এই পোস্টে আমরা জানব ষষ্ঠ শ্রেনীর, বিষয় বিজ্ঞান (অনুশীলন বই) এর পঞ্চদশ অধ্যায়, হারিয়ে গেছে যারা সম্পর্কে।
প্রথম সেশন
★ আমাদের বেশকিছু প্রতিবেশী অনেক আগেই হারিয়ে গেছে, তোমরা নিশ্চয়ই এদেরকে কখনো দেখোই নি। এখন এদের সম্পর্কে কীভাবে জানা যায় বলো তো? ঠিক বলেছ, তোমাদের চেয়ে যা বয়সে বড় তারা হয়তো এদের অনেককেই দেখেছেন। তোমাদের বাসায় যাদের দাদা-দাদি, নানা-নানিরা আছেন তাদের জিজ্ঞেস করতে পারো। এমনকি তোমাদের বাবা-মা, শিক্ষক, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন সবাইকেই জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো এমন কোনো জীবের কথা তারা বলতে পারে কি না, যাদের একটা সময়ে তোমাদের এলাকায় দেখা যেত কিন্তু এখন আর যায় না। সেশন শুরুর আগেই কিংবা সেশন চলাকালীন এরকম বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে কী জানতে পারলে তা নিচে টুকে রাখো-
নমুনা উত্তর-১ (প্রাণীর ক্ষেত্রে ) :
হারিয়ে যাওয়া জীবের (প্রাণীর) নাম | হারিয়ে যাওয়া জীবের (প্রাণীর) বর্ণনা | কতদিন আগে দেখা যেত | কার কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে |
নীলগাই | বাংলাদেশের দিনাজপুর, পঞ্চগড় এলাকায় পাওয়া যেত। বর্তমানে বাংলাদেশে এদের দেখা যায় না। তবে মাঝে মাঝে উত্তরে সীমান্তবর্তী এলাকায় দেখা যায়। এরা হরিণের মতো দেখতে গরুর মতো ছোট শিং আছে। গায়ের রং নীল ধূসর ও হলুদ। | ১৯৪৩ সালের দিকে | দাদা |
সুমাত্রা গণ্ডার | বাংলাদেশে একসময় দেখা যেত। গোটা পৃথিবীতেই এরা এখন বিপন্ন। এদের দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫০ সে.মি. দুইটি শিং থাকে। এদের ওজন ৫০০-৮০০ কেজি। | ১৮৬৭ সালের দিকে | দাদা |
ডোরাকাটা হায়েনা | এদেরকে একসময় রাজশাহী অঞ্চলে দেখা যেত। এদের গায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকে। দল বেঁধে চলাচল করে। খুবই হিংস্র। | উনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত | বাবা |
বনগরু | একসময় বাংলাদেশে দেখা যেত। এখন দেখা যায় না। এদের দেহ বিশাল আকৃতির। প্রায় ছয় ফুট লম্বা। | ১৯৭১ সালের দিকে | দাদা |
জলের কুমির | ১০-১৫ ফুট লম্বা হতো। নদীনালায় বাস করতো। | ১৯৫৭ সালের দিকে | দাদা |
বারো শিঙা হরিণ | বাংলাদেশের সিলেট ও হাওর এলাকায় এদের দেখা যেত। এখন দেখা যায় না, এদের গায়ের রং ছিল হলদে ও বাদামি। | ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত | দাদা |
কৃষ্ণষাড় | রাজশাহী ও দিনাজপুর এলাকায় এদের দেখা যেত, বর্তমানে দেখা যায় না। | নানা | |
রাজশকুন | এদেরকে একসময় বাংলাদেশের সর্বত্র দেখা যেত, বর্তমানে এরা বিলুপ্ত। | নানী | |
পেঁচা পাখি | এরা নিশাচর প্রাণী, ভাই দিনের বেলা দেখা যায় না। চোখ দুটি গোলাকার এবং বেশ বড়। এরা রাতের বেলা অদ্ভুত শব্দ করে। | মা | |
দাঁড় কাক | এদের লোমগুলো কালো পা দেখতে অনেক লম্বা। ঠোঁট চিকন এবং লম্বা বিলের ধারে এদের দেখা যেত। এখন দেখা যায় না। | শিক্ষক |
নমুনা উত্তর-২ (উদ্ভিদের ক্ষেত্রে) :
হারিয়ে যাওয়া জীবের (উদ্ভিদের) নাম | হারিয়ে যাওয়া জীবের (উদ্ভিদের) বর্ণনা | কতদিন আগে দেখা যেত | কার কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে |
উলটকম্বল | এ গাছ ৮-১০ ফুট লম্বা হয়। খুব বেশি মোটা হয় না। গাছের ছালে রেশমের মতো আশ থাকে। ফুলের রঙ মেরুন। ফল পঞ্চা কোণবিশিষ্ট লোমাবৃত। | দাদা | |
মল্লিকা ঝাঁঝি | এটি বীরুৎ জাতীয় আবৃতবীজী জলজ উদ্ভিদ। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধারাসির বিল ও পরে চলনবিলে এদের পাওয়া যায়। এটি একটি পতঙ্গভুক উদ্ভিদ। এটি ১০-১৩ সেন্টিমিটার লম্বা। বর্তমানে এটি বাংলাদেশে বিলুপ্ত। | নানা | |
রোট্যালা | এটি একটি উভচর জাতীয় উদ্ভিদ। এরা ধানক্ষেতের সিক্ত স্থানে ভালো থাকে। বর্তমানে প্রজাতিটি বিলুপ্ত। | মা | |
কোরুদ | এটি পামজাতীয় উদ্ভিদ। এটি আকৃতিতে ছোট এবং লম্বা মাত্র ২-৩ মিটার। এর পাতা দিয়ে ছাতা তৈরি করা হতো এছাড়াও ঘরের ছাউনির কাজে ব্যবহৃত হতো। | দাদী | |
লজ্জাবতী গাছ | লজ্জাবতী গাছ সাধারণত মাঠে বিভিন্ন ঘাসের সাথে জন্মাতে দেখা যেত, কিন্তু বর্তমানে দেখা যায় না । এরা আকারে ছোট এ পাতাগুলোও ছোট। ছোঁয়া লাগলেই পাতাসহ গাছটি গুটিয়ে যায়। | বাবা | |
ছাতিম গাছ | ছাতিম বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। আকারে বেশ বড় হয়। এগুলো বর্তমানে দেখা যায় না। এদের ফলগুলো অনেক লম্বা হয়। | ১৯৭৫ | দাদা |
★ জীবগুলোর হারিয়ে যাওয়ার বা বিলুপ্ত হওয়ার কারণ কী? তোমার দলের সবার মতামত শোনো, তোমার নিজের কী মনে হয়। এবার তোমার “তালিকা থেকে যেকোনো একটা উদ্ভিদ/প্রাণী বেছে নাও, যার বিলুপ্তির কারণ তুমি খুঁজে দেখতে চাও। দলের বাকিরা যে যার মতো একটা জীবকে বেছে নেবে।
নমুনা উত্তর : রাজশকুন
★ এই জীবটি ঠিক কোন সময়ে তোমাদের অঞ্চল থেকে হারিয়ে গেছে? ওই সময়ে এই অঞ্চলের পরিবেশে এমন কী ঘটেছিল যার কারণে একটা জীব পুরোপুরি লুপ্ত হয়ে গেল? সেটা জানতে হলে আগে জানতে হবে এই জীবের খাদ্যাভ্যাস কেমন ছিল? থাকার জায়গা কোথায় ছিল? এই অঞ্চলের পরিবেশের কোনো পরিবর্তনের কারণে কি তার বাসা বানানোর জায়গা বা খাবারের অভাব দেখা দিয়েছিল? নাকি মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণী তাদের মেরে শেষ করে ফেলেছে? এই তথ্যগুলো পেতে হলে আবার তোমার চেয়ে যারা বয়সে বড়, তাদের কাছে যেতে হবে। সেশনের সময়টাতে স্কুলের শিক্ষক বা অন্যান্য বয়স্ক যারা আছেন তাদের কাছ থেকে তথ্য নিতে পারো। আর সেশনের পর পরিবারের বয়স্ক সদস্য, প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও খোঁজ নিতে পারো।
তথ্যগুলো পাওয়ার পর নিচের ছকে লিখে রাখো-
নমুনা উত্তর :
বিলুপ্ত জীবের নাম : রাজশকুন | |
খাদ্যাভ্যাস, আবাস ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য | হারিয়ে যাওয়ার কারণ (পরিবেশগত কিংবা অন্য যেকোনো কারণ) |
খাদ্যাভ্যাস : মৃত পশুর দেহ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। আবাস: এরা মূলত উঁচু গাছের ডালে পাতা দিয়ে বাসা তৈরি করতো। অন্যান্য বৈশিষ্ট্য : এরা দলবদ্ধভাবে অবস্থান না করে একা বা জোড়ায় অবস্থান করত। পুরুষ ও স্ত্রী সদস্য দেখতে একই ধরনের ছিল। এর স্ত্রী সদস্য একটি মাত্র ডিম পাড়ত। | রাজশকুন হারিয়ে যাওয়ার পিছনে পরিবেশগত ও মানুষসৃষ্ট উভয় কারণই বিদ্যমান ছিল। যেমন– ১. এদের প্রধান খাদ্য ছিল মৃত গরুর দেহ। গরু মোটাতাজাকরণে গরুর খাদ্য ও দেহে অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক প্রয়োগের ফলে ঐ এন্টিবায়োটিক পাকস্থলীতে জমা থাকত। মৃত গরুর দেহ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার ফলে রাজশকুন প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যার ফলে এদের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে এবং বিলুপ্ত ঘটে। ২. অবাধে বনাঞ্চল ধ্বংস করার ফলে এদের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যায় যা এদের বিলুপ্তির পেছনে ভূমিকা রাখে। ৩. পরিবেশের জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য সংকট, বাসস্থান ধ্বংস, অবাধে শিকার প্রভৃতি কারণেও রাজশকুন বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। |
তৃতীয় সেশন
★ আগের হারিয়ে যাওয়া জীবনের তো চাইলেও আর হয়তো কখনো ফিরিয়ে আনা যাবে না। কিন্তু এখন তোমাদের যারা প্রতিবেশী, তাদের যাতে এরকম বিলুপ্তির আশঙ্কা তৈরি না হয় তা দেখা কিন্তু তোমাদেরও দায়িত্ব। এবার একটু ভেবে দেখো তো, এই মুহূর্তে তোমার আশপাশের পরিবেশে যে ধরনের পরিবর্তন ঘটছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে পরিবেশে কোন কোন উদ্ভিদ বা প্রাণী হারিয়ে যাওয়ার ভয় আছে? একটু ভেবে নিচের ছকে নোট কর–
নমুনা উত্তর-১:
হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে এমন জীব | ঝুঁকিতে থাকার কারণ |
মায়া হরিণ | মাংসের লোভে শিকার |
শুশুক | মাংসের লোভে শিকার |
মেছোবাঘ | শিকার ও বনভূমি উজাড় |
মিঠাপানির কুমির | বাসস্থান উজাড় ও জলবায়ু পরিবর্তন |
নমুনা উত্তর- ২ :
হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে এমন জীব | ঝুঁকিতে থাকার কারণ |
শিমুল গাছ | শিমুলের তুলা খুব জনপ্রিয় হলেও এর কাঠ তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। আসবাবপত্র তৈরিতে মানুষ শিমুল কাঠ ব্যবহার করে না। কারণ এ কাঠ টেকসই হয় না। এছাড়া শিমুল তুলার বিকল্প হিসেবে মানুষ কার্পাস তুলা ও গার্মেন্টসের ভুলা ব্যবহার করছে। এসব কারণেই শিমুল গাছ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। |
ধুতুরা গাছ | বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়ে, পতিত জমিতে, উঁচু জমিতে ধুতুরা গাছ দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে অধিক সংখ্যক বসতবাড়ি নির্মাণ, পতিত জমি আবাদি জমিতে পরিণত হওয়ার কারনে ধুতুরা গাছ ঝুঁকিতে রয়েছে। |
বাবুই পাখি | বাবুই পাখি সাধারণত তালগাছ, খেজুর গাছ, সুপারি গাছ ইত্যাদি গাছের পাতার সাথে বাসা তৈরি করে কিন্তু এসব গাছ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তাই আবাসস্থল হ্রাস পাওয়ার কারণে বাবুই পাখি ঝুঁকিতে রয়েছে। |
★ দলের সঙ্গে বসে কিছু পরিকল্পনা দাঁড় করাও কীভাবে এই প্রতিবেশীদের বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো যায়। আলোচনার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে এমন তিনটি আইডিয়া নিচে নোট করে রাখো–
নমুনা উত্তর: আমার দলের সঙ্গে আলোচনায় প্রতিবেশীদের বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি আইডিয়া নিচে নোট করা হলো-
১. অভয়াশ্রম : এটি এমন একটি প্রাকৃতিক অঞ্চল যেখানে মাটি, পানি, উদ্ভিদ, প্রাণী অণুজীব সুরক্ষার জন্য অক্ষত রাখা হবে যাতে করে সব ধরনের জীব মুক্তভাবে বিস্তার লাভ করতে পারে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণীকে সংগ্রহ করে অভয়াশ্রমে সংরক্ষণ করে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো যায়।
২. পরিবেশ সংরক্ষণ : ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশের কাজাল কেটে নিজেদের আবাসস্থল তৈরি করছি। যার ফলে আমাদের প্রতিবেশী জীবদের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। এতে করে প্রতিবেশী জীবকুল বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রতিবেশী জীবদেরকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো যায়।
৩. বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন প্রয়োগ : আমাদের প্রতিবেশী অনেক প্রাণী আছে, যারা অনেক সময় আমাদের গৃহপালিত পশু-পাখি খেয়ে ফেলে। এতে করে ঐ সকল হিংস্র প্রতিবেশীদের দেখা মাত্রই হত্যা করি। যা আইনত দন্ডনীয়। তাই যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের প্রতিবেশীদের বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানো যায়।
প্রয়োজনীয় প্রশ্ন :
প্রশ্ন ১। বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাওয়া একটি প্রাণীর নাম লেখ।
উত্তর : নীলগাই ।
প্রশ্ন ২। নীলগাই দেখতে কোন প্রাণীর মতো!
উত্তর: হরিণ।
প্রশ্ন ৩। ডোরাকাটা হায়না বাংলাদেশের কোথায় দেখা যেত?
উত্তর: রাজশাহী অঞ্চলে।
প্রশ্ন ৪। বাংলাদেশে সর্বশেষ কত সালে বনগরু দেখা গিয়েছিল?
উত্তর : ১৯৭১ ।
প্রশ্ন ৫। রাজশকুনের খাদ্য কী?
উত্তর : মৃত পশুর দেহ।
প্রশ্ন ৬। কোন গাছের পাতা স্পর্শ করলে গুটিয়ে যায়?
উত্তর: লজ্জাবতী।
প্রশ্ন ৭। পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হওয়া একটি হাঁসের নাম লেখ।
উত্তর : গোলাপি মাথাওয়ালা হাঁস।
প্রশ্ন ৮। বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত শকুনের নাম কী?
উত্তর: রাজশকুন
প্রশ্ন ৯। একটি নিশাচর প্রাণীর নাম লেখ ।
উত্তর : পেঁচা।
প্রশ্ন ১০। প্রাকৃতিক পরিবেশে রেখে জার সংরক্ষণের কৌশলকে কী বলে?
উত্তর: অভয়াশ্রম।