আকাইদ – সমাধান | ইসলাম শিক্ষা – ১ম অধ্যায় | নবম শ্রেণী

আকাইদ – সমাধান | ইসলাম শিক্ষা – ১ম অধ্যায় | নবম শ্রেণী

এই পোস্টে আমরা জানবো ৯ম শ্রেণির  বিষয় ইসলাম শিক্ষা এর প্রথম অধ্যায়, আকাইদ সম্পর্কে।

দলগত কাজ: 

শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক পর্যবেক্ষণ বা মতবিনিময়ের মাধ্যমে আকাইদসংক্রান্ত যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছ তা উপস্থাপন কর।

সমাধান: আকাইদ সম্পর্কিত অর্জিত অভিজ্ঞতা

আকাইদ-এর অর্থ বিশ্বাসমালা। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে আকাইদ বলতে ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনকে বোঝায়। ইসলামি আকিদার মূলকথা হলো বিশ্বাস, কর্ম, চিন্তা ও চেতনায় মহান আল্লাহকে সর্বশক্তিমান মেনে নেওয়া এবং শিরক থেকে মুক্ত থাকা।

একজন মুসলিমকে মৌলিক সাতটি বিষয়ে ইমান আনতে হয়। এগুলো আমরা ‘ইমান মুফাসসাল’ নামক কালেমার মাধ্যমে স্বীকৃতি দিই। আকিদাহ-এর এ সাতটি বিষয় হলো-

১. আল্লাহর প্রতি ইমান।

২. ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান

৩. আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি ইমান।

৪. নবি-রাসুলগণের প্রতি ইমান।

৫. আখিরাতের প্রতি ইমান।

৬. তাকদির-এর ভালোমন্দের প্রতি ইমান।

৭. মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি ইমান।

আকাইদের এ বিষয়গুলো মূলত পবিত্র কুরআন ও হাদিস দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত। আল্লাহর প্রতি ইমান দ্বারা মূলত মহান আল্লাহর প্রতি একত্ববাদ ও তাঁর গুণাবলিতে বিশ্বাস স্থাপন করাকে বোঝায়। এ বিষয়ে আল-কুরআনে বলা হয়েছে-

“ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ اللَّهُ الصَّمَدُ، لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ “

অর্থ: “বলুন, তিনি আল্লাহ এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।” (সূরা আল-ইখলাস :১-৪)

আল্লাহর পরিচয়

পরিবেশিত হামদ থেকে মহান আল্লাহর পরিচয় তথা আসমাউল হুসনা সম্পর্কে কী গুণাবলি প্রকাশ পেয়েছে তা তোমার বন্ধুর সাথে আলোচনা করে চিহ্নিত কর।

সমাধান: 

পরিবেশিত হামদ (সূত্র: শিক্ষক সহায়িকা, পৃষ্ঠা-৯)

আল্লাহ মেহেরবান, তিনি আল্লাহ মেহেরবান 

না চাহিতে দুহাত ভরে করেন তিনি দান 

তার নামে গাই গান, এসো তার নামে গাই গান।

জুড়িয়ে যাবে সবার হৃদয়, জুড়িয়ে যাবে প্রাণ,

আল্লাহ মেহেরবান, তিনি আল্লাহ মেহেরবান।

নদীর বুকে বয়ে চলে যেমন মিঠা পানি 

বাগান জুড়ে ফুলের হাসি, ফলের মধুর ঘ্রান 

মাঠে মাঠে সোনার ফসল তিনি করেছেন দান।

আল্লাহ মেহেরবান, তিনি আল্লাহ মেহেরবান।

পরিবেশিত হামদ থেকে মহান আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে যেসব গুণাবলি প্রকাশ পেয়েছে তা নিচে লিপিবদ্ধ করা হলো-

১. পরিবেশিত হামদ-এ আল্লাহকে মেহেরবান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মেহেরবান অর্থ দয়ালু। অতএব, এখানে আল্লাহর রাউফুন গুণের প্রকাশ ঘটেছে। ‘আল্লাহ রাউফুন’ অর্থ আল্লাহ অতীব দয়ালু।

২. পরিবেশিত হামদ-এ আল্লাহর মু’মিনুন গুণের বর্ণনা করা হয়েছে। মু’মিনুন অর্থ নিরাপত্তা দানকারী, রক্ষণাবেক্ষণকারী, জামিনদার, সত্য ঘোষণাকারী। আল্লাহ মু’মিনুন’ অর্থ আল্লাহ নিরাপত্তা দানকারী ও রক্ষণাবেক্ষণকারী।

৩. পরিবেশিত হামদ-এ আল্লাহর ওয়াহ্হাবুন গুণের প্রকাশ ঘটেছে। ওয়াহ্হাবুন অর্থ অতীব দানশীল, কোনো বিনিময় ছাড়া যিনি সব কিছু দান করে থাকেন। আল্লাহ আমাদের নদীর বুকে বয়ে চলা মিঠা পানি, বাগান জুড়ে ফুলের হাসি, ফলের মধুর ঘ্রান, মাঠে মাঠে সোনার ফসলসহ সব কিছু দান করেছেন। ‘আল্লাহ ওয়াহ্হাবুন’ অর্থ আল্লাহ পরম দানশীল।

প্রকল্প (একক কাজ)

তোমার বাস্তবজীবনে আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ চর্চা বা অনুশীলনের জন্য এক মাস মেয়াদি একটি প্রকল্প গ্রহণ করে তা সফল বাস্তবায়ন শেষে নির্ধারিত ছকে প্রতিবেদন তৈরি কর।

সমাধান: 

প্রকল্পের নাম: বৃক্ষরোপণ বা বৃক্ষের যত্ন।
প্রকল্প শুরুর তারিখ: ০১.০৩.২০২৪ খ্রি.
প্রকল্প শেষের তারিখ: ৩০.০৩.২০২৪ খ্রি.
সহায়তাকারী: মা ও বড় ভাই
গৃহীত পদক্ষেপ: বড় ভাইয়ের সহায়তায় একটি টব, মাটি, গাছ ও অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ এবং মায়ের নির্দেশনায় বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা।
প্রকল্প সম্পর্কিত প্রতিবেদন: আমি বড় ভাইয়ের সহায়তায় বাজার থেকে নিম গাছের একটি চারা সংগ্রহ করি এবং মায়ের নির্দেশনা মতো সেটি টবে রোপণ করি। টবে রোপণের পর নিয়মিত গাছটিতে নিয়মিত পানি দিয়েছি। ধীরে ধীরে গাছটি সতেজ হয়ে উঠেছে। এখন গাছটি অনেক বড়ো হয়েছে। মহান আল্লাহ যেমন আমাদের স্নেহ-মমতা, ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছেন, আমিও গাছটিকে স্নেহ, মায়া-মমতা দিয়ে বড়ো করেছি।আল্লাহ যেমন আমাদের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন তেমনি আমিও তাকে ওষুধ দিয়ে পোকামাকড় থেকে রক্ষা করেছি। গরু- ছাগল যাতে তার ক্ষতি করতে না পারে তার ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন সেটি আল্লাহর প্রদত্ত নিয়ামত হিসেবে সবার উপকারে আসছে। পরিবার ও সমাজের মানুষেরা তার পাতা ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছে। তার ছাল দিয়ে ওষুধ বানিয়ে বিভিন্ন রোগ থেকে নিরাময় হচ্ছে। তার নির্মল ও ঠান্ডা বাতাস আমাদের অক্সিজেন দিচ্ছে, আমাদের মনপ্রাণ জুড়াচ্ছে। আমাদের ছায়া দিচ্ছে, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, বন্যা থেকে রক্ষা করছে। এসময় আরও গাছ লাগিয়ে একে কেটে ঘরের আসবাবপত্র অথবা জ্বালানির কাজ ব্যবহার করতে পারব। আসলে এসব হচ্ছে মহান আল্লাহর গুণাবলি ‘আল্লাহ রাউফুন’ আল্লাহ ওয়াহহাবুন, আল্লাহ মুমিন ইত্যাদি গুণাবলির কারণে। কেননা মহান আল্লাহ যদি আমাদের ওপর দয়া না করতেন, আমাদের এ নিয়ামত না দিতেন তাহলে আমরা যতই চেষ্টা করতাম এ গাছটি বড়ো করতে পারতাম না। পোকামাকড় ও গরু-ছাগলের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারতাম না।
উপসংহারে আমরা বলতে পারি, আল্লাহ আমাদের প্রতি পরম স্নেহশীল, মহাদানকারী এবং যাবতীয় বিপদাপদ থেকে রক্ষাকারী। আমার লাগানো নিমগাছটি তার প্রমাণ।

–——————————–
অভিভাবকের মতামত/স্বাক্ষর

তাওহিদে বিশ্বাসের প্রভাব

তাওহিদে বিশ্বাসের ফলে ব্যক্তির জীবন ও কর্মে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে (পাঠ্যপুস্তকে উল্লিখিত বিষয়গুলো ব্যতীত) জোড়ায় বা দলে আলোচনা করে তুমি/তোমরা একটি তালিকা প্রস্তুত করে উপস্থাপন কর।

সমাধান: 

ক্রমযেসব পরিবর্তন আসতে পারে
তাওহিদে বিশ্বাসী মানুষ শিরক, কুফর বর্জন করে সৎ মানুষে পরিণত হয়।
তাওহিদে বিশ্বাসের ফলে মানুষ পরকালে ভয় করে এবং নেক আমল করতে থাকে।
তাওহিদে বিশ্বাসের ফলে মানুষ পরকালে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে জবাবদিহিতার ভয়ে সকল পাপাচার বর্জন করে।
তাওহিদে বিশ্বাসী ব্যক্তি কখনো কারো কাছে মাথা নত করে না, কারো গোলামি করে না, কাউকে আল্লাহর বিকল্প মনে করে তার সাহায্য প্রার্থনা করে না
তাওহিদে বিশ্বাসী ব্যক্তি মহান আল্লাহকে একমাত্র মালিক মান্য করে এবং নিজেকে তার শ্রেষ্ঠ জীব মনে করে, কাউকে যে পরোয়া করে চলে না।
তাওহিদে বিশ্বাসী ব্যক্তি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হয়, আত্মসচেতন হয় ও আত্মসম্মানে উদ্দীপ্ত হয়।
তাওহিদে বিশ্বাসী ব্যক্তি অন্তরে পরম প্রশান্তি লাভ করে।
তাওহিদে বিশ্বাসী বাক্তি সকল নীচতা, হীনতা, ভীরুতা এবং সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত থাকে।
তাওহিদে বিশ্বাসী ব্যক্তি নির্ভীক, অকুতোভয় ও সাহসী মানুষে পরিণত হয়।
১০তাওহিদে বিশ্বাসী ব্যক্তি আল্লাহর বিশেষ অনুগত হয়। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে।
১১তাওহিদে বিশ্বাসী ব্যক্তি সকল প্রশংসনীয় গুণে গুণান্বিত হয়ে সকল মন্দগুণ বর্জন করে।
১২তাওহিদে বিশ্বাসী ব্যক্তি ইসলামের সকল বিধি-বিধান মেনে চলে। সালাত, সাওম, যাকাত, হজ ইত্যাদি পালন করে। ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাহ সবকিছুকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আমল করে
১৩তাওহিদে বিশ্বাসী ব্যক্তি মহানবি (সা.)-কে নিজের একমাত্র আদর্শ মনে করে ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে তাঁকে অনুসরণ ও অনুকরণ করে।

প্রতিফলন ডায়েরি লিখন

যেসব বিশ্বাস ও কাজের মাধ্যমে আমরা তাওহিদ মজবুত করব।’

সমাধান: 

বিশ্বাসসমূহকাজসমূহ
তাওহিদের বাণী প্রচারক সকল নবি-রাসুল আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছিলেন।নবি-রাসুলগণ ছিলেন উন্নত চরিত্রের অধিকারী। তাঁদের অনুসরণ করে আমিও উন্নত চরিত্রের অধিকারী হব।
তাওহিদের বাণী ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ একটি চেতনা সঞ্চারি এবং বিপ্লবী ঘোষণা।তাওহিদের বাণীর ধ্বনির ফলে আমি হক ও বাতিলের ফয়সালা পাই এবং এক অপরিমেয় শক্তি ও সাহসের অধিকারী হব।
তাওহিদের বাণী প্রচারের কারণে নবি- রাসুলগণের ওপরে নেমে আসত লাঞ্ছনা-গঞ্জনা। কিন্তু তারপরও তারা বিচলিত হননি।তাওহিদের বাণী প্রতি বিশ্বাসের ফলে আমি অত্যাচার ও অবিচারের স্টিম রোলারেও বিচলিত হব না। মহান আল্লাহ একক ও অদ্বিতীয়- এ বিশ্বাস ধারণ করব।
শিরক ছেড়ে তাওহিদে আসার জন্য ধনি-গরিব বহু সাহাবিকে নানা বর্বর ও বীভৎস নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও বিচ্যুত হননি।দ্বীনের দাওয়াত ও ব্যক্তিজীবনে তাওহিদ প্রতিষ্ঠায় অনেক বাধা আসলেও বিচ্যুত হব না; অটল থাকব। পাশাপাশি তাওহিদের মর্মবাণী প্রচারে মনোনিবেশ করব।

জান্নাত লাভের জন্য এখন থেকে যেসব কাজ আমি অভ্যাসে পরিণত করব।

সমাধান: 

পরকালে চিরস্থায়ী সুখ ও জান্নাত একজন মুমিনের একান্ত কামনা-বাসনার বস্তু। জান্নাত লাভের পর মুমিনের আর কোনো হতাশা, দুর্ভাবনা থাকবে না। জান্নাত লাভের জন্য এখন থেকে আমি যেসব কাজ অভ্যাসে পরিণত করব তা নিচে বর্ণিত হলো- ১. আপন ভাইবোনদের প্রতিপালন করব। রাসুল (স.) বলেন, “যে ব্যক্তি দুই কন্যা বা দুই বোনের ভরণপোষণের বাবস্থা করবে আমি এবং সে একত্রে জান্নাতে থাকব।” (ইবনে হিব্বান: ৪৪৭)

২. বেশি বশি দরুদ পাঠ করব। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (স.) বলেছেন, “কেয়ামতের দিন ওই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়েছে।” (তিরমিযি: ১/১১০) 

৩. সকলের সাথে উত্তম আচরণ করব। কেননা রাসুল (স.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সর্বোত্তম সেই কেয়ামতের দিনে আমার খুবই নিকট থাকবে।” (তিরমিযি : ২০১৮)

৪. শিরক, কুফর, নিফাক, বিদআত ইত্যাদি পরিহার করব। 

৫. যাবতীয় মিথ্যাচার, প্রতারণা, ধোঁকাবাজি পরিহার করব।

৬. তাওহিদ, ইমান ও সততার পথে চলব।

৭. ইসলামের মৌলিক বিষয়ের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসী হব।

৮. সর্বদা সত্যবাদী হব। সততার সহিত জীবনযাপন করব।

৯. আল্লাহর সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলব।

১০ . পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী সবার হক আদায় করব। সবার সহিত মিলেমিশে চলব।

১১. আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে সবাইকে সম্মান করব। 

১২. শালীনতার সহিত চলব, শালীন ভাষায় কথা বলব।

১৩. বেশি বেশি তাওবা করব।

১৪. উত্তম চরিত্রবান হব।

১৫. সময়মত নামাজ আদায় করব।

১৬. বেশি বেশি তাসবিহ পাঠ করব।

১৭. মহান আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ পাঠ করব।

১৮. প্রত্যেকদিন কুরআন তিলাওয়াত করব। কেননা, কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি সম্মানিত লেখক ফেরেশতাদের সাথে থাকবেন। 

১৯. সর্বোপরি মুত্তাকির সকল গুণাবলি অর্জনের চেষ্টা করব। কেননা মুত্তাকিগণ জান্নাতের সকল নিয়ামত ভোগ করবে।

আখিরাত দিবসে কল্যাণ লাভের জন্য আমরা যেসব কাজ নিয়মিত চর্চা করব।’

সমাধান: আখিরাত দিবসে কল্যাণ লাভের জন্য যেসব বিষয় চর্চা করতে হবে, তা নিচে উপস্থাপন করা হলো- 

  • তাওহিদে বিশ্বাস করব এবং আল্লাহ তা’আলার সাথে কাউকে শরিক করব না।
  • কোনো অবস্থাতেই কুফরি করব না। অর্থাৎ, মহান আল্লাহকে অস্বীকার করব না।
  • নিয়মিত আল্লাহর ইবাদাত করব।
  • আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর আনুগত্য করব।
  • আল্লাহর সকল বিধি-বিধান মেনে চলব।
  • কখনো আল্লাহর অবাধ্য হব না।
  • আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকার করব না।

যেসব কথা ও কাজ কুফরির পর্যায়ে পড়ে তার একটি তালিকা প্রস্তুতকরণ।

সমাধান: 

আমাদের যেসব কথা ও কাজ কুফরির পর্যায়ে তার একটি তালিকা নিচে উপস্থাপন করা হলো-

১. কুরআনের কোনো আয়াত নিয়ে উপহাস করা

২. ঠাট্টা ও কৌতুকচ্ছলে কুরআনের কোনো আয়াত উল্লেখ করা। যদি কোনো ব্যক্তি বলে তুমি তো ‘কুলহ্ আল্লাহ’-এর খাল ছিলে ফেলেছ।

৩. কিয়ামতকে নিয়ে বিদ্রূপ করা। যেমন- ‘ঋণদাতা’ ঋণগ্রহীতাকে বলল যদি এখন না দাও কিয়ামতে অবশ্যই দিতে হবে। এ কথা

শুনে প্রহীতা তাচ্ছিল্যের নিয়তে বলল কিয়ামত কি হবে?

৪. বংশের প্রতি কটাক্ষ করা।

৫. নিজ পিতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে।

৬. বিদ্রুপ করে ছোট গোনাহ করলে।

৭. সুন্নতকে অবজ্ঞার সাথে অপছন্দ করলে।

৮. বাঁশি, হারমোনিয়াম ও গ্রামোফোন বাজিয়ে কুরআন তিলাওয়াত বা এসব কন্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করা।

৯. মদ, জুয়া, সুদকে হালাল মনে করা।

১০. ঘরে গরুর হাড্ডি রেখে এই মনে করা যেকোনো বালা মুছিবত আসবে না।

১১. কারও মৃত্যুর পর বিলাপ করা। কেননা রাসুল (স.) বলেছেন- দুটো স্বভাব মানুষের মাঝে রয়েছে। যা কুফর বলে গণ্য। বংশের প্রতি কটাক্ষ করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চৈঃস্বরে বিলাপ করা। (সহিহ মুসলিম: ১৩০)

১২. কোনো ব্যক্তি বা প্রতিমার জন্য পশু জবাই করা।

১৩. কাউকে কাফির বলা যদি সে কাফের না হয় তবে তা নিজের ওপর বর্তায়।

১৪. কোনোকিছুকে কুলক্ষণ মনে করা।

১৫. পর্দা নিয়ে উপহাস করা।

১৬. আলেমদের অপমান বা অবস্থা করা।

১৭. রাশিচক্র ও গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব বিশ্বাস করা। রাসুল (স.)-এর ছবি ও ব্যঙ্গচিত্র আঁকা।

১৮. কুরআনকে পুড়িয়ে বা ছিঁড়ে ফেলা স্পষ্ট কুফরি।

আল্লাহ তা’আলার নির্দেশনা মেনে চলি, কুফর থেকে নিজেকে দূরে রাখি।

সমাধান: প্রতিবেদন

তারিখ: ২৬.০৩.২০২৪, চট্টগ্রাম ।

প্রতিবেদনের শিরোনাম: আল্লাহ তা’আলার নির্দেশনা মেনে চলি, কুফর থেকে নিজেকে দূরে রাখি।

প্রতিবেদন/বর্ণনা: কুফরের কুফল অনেক এবং এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কুফর জঘন্য পাপের কাজ, পরকালে এর শান্তি হবে অনেক কঠোর। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা কুফরি করে এবং আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে, তারাই অগ্নিবাসী। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। (সূরা আল-বাকারা: আয়াত-৩৯)

মুমিন বান্দা কুফর থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করে। কোনো পাপকে ছোট বা তুচ্ছ মনে না করা; ভালো মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে, কুফরি থেকে বেঁচে থেকে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা; যে কোনো জাদুটোনা করা কুফরি। আর এ জাদুটোনা থেকে বেঁচে থাকতে বিভিন্ন আমল করতে হয়।

কোনো অশালীন ও মিথ্যা কথা শোনা যাবে না। জান্নাতের আনন্দ সুন্দর ও পরম আকর্ষণীয় বস্তু দ্বারা সুসজ্জিত ঘরবাড়ি ইত্যাদির জন্য সর্বদা যিকির করতে হবে। মানবসমাজে যে অনৈতিকতার চর্চা হয়, তা থেকে বাঁচতে হবে। দুনিয়াকে আখিরাতের শস্যক্ষেত্র হিসেবে ব্যক্তিজীবনে এর বাস্তবায়ন করতে হবে।

দ্বীনের বিষয়ে সীমালঙ্ঘন করা যাবে না। কেননা সীমালঙ্ঘনকারীর স্থান জাহান্নামে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, “অনন্তর যে সীমালঙ্ঘন করে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয় জাহান্নামই হবে তার আবাস।” (সূরা আন-নাযিআত আয়াত-৩৭-৩৯)

বিন্দু বিন্দু সৎকর্মও করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলেও তা সে দেখতে পাবে। আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলেও তা সে দেখবে। (সূরা আল-যিলযাল: আয়াত-৭-৮) মহান আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখতে হবে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত থাকতে হবে তবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যাবে এবং কুফরি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।

মহান আল্লাহ বলেন, “আর যে ব্যক্তি স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে জান্নাতই হবে তার আবাস।” (সুরা আন-নাযিআত, আয়াত: ৪০-৪১)

মুনাফিক আমাদের সমাজের শান্তি, স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। শিরোনামের আলোকে প্যানেল বা দলে আলোচনা করে উপস্থাপন কর।

সমাধান: 

✓ মুনাফিকরা সমাজে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাসাদ ও অশান্তি সৃষ্টি করে থাকে। অথচ তারা প্রচার-প্রকারান্তরে নিজেদের শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী বলে পরিচয় দেয়।

✓ মুনাফিক তাদের স্বভাব দ্বারা মনুষ্যত্ব ও চরিত্রকে ধ্বংস করে দেয়। মুনাফিক তার স্বার্থ হাসিলের জন্য নানা অন্যায় ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়। সমাজের মানুষের মাঝে বিবাদ, বিসম্বাদ, অনৈক্য ও অশান্তি সৃষ্টি করে।

✓ মুনাফিক আমাদের সমাজে শান্তি-স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। কারণ তারা সর্বদা মিথ্যাচার করে, সত্যকে লুকিয়ে রাখে এতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত হয়। 

✓ মুনাফিকরা আমানতের খিয়ানত করে। এতে যে আমানত রেখেছে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, পরস্পর শত্রুতার সৃষ্টি হয়। সমাজে মারামারি হয়, শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়।

✓ মুনাফিক অঙ্গীকার ভঙ্গ করে। যার সাথে ভঙ্গ করেছে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ঝগড়া, বিবাদ, মারামারি লেগেই থাকে।

✓ এরা একের গোপন কথা, দুর্বলতা অন্যের নিকট প্রকাশ করে সমাজে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করে।

✓ এরা সমাজে গুপ্তচর হিসেবে কাজ করে ভালো মানুষদের সঙ্গে খারাপ মানুষদের ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে দেয়।

✓ সমাজে যত অপকর্ম, খারাপ কাজ, বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এর মূলে থাকে মুনাফিকরা। এদের কাজই হচ্ছে সমাজে বিশৃঙ্খলা লাগিয়ে সামজের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করা।

✓ এরা মানুষ ও সমাজের সুখ ও শান্তি সহ্য করতে পারে না তাই যেকোনো বাহানায় সমাজে বিশৃঙ্খলা লাগিয়েই রাখে। এজন্য মানুষ এদের পছন্দ করে না।

✓ মুনাফিরা নিজেদের বুদ্ধিমান, ধূর্ত, চতুর ও চালাক মনে করে আর মুমিন ও নেজারদের নির্বোধ মনে করে। অথচ তারা নিজেরাই বোকা, নির্বোধ।

প্রতিফলন ডায়েরি লিখন: “নিফাক থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য ব্যক্তি, পরিবার, বিদ্যালয় ও সমাজজীবনে যেসব ভালো কাজ করবো এবং যেসব মন্দ কাজ পরিহার করবো।”

সমাধান: 

ক্ষেত্রসমূহযেসব ভালো কাজ করবযেসব মন্দ কাজ পরিহার করব
ব্যক্তিগত জীবনেসর্বদা সত্য কথা বলব।
আমানত রক্ষা করব।
ওয়াদা পালন করব।
নিজের ওপর জুলুম করব না।
খিয়ানত করব না।
ওয়াদা ভঙ্গ করব না।
পরিবারেশালীন ভাষা প্রয়োগ করব।
বাবা-মার সেবা করব।
স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যবহার করব।
ওয়াদা পালন করব
বড়দের অসম্মান করব না 
মিথ্যাচার পরিহার করব।
বোনদের হকের খিয়ানত করব না।
স্ত্রী-সন্তানদের ওপর জুলুম করব না।
বিদ্যালয়েশিক্ষককে সম্মান করব।
সহপাঠীর হক রক্ষা করব।
শৃঙ্খলা রক্ষা করব।
বিশৃঙ্খলা করব না।
বিদ্যালয়ের কোন জিনিস নষ্ট করব না।
শিক্ষকদের অসম্মান করব না।
সমাজেশান্তি বজায় রাখব।
মূল্যবোধ মেনে চলব।
উত্তম চরিত্র বজায় রাখব।
অনাচার করব না।
অনৈক্য বিবাদ করব না।
সমাজের শান্তি নষ্ট করব না।