এই পোস্টে আমরা জানবো ৭ম শ্রেনীর বিষয় বাংলা এর চতুর্থ অধ্যায়, চারপাশের লেখার সাথে পরিচিত হই সম্পর্কে।
ছবি দেখে বোঝার চেষ্টা করি
ছবিগুলো দেখো এবং ছবির নিচে দেওয়া প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করো।
ক. এটি কী নামে পরিচিত?
উত্তর: এটি ‘ব্যানার’ নামে পরিচিত।
খ. এর ব্যবহার কী?
উত্তর: সমাজের অনেক মানুষ দলবদ্ধ হয়ে কোনো বার্তা প্রকাশের জন্য ব্যানার (banner) ব্যবহার করে থাকে। এর ভাষা সামষ্টিক বক্তব্য প্রকাশে অগ্রগণ্য। ব্যক্তির বিশেষত্ব প্রকাশেও ব্যানার উপযোগী। ইতিহাস থেকে জানা যায়, রোমান নাইটগণ যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের সহজে দৃশ্যমান করার জন্য সর্বপ্রথম ব্যানার ব্যবহার করে। আজও সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে সাধারণ মানুষের দাবি উত্থাপনে ব্যানার ব্যবহূত হয়। রাষ্ট্র তার আদর্শ প্রচারে ব্যানার ব্যবহার করে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যানার অত্যন্ত জনপ্রিয় মাধ্যম।
গ. এ রকম নমুনা তুমি কি কোথাও দেখেছ? কোথায় দেখেছ?
উত্তর: হ্যাঁ, দেখেছি। স্কুলের মাঠে; কোরবানির সময়ে; রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।
ক. এটি কী নামে পরিচিত?
উত্তর: এটি ‘ফেস্টুন’ নামে পরিচিত।
খ. এর ব্যবহার কী?
উত্তর: ফেস্টুন অপেক্ষাকৃত বেশি সাজানো প্রায়োগিক লেখা। ১৭ শতকে ফরাসি ‘feston’ ও ইতালিয় শব্দ ‘festone’ থেকে ‘festoon’ শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ ফুল ও প্রদীপ দিয়ে বাড়ির সামনে সাজানো। সাধারণত আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশে সংক্ষিপ্ত ভাষায় তাতে বক্তব্য পরিবেশিত হয়। একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বিশেষ কোনো অনুভূতি ফেস্টুনে লেখা হলে তা সকলের চিন্তাকে আন্দোলিত করে তোলে। উৎসব, মেলা-পার্বণ, ঐতিহাসিক দিবস ও ব্যক্তিত্ব সস্মরণে বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য ধারণেই ফেস্টুনের বৈশিষ্ট্য। সামাজিক মানুষের মনের আনন্দ-আবেগ ফেস্টুনে ফুটে ওঠে। শুধু বস্ত্রব্য পরিবেশন নয় ফেস্টুনকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে ও ছবি এঁকে উৎসবের আনন্দকে চাঙ্গা করে তোলে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই।
গ. এ রকম নমুনা তুমি কি কোথাও দেখেছ? কোথায় দেখেছ?
উত্তর: হ্যাঁ, দেখেছি। স্কুলের গেটের দুদিকে; মার্কেটের দালানের সামনে।
ক. এটি কী নামে পরিচিত?
উত্তর: এটি ‘পোস্টার’ নামে পরিচিত।’
খ. এর ব্যবহার কী?
উত্তর: জনগণের সামনে কোনো বিষয় নিয়ে আসা ও তাকে দ্রুত প্রচার করার জন্য পোস্টার ব্যবহৃত হয়। সংক্ষিপ্ত পরিসরে পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য ধারণ করার গুণের জন্য পোস্টার সারা বিশ্বে জনপ্রিয়। আঠারো শতকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম পোস্টার ব্যবহৃত হয়। সাধারণত রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক আদর্শ প্রচার করার জন্য পোস্টার ব্যবহৃত হয়। সমাজের বৃহৎ জনগোষ্ঠী একতাবদ্ধ হয়ে নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্ট কোনো শ্রেণির বিবৃদ্ধে সংগ্রামী হয়ে ওঠার বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে পোল্টারের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত। সমগ্র ইতিহাস জুড়ে গণমানুষের প্রতিবাদ জানানোর জন্য পোস্টার অত্যন্ত কার্যকর প্রায়োগিক লেখা হিসেবে প্রণণিত। রাষ্ট্র এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান সবাই দৃঢ়তার সাথে বক্তব্য প্রকাশে আজও পোস্টার ব্যবহার করে।
গ. এ রকম নমুনা তুমি কি কোথাও দেখেছ? কোথায় দেখেছ?
উত্তর: হ্যাঁ, দেখেছি। নির্বাচনের সময়ে দেয়ালে সাঁটানো এবং দড়িতে টাঙানো অবস্থায়।
ক. এটি কী নামে পরিচিত?
উত্তর: এটি ‘প্ল্যাকার্ড’ নামে পরিচিত।
খ. এর ব্যবহার কী?
উত্তর: কাগজ বা কার্ডবোর্ডের উপরে সংক্ষেপে বক্তব্য প্রকাশ করার মাধ্যম প্ল্যাকার্ড। জনসচেতনতা, উৎসব, খেলাধুলা, কর্তৃপক্ষের ঘোষণা প্রভৃতি ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়। লাঠির মাথায় শত্রু করে বেঁধে রঙিন অক্ষরে প্ল্যাকার্ড লেখা হয়। এতে পরিবেশিত বক্তব্য তীক্ষ্ণ ও আবেদনময় হয়ে ওঠে। এ প্রায়োগিক লেখা তাই পরিবেশ সচেতনতা, সামাজিক জুটি, কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও জনদাবি সবকিছুকে উজ্জ্বলভাবে প্রকাশ করে। এর ভাষা অনেক সময় ছন্দে ছন্দে মানুষের মুখে মুখে ফেরে। তাই প্ল্যাকার্ড মানুষের চিন্তা জগতে প্রভাব বিস্তার করে।
গ. এ রকম নমুনা তুমি কি কোথাও দেখেছ? কোথায় দেখেছ?
উত্তর: হ্যাঁ, দেখেছি। মিছিলে, র্যালিতে, মজাল শোভাযাত্রায়, মানববন্ধনে।
ক. এটি কী নামে পরিচিত?
উত্তর: এটি ‘বিলবোর্ড’ নামে পরিচিত।
খ. এর ব্যবহার কী?
উত্তর: বিলবোর্ড প্রায়োগিক লেখার একটি পদ্ধতি। এটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বা এককভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে পারে। পোস্টার ও ফেস্টুনের চেয়ে বড়ো এবং রঙিন হওয়াতে এটি সহজেই পথচারী ও ক্রেতার দৃষ্টি সহজে কেড়ে নেয়। শান্তিপূর্ণ সময়ে পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া ও সংঘর্ষের সময়ে শান্তির বার্তা ধারণ করে বিলবোর্ড। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিলবোর্ডের কদর বেশি। কারণ তাতে নিদিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লোগো ও শ্লোগান লেখা হয়। আধুনিক বিশ্বে খ্যাতনামা সকল প্রতিষ্ঠান প্রচার ও প্রসারের জন্য বিলবোর্ড ব্যবহার করে। পণ্যের গুণাগুণ বর্ণনা কিংবা জাতীয় আদর্শ প্রচার সকল ক্ষেত্রেই বিলবোর্ড কার্যকর প্রায়োগিক লেখা।
গ. এ রকম নমুনা তুমি কি কোথাও দেখেছ? কোথায় দেখেছ?
উত্তর: হ্যাঁ, এরকম নমুনা আমি দেখেছি। রাস্তার পাশে, চৌরাস্তার মোড়ে, অফিসের ছাদে, বাসা-বাড়ির ছাদে।
ক. এটি কী নামে পরিচিত?
উত্তর: এটি ‘নোটিশ’ নামে পরিচিত।
খ. এর ব্যবহার কী?
উত্তর: সাধারণত অফিস-আদালত ও স্কুল-কলেজে নোটিশ ব্যবহৃত হয়। এ প্রায়োগিক লেখার মূল উদ্দেশ্য অধীনস্থ সকলকে কোনো কিছু জানানো। অফিসের নিয়ম ও কার্যক্রম সম্পর্কে ছোট্ট পরিসরে এ প্রায়োগিক লেখা ব্যবহূত হয়। তোমাদের স্কুলে ভর্তি, ছুটি ঘোষণা, বেতন পরিশোধ ও অনুষ্ঠান সম্পর্কে নিদিষ্ট স্থানে নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের ভাষা কিছুটা প্রাতিষ্ঠানিক হলেও তা সহজবোধ্য। সরকারি, বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান নোটিশ ব্যবহার করে। এতে কোনো আবেগ অনুভূতি স্থান পায় না। থাকে নিয়ম ও করণীয় সম্পর্কে নির্দেশ।
গ. এ রকম নমুনা তুমি কি কোথাও দেখেছ? কোথায় দেখেছ?
উত্তর: হ্যাঁ, দেখেছি। বিদ্যালয়ে, অফিস আদালতের সামনে, দেয়ালে সাঁটানো অবস্থায়, অনলাইনে।
ক. এটি কী নামে পরিচিত?
উত্তর: এটি ‘লিফলেট’ নামে পরিচিত।
খ. এর ব্যবহার কী?
উত্তর: লিফলেট (Leaflet) অর্থ ক্ষুদ্র পাতা। ছোট্ট কাগজে সংক্ষেপে বার্তা বহন করে লিফলেট। প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি প্রচারের জন্য লিফলেট ব্যবহার করে। এর ভাষ্য আকর্ষণীয় হয়। পণ্যের বিজ্ঞাপন মানুষের হাতে হাতে পৌছে দেয় লিফলেট। তেমনই সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টিতে লিফলেট কার্যকর। সহজ শব্দে, সরল বাক্যে লিফলেট লেখা হয়। সরকারি, বেসরকারি যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, পণ্য-সেবার বিজ্ঞাপন সবই লিফলেটে প্রকাশিত হয়। বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে এর লেখা ইঙ্গিতধর্মী বা বিবৃতিমূলক হতে পারে।
গ. এ রকম নমুনা তুমি কি কোথাও দেখেছ? কোথায় দেখেছ?
উত্তর: হ্যাঁ, দেখেছি। দেয়ালে সাঁটানো অবস্থায়, যাতে করে বিলি করতে।
ক. এটি কী নামে পরিচিত?
উত্তর: এটি ‘মোড়কের লেখা’ নামে পরিচিত।
খ. এর ব্যবহার কী?
উত্তর: মোড়ক পণ্যের বিবরণ ধারণ করে। এতে পণ্যের উৎপাদন প্রণালি, উপকরণ ও ব্যবহারবিধি লেখা হয়। প্রায়োগিক লেখার অন্যতম সুফল হিসেবে ভোক্তা পণ্যটি সম্পর্কে জানতে পারে। পণ্যের উৎপাদন কাল ও তার মেয়াদকাল সম্পর্কে জানায় মোড়ক। পণ্যের পরিচিতি ও প্রসার হয় মোড়কের লেখায়। এতে উৎপাদনকারী উপকৃত হয়। আবার ব্যবহারবিধি, উৎপাদনকারী, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ এবং মূল্য উল্লেখ থাকে বলে ক্রেতার স্বার্থ রক্ষিত হয়। শুধু তাই নয়, মোড়কে লিখিত উৎপাদনের উপকরণ ও ব্যবহারবিধি ব্যবসায়ী ও পরিবেশকদের সঠিক তথ্য জানায়।
গ. এ রকম নমুনা তুমি কি কোথাও দেখেছ? কোথায় দেখেছ?
উত্তর: হ্যাঁ, আমি দেখেছি। মুদি দোকানে, ঘরে, রাস্তাঘাটে, অনলাইনে এবং টেলিভিশনে।
ক. এটি কী নামে পরিচিত?
উত্তর: এটি ‘বিজ্ঞাপন’ নামে পরিচিত।
খ. এর ব্যবহার কী?
উত্তর: প্রায়োগিক লেখার মধ্যে বিজ্ঞাপন সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়। ক্রেতার কাছে পণাকে পরিচিত করে তোলার জন্য বিজ্ঞাপন লেখা হয়। এতে একটি পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে সহজ ভাষায় বিবরণ থাকে। পণ্যটিকে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য আকর্ষণীয় ভাষা তাতে ব্যবর্ভূত হয়। এক্ষেত্রে কিছুটা অতিরঞ্জন হতে পারে, কিন্তু এটাই বিজ্ঞাপনের বৈশিষ্ট্য। মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য বিজ্ঞাপনের তথ্যের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমান বিশ্বে তাই বিজ্ঞাপনকে ব্যবসায় পরিচালনায় অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রায়োগিক লেখার মধ্যে প্রভাব বিবেচনায় বিজ্ঞাপন শীর্ষস্থানীয়।
গ. এ রকম নমুনা তুমি কি কোথাও দেখেছ? কোথায় দেখেছ?
উত্তর: হ্যাঁ, দেখেছি। পত্রিকায়, টেলিভিশনে, দেয়ালে সাঁটানো অবস্থায়, অনলাইনে।
ক. এটি কী নামে পরিচিত?
উত্তর: এটি ‘আমন্ত্রণপত্র’ নামে পরিচিত।
খ. এর ব্যবহার কী?
উত্তর: আমরা বিয়ে, জন্মদিন, স্কুলের পুরস্কার বিতরণী উৎসবে আমন্ত্রণপত্রের ব্যবহার দেখেছি। মধ্যযুগ থেকেই ধনীরা আমন্ত্রণপত্রের মাধ্যমে মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার প্রথা প্রচলন করেন। আমন্ত্রণপত্রের মাধ্যমে আমরা একটি অনুষ্ঠানের সময়সূচি জানতে পারি। অনুষ্ঠানের ধরণ ও উপলক্ষ্য এতে স্পষ্ট করে লেখা হয়। উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত ও কর্মসূচি আমন্ত্রিত ব্যক্তিকে অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দেয়া হয় আমন্ত্রণপত্রের মাধ্যমে। আমন্ত্রণপত্র সুশৃঙ্খল কাঠামোতে লেখা হয়। আমন্ত্রিত ব্যক্তিকে অনুষ্ঠান সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলাই আমন্ত্রণত্রের উদ্দেশ্য।
গ. এ রকম নমুনা তুমি কি কোথাও দেখেছ? কোথায় দেখেছ?
উত্তর: হ্যাঁ, দেখেছি। ঘরে, বইপত্রে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।