিকে বেঁকে যায়। আর যদি আলো ঘন মাধ্যম থেকে হালকা মাধ্যমে যায় তাহলে বাইরের দিকে বেঁকে যায়। চিত্রে মুদ্রা ঘনমাধ্যম এবং আমার চোখ হালকা মাধ্যমে আছে। আলো পানিতে থাকা মুল থেকে আমার চোখে যাওয়ার সময় কিছুটা বেঁকে গেছে। এ বেঁকে যাওয়ার কারণে মুদ্রাটি কিছুটা উপরে আছে বলে মনে হয়েছে।
★ একটা চিন্তার খোরাক দেওয়া থাক। বেশি পাওয়ারের চা চোখ লাগিয়ে দেখলে সব আঁকাবাকা লাগে খেয়াল করেছ। এটা কেন ঘটে অনুমান করতে পারো? বন্ধুরা আলোচনা করে তোমার মতামত নিচে টুকে রাখো—
নমুনা উত্তর: বেশি পাওয়ারের চশমা চোখে লাগিয়ে দেখলে সব আকাবাকা লাগার কারণ সম্পর্কে আমার মতামত আলোচনা করা হলো- চশমাই লেন্স থাকে। লেন্সে আলোর প্রতিসরণ ঘটে। আর প্রতিসরণ ঘটার ফলে মাধ্যমের ঘনত্বের কারণে কখনো আলো বাইরের দিকে আবার কখনো ভেতরের দিকে বেঁকে যায়। আলোর এ ভেতরে বা বাইরে বেঁকে যাওয়ার কারণে সব বড় বড় এবং আঁকাবাকা লাগে।
★ বেশ কিছুক্ষণ আগে এক গ্লাস পানি রোদে রেখে দিয়েছিলে মনে আছে তো? এখন গ্লাসটা হাতে নিয়ে দেখো তো একটু গরম মনে হচ্ছে কিনা? তোমার পর্যবেক্ষণ ডান পাশে লিখে রাখো-
সম্ভাব্য ঘটনা | তোমার পর্যবেক্ষণ |
গ্লাসের পানিটা দীর্ঘ সময় রোদে রেখে দেওয়ার পর দেখা যাচ্ছে পানিটা একটুখানি গরম হয়েছে | সূর্যের আলো শোষণ করে পানি একটুখানি গরম হয়েছে। |
তৃতীয় সেশন
★ শিক্ষকসহ ক্লাসের সবার সঙ্গে আলোচনা করে দেখো তো, রংধনু কীভাবে হয়? রংধনু তৈরিতে আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরণের মতো ঘটনাগুলোর কোনো ভূমিকা কি আছে? নিচে তোমার চিন্তা ঢুকে রাখো
নমুনা উত্তর : রংধনু তৈরিতে আলোর প্রতিফলন এবং প্রতিসরণের ভূমিকা আছে। নিচে আমার চিন্তা তুলে ধরলা-
মাঝে মাঝে বৃষ্টির পর নানা রায়ের ধনুক আকাশ জুড়ে দেখা য নানা রংয়ের এই ধনুকলে রংধনু বলে। রংধনুকে অনেক সময় রামধনু বা ইন্দ্ৰধনুও বলে। বৃষ্টি হওয়ার পর বাতাসে পানির কণা থাকে। এই পানির কণায় সূর্যের আলোর প্রতিফলন এবং প্রতিসরণের ফলে আকাশে সূর্যের বিপরীতে রংধনু দেখা যায়। পানির কণার সূর্যের আলো পড়লে সেটা প্রতিফলিত হয়। সূর্যের আলো পানির কণার ভেতর দিয়ে প্রতিফলিত হওয়ার সময় সেটি সাত রংয়ে ভাগ হয়ে যায়। এ রংগুলো হলো বেগুনী, নীল, আসমানী বা আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল রংধনুতে এ সাতটি রং-ই পরপর ধনুকের মতো সাজানো থাকে।
★আলোর প্রতিফলন আমাদের খুবই পরিচিত একটা ব্যাপার। আমরা প্রতিদিন আয়নায় আমাদের মুখ দেখি! আয়নায় নিজের চেহারা দেখার সময় আমরা সব সময় একটা বিষয় লক্ষ করেছি, প্রতিফলিত চেহারায় ডান এবং বাম সব সময় অদল বদল হয়ে যায়। তোমরা কি কখনো এটি কেন হয় চিন্তা করে। দেখেছ?
নমুনা উত্তর: আয়নায় প্রতিফলিত চেহারায় ডান এবং বাম সব সময় অদল বদল হয় । এ বিষয়ে আমার ব্যাখ্যা নিচে তুলে ধরা হলো-
যে পথে চললে আগে সময় সর্বনিম্ন দুরত্ব অতিক্রম করতে পারে আলো সে পথে চলতে চায়। আমার বামপাশ থেকে আলো আমার সাপেক্ষে আয়নার বামপাশে গেলে সর্বনিম্ন দূরত্ব বজায় থাকে। আমার সাপেক্ষে আয়নার বামপাশ হলে আয়নার নিজের ডানপাশ অনুরূপভাবে আমার ডানপাশটা হবে আপনার নিজের বামপাশ এ কারণেই আয়নায় প্রতিফলিত চেহারায় ডান নামের অদল বদল হয়।
★ তোমরা কি এমন একটি আয়না তৈরি করতে পারবে যেখানে আমরা আমাদের চেহারা দেখলে দেখব আমাদের ডান এবং বাম দল বদল হয়নি।
নমুনা উত্তর: দুটি আয়নায় ৯০° কোণে রাখা হলে চেহারার অদল বদল হয় না। এ বিষয়ে আমার ব্যাখ্যা নিচে ধরা – একটি আয়নায় সাধারণত প্রতিফলিত চেহারার অদল বদল হয়। দুটি আয়না ৯০° কোণে রাখলে প্রথম বার প্রতিফলনে বাম হাত ডান হাত বা ডান হাত বাম হাত হয় কিন্তু দুইবার প্রতিফলনে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের প্রতিফলনে বাম হাত আবার বাম হাত এবং ডান হাত আবার ডান হাত হিসেবেই ফিরে আসে। অর্থাৎ চেহারার অদল বদল হয় না।
প্রয়োজনীয় প্রশ্ন:
প্রশ্ন ১। আমরা কখন বস্তু দেখতে পাই?
উত্তর: বস্তুর আলো চোখে পড়লে।
প্রশ্ন ২। সাতটি রং যখন দ্রুত ঘুরতে থাকে তখন কোন রং দেখা যায়?
উত্তর: শুধুমাত্র সাদা।
প্রশ্ন ৩। লাল রংয়ের মধ্য দিয়ে কোনো সবুজ পাতাকে দেখার চেষ্টা করলে কেমন দেখায়?
উত্তর : কুচকুচে কালো।
প্রশ্ন ৪। রংধনুতে কয়টি রং দেখা যায়?
উত্তর : ৭টি।
প্রশ্ন ৫। কালো ও সাদা কাপড় রোদে শুকাতে দিলে কোনটি আগে শুকাবে?
উত্তর : কালো কাপড়।
প্রশ্ন ৬। রংধনুতে বেগুনির আগের রংটির নাম কী?
উত্তর : অতিবেগুনি।
প্রশ্ন ৭। রংধনুতে লালের পরের রংটির নাম কী?
উত্তর: অবলাল।
প্রশ্ন ৮। পোকামাকড় ধরার জন্য কোন রং ব্যবহার করা হয়।
উত্তর : অতিবেগুনি রং।
প্রশ্ন ৯। টেলিভিশনের রিমোট কন্ট্রোলে কোন রং ব্যবহৃত হয়।
উত্তর: অবলাল।
প্রশ্ন ১০। সকালের আকাশ কেমন দেখায়?
উত্তর : নীল দেখায়।
প্রশ্ন ১১। সন্ধ্যায় আকাশ কেমন দেখায়?
উত্তর : গোলাপি দেখায়।
প্রশ্ন ১২। বিজ্ঞানী জন ডাল্টন কোন রং কখনোই দেখতে পারেন নি?
উত্তর: লাল ও সবুজ রঙের পার্থক্য।
প্রশ্ন ১৩। পানির রং নেই কেন?
উত্তর : কারণ পানি স্বচ্ছ।
প্রশ্ন ১৪। আলোর প্রতিসরণের সময় খুব মজার একটা ঘটনা ঘটে সেটা কী?
উত্তর : আলোর পথটা বেঁকে যায়।