আমরা এই পোস্টে আহবান গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর গুলো জানব।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রসাত্মক ও ব্যঙ্গধর্মী রচনার সংকলন ‘কমলাকান্তের দপ্তর’। তিন অংশে বিভক্ত এই গ্রন্থটিতে যে কয়টি প্রবন্ধ আছে, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রচনা ‘বিড়াল’।
একদিন কমলাকান্ত নেশায় বুঁদ হয়ে ওয়াটারলু যুদ্ধ নিয়ে ভাবছিলেন। এমন সময় একটা বিড়াল এসে কমলাকান্তের জন্য রাখা দুধটুকু খেয়ে ফেলে। ঘটনাটা বোঝার পর তিনি লাঠি দিয়ে বিড়ালটিকে মারতে উদ্যত হন। তখন কমলাকান্ত ও বিড়ালটির মধ্যে কাল্পনিক কথোপকথন চলতে থাকে।
এর প্রথম অংশ নিখাদ হাস্যরসাত্মক, পরের অংশ গুঢ়ার্থে সন্নিহিত।
আহবান গল্পের লেখক পরিচিতি
নাম: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম পরিচয়
- জন্ম তারিখ: ১২ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দ
- জন্মস্থান: সুরুলিপুর (মাতুলালয়), চব্বিশ পরগনা
- পৈতৃক নিবাস: ব্যারাকপুর, চব্বিশ পরগনা
পিতৃ পরিচয়
- পিতার নাম: মহানন্দা বন্দ্যোপাধ্যায়
- মাতার নাম: মুণিলক্ষ্মী দেবী
শিক্ষাজীবন
- মাধ্যমিক: এন্ট্রান্স (১৯১৪), বনগ্রাম স্কুল
- উচ্চ মাধ্যমিক: আর.এ. (১৯১৬), বনগ্রাম স্কুল
- উচ্চতর: বি.এ. (স্নাতকোত্তর), কলকাতা রিপন কলেজ
কর্মজীবন
- পেশা: স্কুল জেলার জাতীয়তা শিক্ষক
- কর্মস্থল:
- সোনারপুর হরিনাভি মেমোরিয়াল স্কুল
- ব্যারাকপুরের নিম্নচাপ গোপালনগর স্কুল
সাহিত্য সাধনা
- উপন্যাস:
- পথের পাঁচালী
- অপরাজিতা
- আরণ্যক
- ইছামতি
- দুহিতা
- আদর্শ হিন্দু হোটেল
- দেবযান
- অনান্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাস
- গল্পগ্রন্থ:
- মেঘমল্লার
- মৌরিফুল
- যাত্রাবদল
- কিন্নর দল
- আত্মজীবনীমূলক রচনা:
- তৃণাঙ্কুর
পুরস্কার ও সম্মাননা
- ইছামতি উপন্যাসের জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ
মৃত্যু
- মৃত্যু তারিখ: ১ নভেম্বর, ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ
আহবান গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল ১: কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন দিন মজুর কেরামত। হঠাৎ দেখতে পান মৃতপ্রায় একটি শিশু পথের ধারে পড়ে আছে। পরম যত্নে তিনি শিশুটিকে ঘরে তুলে আনেন। নিজের ছেলেমেয়ে নিয়ে অভাবের সংসারে সত্রী প্রথমে খানিকটা আপত্তি করলেও শিশুটির অবস্থা দেখে তিনিও বুকে জড়িয়ে ধরেন-বড় করতে থাকেন নিজের সন্তান পরিচয়ে।
ক. বুড়িকে মা বলে ডাকত কে?
খ. ‘স্নেহের দান এমন করা ঠিক হয়নি’ কথাটি দ্বারা। কী বোঝানো হয়েছে?
গ. কেরামত দম্পতির মধ্য দিয়ে “আহ্বান” গল্পের কোন বিশেষ দিকটির ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘মানুষের স্নেহ-মমতা-প্রীতির যে বাঁধন তা ধন-সম্পদে নয়, নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে ওঠে। ‘-উদ্দীপক ৪ ও “আহ্বান” গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ কর।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বুড়িকে মা বলে ডাকত হাজরা ব্যাটার বউ।
খ. লেখক খাঁটি দুধ খেতে পায় না শুনে বৃদ্ধা তাঁর জন্য দুধ নিয়ে এলে লেখক তাকে রুঢ় স্বরে দুধের দাম জিজ্ঞাসা করে টাকা দিলে বুড়ি বিব্রত হয়ে টাকা নিয়ে চলে যায়। তখন অনুশোচনায় লেখক উক্ত উক্তিটি করেন।
বুড়ি জানতে পারেন যে, খুঁটি গোয়ালিনীর জল মেশানো দুধ লেখক খান। তখন সন্তান স্নেহে লেখকের জন্য বুড়ি এক ঘটি দুধ হাজরা ব্যাটার বৌয়ের কাছ থেকে চেয়ে আনেন। লেখক তার দাম দিয়ে দিলে বুড়ি মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে চলে যান। লেখক তখন ভাবেন স্নেহের দানের আর্থিক প্রতিদান দেয়া ঠিক হয়নি। এটা ভেবে লেখক উক্ত উক্তিটি করেন।
গ. কেরামত দম্পতির মধ্যে ‘আহ্বান’ গল্পের সন্তানের প্রতি স্নেহ এবং মানবিক চেতনার দিকটির প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে।
মানুষের মন অত্যন্ত সংবেদনশীল। সন্তানের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা মানুষের একটা সহজাত ধর্ম। কিন্তু সন্তানতুল্য অপরের সন্তানের প্রতি অপরিসীম স্নেহ-ভালোবাসা মানুষের এই সংবেদনশীল মনের পরিচায়ক।
উদ্দীপকের কেরামত দম্পতির মধ্যে এমনই মনের পরিচয় পাওয়া যায়। যা ‘আহ্বান’ গল্পের স্নেহ-ভালোবাসা ও উদার মানবিকতার প্রতি ইঙ্গিত করে। কেরামত দম্পতি একটা পথে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুর প্রতি যে স্নেহ-ভালোবাসা প্রকাশ করেন তা সত্যিই বিরল। শিশুটির প্রতি তাঁদের এই মায়া বা স্নেহ-মমতা উদার মানবিকতার পরিচয় দেয়। যা ‘আহ্বান’ গল্পেও লক্ষ করা যায়। গল্পে দেখা যায়, লেখক ও দরিদ্র মুসলমান বৃদ্ধার মাঝে স্নেহ-ভালোবাসার উদার মানবিক সম্পর্ক। যেখানে শ্রেণি-বৈষম্য, জাতপাত বা ধর্মভেদ কোনো বাধার সৃষ্টি করতে পারেনি। সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানবিকতাকে স্থান দেওয়া হয়েছে গল্পটিতে। সংকীর্ণতা ও সংস্কারমুক্ত এই ভাবের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে উদ্দীপকটিতে।
ঘ. মানুষের স্নেহ-মমতা-প্রীতির যে বাঁধন তা ধন-সম্পদে নয়, নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে ওঠে। উদ্দীপক এবং ‘আহ্বান’ গল্প অনুসারে মন্তব্যটি যথার্থ। মানুষ মানুষের জন্য সংবেদনশীলতার হাত বাড়িয়ে দেবে এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। অথচ এটা এখন শুধুই একটা মানবিক বুলিমাত্র। সর্বত্রই মানুষের মাঝে স্বার্থান্বেষী চিন্তার প্রতিফলন দেখা যায়। সেখানে স্নেহ-মায়া-মমতা একটা বোকামিপূর্ণ আচরণ মনে হয়।
উদ্দীপকে রহমান দম্পত্তির মাঝে যে মানবিক আচরণ লক্ষ করা যায় তা সত্যিই বিরল। রহমান দিনমজুর হলেও পথের এক মৃত-প্রায় শিশুকে বুকে তুলে নিয়ে আসে। সন্তানদের ভরণ-পোষণ না দিতে পারলেও তার সত্রী তাকে সন্তান স্নেহে বুকে জড়িয়ে ধরে। এখানে যে স্নেহ-মমতা-প্রীতির বাঁধন তা কোনো ধন-সম্পদের নয়, নিবিড় আন্তরিকতার স্পর্শেই গড়ে উঠেছে। ‘আহ্বান’ গল্পেও এমন ভাবের পরিচয় পাওয়া যায় লেখক এবং বৃদ্ধার স্নেহ-ভালোবাসা আদান-প্রদানের সাথে।
‘আহ্বান’ গল্পে এক উদার মানবিক সম্পর্কের পরিচয় পাওয়া যায়। লেখক এবং বৃদ্ধার মাঝে যে মা-সন্তানের স্নেহের সম্পর্ক, তাতে কোনো ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য, ধর্মের প্রভেদ কিংবা, জাতিভেদ বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। লেখকের প্রতি বুড়ির স্নেহের দাবি সকল বাধাকে অতিক্রম করে মানবতার জয় ঘোষণা করেছে। লেখকও তার হৃদয়ে মুসলমান বৃদ্ধার মাঝে মায়ের বা পিসিমার ছায়া দেখতে পেয়েছেন। তাঁকে মাতৃজ্ঞানে ভালোবেসেছেন। তাঁর শেষ আহ্বানে মনের অজান্তে তাঁর অন্তিম যাত্রায় উপস্থিত হয়েছেন। এই যে আত্মিক বন্ধন এটা স্নেহ-মায়ামমতা প্রীতির বাঁধন, এটা শুধু নিবিড় আন্ত রিকতায় গড়ে ওঠে। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্য যথার্থ।
সৃজনশীল ২: কাঙালির মা ছোটজাত, দুলের মেয়ে বলিয়া কাছে যাইতে সাহস পাইল না, তফাতে একটা উঁচু ঢিপির মধ্যে দাঁড়াইয়া সমস্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত উৎসুক আগ্রহে চোখ মেলিয়া দেখিতে লাগিল। প্রশসত ও পর্যাপ্ত চিতার পরে যখন শব স্থাপিত করা হইল তখন তাহার রাঙ্গা পা-দুখানি দেখিয়া তাহার দু’চক্ষু জুড়াইয়া গেল, ইচ্ছা হইল ছুটিয়া গিয়া একবিন্দু আলতা মুছাইয়া লইয়া মাথায় দেয়। বহুকণ্ঠের হরিধ্বনির সহিত পুত্রহস্তের মন্ত্রপুত অগ্নি যখন সংযোজিত হইল তখন তাহার চোখ দিয়া ঝরঝর করিয়া জল পড়িতে লাগিল, মনে মনে বারংবার বলিতে লাগিল, ভাগ্যিমানী মা, তুমি সগ্যে যাচ্চো-আমাকেও আশীর্বাদ করে যাও, আমিও যেন এমনি কাঙালির হাতের আগুনটুকু পাই। ছেলের হাতের আগুন! সে ত সোজা কথা নয়!
[তথ্যসূত্র: অভাগীর স্বর্গ-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়]
ক. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক নিবাস কোন গ্রামে?
খ. বুড়ি কেন দমে গেলেন?
গ. উদ্দীপকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সাথে ‘আহ্বান’ গল্পের বুড়ি অন্তিম শয়নের বিষয়ের বৈসাদৃশ্য আলোচনা কর।
ঘ. “উদ্দীপকের কাঙালির মা এবং ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার প্রত্যাশার ধরন এক।”-মন্তব্যটি যাচাই কর।
২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বিভূতিভূষণের পৈতৃক নিবাস ব্যারাকপুর গ্রামে।
খ. লেখক রুক্ষ স্বরে দুধের দাম জিজ্ঞাসা করায় বুড়ি প্রথমে খুব দমে গেলেন।
লেখকের দুধের জোগান দেয় খুঁটি গোয়ালিনী। একথা শুনে বুড়ি বলেন ‘এর তো অর্ধেক জল’। এজন্য তিনি তাঁর পাতানো মেয়ের কাছ থেকে খাঁটি দুধ চেয়ে লেখকের জন্য নিয়ে আসেন। তখন লেখক বুড়িকে দাম দিয়ে তাড়াতাড়ি বিদায় করার জন্য বেশ রুক্ষ স্বরে তার দাম জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু স্নেহের দানের আর্থিক প্রতিদান দিতে গেলে বুড়ি অপ্রস্তুত হন এবং লেখকের রুক্ষ স্বরে তিনি দমে যান।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘আহ্বান’ গল্পের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বা অন্তিম শয়ানের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
এ পৃথিবী থেকে সকলেরই এক সময় বিদায় নিতে হয়। কারো আগে, কারো পরে। কেউ বা রাজকীয়ভাবে অন্তিম যাত্রাকরে, কেউ বা দীনহীনভাবে অন্তিম শয়ানে শায়িত হয়।উদ্দীপকে দেখা যায়, কর্তা গিন্নি বা ভাগ্যিমানী মার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। প্রশস্ত ও পর্যাপ্ত চিতার পরে বা তার শব বা মৃতদেহ শায়িত। তার রাঙা দুখানি গায়ে আলতা মাখা। সম্ভ্রান্ত পরিবারের গৃহিণী হওয়ায় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও আড়ম্বরের সাথে সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু ‘আহ্বান’ গল্পে বুড়ির শব যাত্রা বা কবর দেওয়ার বিষয়টি নিতান্ত সাদামাটা। প্রাচীন একটা বৃক্ষের নিচে বৃদ্ধাকে কবর দেওয়া হবে। দুজন লোক তার কবর খুঁড়ছে। সেখানেই বৃদ্ধাকে চিরদিনের মতোশোয়ানো হবে। বিষয়ের ক্ষেত্রে উদ্দীপকের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের কাঙালির মা এবং ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার প্রত্যাশার ধরন এক।”-মন্তব্যটি যথার্থ।জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মানুষের কিছু অন্তিম ব্যবস্থা থাকে। তারা মনে করে সেটা পেলে মরেও শান্তি পাবে। যেমন কাঙালির মা মৃত্যুর পর তাঁর ছেলের হাতের মুখাগ্নির প্রত্যাশা করে স্বর্গে যাওয়ার জন্য এবং ‘আহ্বান’ গল্পে বৃদ্ধা লেখকের কাছে কাফনের কাপড় প্রত্যাশা করে।উদ্দীপকে দেখা যায়, ছোট জাতের মেয়ে কাঙালির মা ও বাড়ির কর্তা গিন্নির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখে ভাবে তার মৃত্যুর পর যদি তার ছেলে কাঙালির হাতের আগুন পায় তবে তিনি স্বর্গে যেতে পারেন। কাঙালির মায়ের এই প্রত্যাশার চিত্র দেখা যায় ‘আহ্বান’ গল্পের বৃদ্ধার মাঝে। তিনিও লেখকের কাছে কাফনের কাপড় প্রত্যাশা করেছেন।
‘আহ্বান’ গল্পে দেখা যায় বৃদ্ধ লেখককে সন্তানের মতো ভালোবাসেন। তিনি আম, শসা, দুধ ইত্যাদি দিয়ে তাঁর মাতৃস্নেহের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। লেখক প্রথমে সংকোচ বোধ করলেও পরে এটাকে স্বাভাবিকভাবে ও শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করেন। তখন নিঃসন্তান বৃদ্ধা লেখকের কাছে বলেন, ‘আমার কাফনের কাপড় তুই কিনে দিস বাবা।’ বুড়ির এই প্রত্যাশার মাঝে প্রকাশিত হয়েছে সন্তানের কাছে বৃদ্ধা মায়ের দাবি বা আবদার। যা কাঙালির মায়ের প্রত্যাশায় প্রকাশিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।
সৃজনশীল ৩:
হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম, “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরে আসি-
“কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হতে। তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।”
ক. বুড়ি কী কেনার জন্য বাজারে যাচ্ছিল?
খ. বুড়ির আগে এ পাড়া ও পাড়া আসা-যাওয়া করতে হতো না কেন?
গ. উদ্দীপকের কবি ‘আহ্বান’ গল্পের কোন চরিত্রকে নির্দেশ করে?-ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।’ ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের চেতনার ক্ষেত্রে চরণটির মর্মার্থ সম্পূর্ণভাবে যথার্থ নয়। মন্তব্যটি বিচার কর।
৩ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বুড়ি নুন কেনার জন্য বাজারে যাচ্ছিল।
খ. বৃদ্ধার স্বামী বেঁচে থাকতে তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ সচ্ছল ছিল তাই ভিক্ষা করার জন্য তাঁর এপাড়া ওপাড়া যাতায়াতকরতে হতো না।বৃদ্ধার স্বামী জমির করাতির বেশ সচ্ছল অবস্থা ছিল। গোলাভরা ধান। আর গোয়ালভরা গরু নিয়ে ছিল বুড়ির সোনার সংসার। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর সংসারের দায়িত্ব নেয়ার মতো কেউ ছিল না, তাই তিনি এখন পথের ভিখারিনি। এজন্য তাঁকে এপাড়া ওপাড়া করতে হয়, যা স্বামী বেঁচে থাকতে করতে হতো না।
গ. উদ্দীপকের কবি ‘আহ্বান’ গল্পের লেখক চরিত্রকে নির্দেশ করে।প্রিয় হারানোর বেদনায় সবাই আহত হয়। কেউ চায় না তার প্রিয় কেউ চিরদিনের মতো পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাক। কিন্তু নিয়তির বিধানে সবাইকেই চলে যেতে হয়। কেউ আগে যায়, কেউ বা পরে। যারা আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় তাদের কাছের মানুষের কাছে সে শূন্যতার বেদনা অসহনীয়।
উদ্দীপকে কবির অন্তরে দেখা যায় প্রিয় জনকে হারানোর বেদনা। প্রিয় মানুষকে হারিয়ে কবি শোকে মুহ্যমান। তার প্রিয় যে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে হারিয়ে গেছে এ কথা তিনি কোনোমতেই ভুলতে পারছেন না। বার বার তাকে মনে পড়ছে। এমনই প্রিয় হারানোর বেদনা অনুভব করেছেন ‘আহ্বান’ গল্পের লেখক মাতৃস্থানীয়া বৃদ্ধার মৃত্যুতে। বৃদ্ধা তাঁকে মায়ের মতোই স্নেহ করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর লেখক সেখানে উপস্থিত হন অজানা আহ্বানে সাড়া দিয়ে। লেখকের হৃদয়ও শোকে মুহ্যমান। এক্ষেত্রে উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।’ এ চরণটির ভাব ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের চেতনার ক্ষেত্রে পুরোপুরি যথার্থ নয়।বিচ্ছেদ ব্যথায় সকলেই কাতর হন। উদ্দীপকের কবিও বিচ্ছেদ ব্যথায় কাতর। প্রিয়জন তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে বহুদূরে। সেই শোকে তিনি মুহ্যমান। তাইতো তিনি ঋতুরাজকেও উপেক্ষা করেন। কিন্তু সকলের বিচ্ছেদ-ব্যথা এই রকম গভীর নাও হতে পারে।উদ্দীপকের কবি প্রিয়জন হারানোর শোকে কাতর। পৃথিবীর কোনোকিছুই তার ভালো লাগে না। তাইতো এ পৃথিবীতে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন তিনি টের পান না। যে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে চলে গেছে শূন্য হাতে, তাকে তিনি কোনোভাবেই ভুলতে পারেন না।
উদ্দীপকের এই চরণটির মর্মার্থ ‘আহ্বান’ গল্পের লেখকের চেতনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে যথার্থ নয়।’আহ্বান’ গল্পের লেখকের বিচ্ছেদ-ব্যথা বা প্রিয় হারানোর ব্যথা সম্পূর্ণ ভিন্ন। গল্পে দেখি মাতৃস্থানীয়া এক বৃদ্ধা লেখককে সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। স্নেহ করতেন। লেখককে তিনি নানারকম খাদ্যদ্রব্য খাইয়ে শান্তি পেতেন। তাঁর আপতা রেহে লেখক সিক্ত হয়েছিলেন এবং বৃদ্ধাকে মায়ের মতো ভালোও বেসেছিলেন। সেই বৃদ্ধার মৃত্যুতে তিনিও মর্মাহত। কিন্তু উদ্দীপকের কবির মতো তীব্র নয় তাঁর বেদনার রং। তাকে যে কোনো মতে ভুলতে পারেন না, এমনটি নয়। তাই বলা