আপনার শিশুকে টিকা দিন – সমাধান | বিজ্ঞান – অনুশীলন বই | ১৬ অধ্যায় | ষষ্ঠ শ্রেণী 

আপনার শিশুকে টিকা দিন - সমাধান | বিজ্ঞান - অনুশীলন বই | ১৬ অধ্যায় | ষষ্ঠ শ্রেণী

এই পোস্টে আমরা জানব ষষ্ঠ  শ্রেনীর, বিষয় বিজ্ঞান (অনুশীলন বই) এর ষোড়শ অধ্যায়, আপনার শিশুকে টিকা দিন সম্পর্কে।

সেশন শুরুর আগে

★ কোন কোন রোগের জন্য টিকা নিতে হয়, কোন বয়সে টিকা নিতে হয়- এসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে নিচের তালিকায় লেখো। প্রয়োজনে শিক্ষক ও অন্যদের যেমন বাবা, মা, বড় ভাই-বোন, প্রতিবেশীর সাহায্য নাও—

নমুনা উত্তর :

ক্রমিক নংটিকাযে রোগের জন্যযে বয়সে দেওয়া হয়
বিসিজিযক্ষ্মা শিশুর জন্মের এক মাসের মধ্যে।
ওপিভিপোলিওজন্মের সময় এবং জন্মের ৬, ১০ ও ১৪ সপ্তাহে। 
পেন্টাভ্যালেন্টডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা। শিশুর ৬, ১০ এবং ১৪ সপ্তাহে। 
পিসিভিনিউমোনিয়াশিশুর ৬, ১০ এবং ১৪ সপ্তাহে।
এম আর ভ্যাকসিনহাম ও রুবেলাশিশুর ৯ মাস পূর্ণ হওয়ার পর থেকে ১২ মাসের মধ্যে।
ফাইজার, মডার্নাকোভিড-১৯জন্মের ৫ বছর বয়স থেকে।
ভেরিসেল্লাচিকেন পক্সশিশুর জন্মের ১২ মাস পরে এবং 8 – ১২ বছরের মধ্যে ২ ডোজ।
টিটেনাস টক্সয়েডটিটেনাসগর্ভাবস্থায় 
র‍্যাবিসজলাতঙ্ক প্রাণী কামড়ালে
১০মাম্পস ভ্যাকসিন মাম্পসজন্মের ১২-১৮ মাসের মধ্যে।
১১আরভিভিডায়রিয়াজন্মের ১ বছরের মধ্যে।
১২টিটিধনুষ্টংকারশিশুর ৬, ১০ এবং ১৪ সপ্তাহে। 

ভিন্ন মত বাক্স

আমার তৈরি করা টিকার তালিকাটি বাসার সবাইকে পড়ে শুনিয়েছি। পরিবারের সবাই বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করলেও আমার দাদী এ বিষয়ে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তিনি টিকা প্রদানের বিষয়টিতে কিছুটা অনাগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, টিকা দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করা যাবে না।

প্রথম সেশন

★ বাসায় তোমরা যে তালিকা তৈরি করেছিলে তা বের করো। ভিন মত বাক্সে যদি কিছু লেখা থাকে তাহলে তা পাশের সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো—

নমুনা উত্তর: ভিন্নমত বক্সে লেখা আমার দাদীর মতামত নিয়ে সহপাঠীর সাথে আলোচনা করলাম। আলোচনায় বুঝতে পারলাম টিকা বিষয়ে সঠিক ধারণা না থাকায় তিনি এ ধরনের নেতিবাচক মতামত দিয়েছেন।

রোগের জন্য দায়ী” কলামে ভাইরাস / ব্যাকটেরিয়া এর মধ্যে যেটি সঠিক বলে তুমি মনে করো তা লেখো। একাজের সময় তোমাদের রিসোর্স বই এর ‘জীবের পুষ্টি ও বিপাক’ অধ্যায় ও “জীবের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা’ এবং ‘টেকসই পরিবেশ’ অধ্যায়ের ‘জীব জগতের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা’ অংশটির সহায়তা নিতে পারো। পাশের সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারো।

নমুনা উত্তর :

ক্রমিক নংটিকাযে রোগের জন্যরোগের জন্য দায়ী কে?
বিসিজিযক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়া
ওপিভিপোলিওভাইরাস
পেন্টাভ্যালেন্ট টিকাডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, ধনুষ্টংকারব্যাকটেরিয়া
পেন্টাভ্যালেন্ট টিকাহেপাটাইটিস বি, হিমোফাইলাম, ইনফ্লুয়েঞ্জাভাইরাস
পিসিভিনিউমোনিয়াভাইরাস
এম আর ভ্যাকসিনহাম ও রুবেলাভাইরাস 
ফাইজার, মডার্নাকোভিড-১৯ভাইরাস
ভেরিসেল্লাচিকেন পক্সভাইরাস
টিটেনাস টক্সয়েডটিটেনাসব্যাকটেরিয়া 
১০র‍্যাবিসজলাতঙ্ক ভাইরাস
১১মাম্পস ভ্যাকসিন মাম্পসভাইরাস
১২আরভিভিডায়রিয়াব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস।
১৩এইচ আই ভিইনফ্লুয়েঞ্জাভাইরাস 

এবার নিচের বাক্যগুলোর অপ্রয়োজনীয় বা ভুল অংশ কেটে দিয়ে সঠিক বাক্যটি তৈরি করো। তোমাদের বিজ্ঞান বইয়ের ‘জীবের পুষ্টি ও বিপাক’ অধ্যায়ের সহায়তা নিতে পারো। একে অন্যের সঙ্গে আলোচনাও করতে পারো ।

সঠিক বাক্য গড়ি:

১. ভাইরাস এক প্রকার অণুজীব / পরজীবী উদ্ভিদ / প্রাণী এবং এরা স্বভোজী / পরভোজী। সঠিক বাক্য : ভাইরাস এক প্রকার পরজীবী এবং এরা পরভোজী।

২. ব্যাকটেরিয়া এক প্রকার অণুজীব/পরজীবী/উদ্ভিদ/প্রাণী এবং এরা স্বভোজী/পরভোজী। 

সঠিক বাক্য: ব্যাকটেরিয়া এক প্রকার অণুজীব এবং এরা পরভোজী।

৩. ছত্রাক এক প্রকার অনুজীব/পরজীবী উদ্ভিদ/প্রাণী এবং এরা স্বভোজী পরভোজী। 

সঠিক বাক্য: ছত্রাক এক প্রকার অনুজীব এবং তারা পরভোজী।

দ্বিতীয় সেশন

প্রশ্ন ৪। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া কি শুধুই রোগের কারণ?

উত্তর : না, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া শুধুই রোগের কারণ নয়। বরং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে অনেক রোগের প্রতিষেধক বা টিকা তৈরি করা হয়, যা আমাদের রোগ থেকে রক্ষা করে। যেমন- যক্ষ্মা, ধনুষ্টংকার, হুপিংকাশি, নিউমোনিয়া, টিটেনাস ইত্যাদি রোগের টিকা তৈরিতে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। আবার পোলিও, হেপাটাইটিস, হাম ও রুবেলা, কোভিড-১৯, জলাতঙ্ক, ইনফ্লুয়েঞ্জা ইত্যাদি রোগের টিকা তৈরিতে ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ছত্রাক আমাদের জীবন রক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিকের উৎস।

★ তোমাদের বিজ্ঞান বইয়ের ‘জীবের পুষ্টি ও বিপাক অধ্যায়ের ‘অণুজীবে পুষ্টি উপাদান পরিশোষণ অংশ ও জীবের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং টেকসই পরিবেশ অধ্যায়ের শুরু থেকে জীবজগতের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা’ অংশগুলো নিচের প্যারাগ্রাফটি পূরণ করতে তোমাকে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া দলের আলোচনা করতে তো বাধা নেই।

নমুনা উত্তর :

চ্যালেঞ্জ অনুচ্ছেদ

নতুন কোনো জীব জন্ম নেওয়ার পর সেই জীবের শরীরে পরিবেশ থেকে জৈব ও অজৈব পদার্থ জমা হয় ও জীবের শারীরিক বিকাশ ঘটে। মারা যাবার পর আবার সেই জৈব এবং অজৈব উপাদানগুলো পরিবেশে ফিরে যায়। পরবর্তী সময়ে আবার কোনো জীবের ভেতর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা পরিবেশে জৈব এবং জড় উপাদান হিসেবে থেকে যায়।
পোষক দেহে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত ভাইরাস এক ধরনের জড় পদার্থের মতো। পোষক দেহের বাইরে এরা জড় পদার্থের মতো হলেও ভিতরে কিন্তু আবার জড় নয়। তাদের পুষ্টি উপাদান পরিশোষণ সরল প্রকৃতির হয়। অনেক সময় পুষ্টি উপাদান পরিবেশ থেকে সরাসরি কোষঝিল্লি ভেদ করে অণুজীবের কোষের ভেতরে প্রবেশ করে। আবার কখনো কখনো পুষ্টি উপাদানকে পরিবেশ থেকে কোষের ভেতরে নেওয়ার জন্য কোষঝিল্লির কিছু বাহক সহযোগিতা করে।
অনেক অণুজীব রয়েছে যারা আমাদের উপকার করে। আমাদের শরীরের জন্য উপকারী কিছু ব্যাকটেরিয়া আমরা দইয়ের সঙ্গে খেয়ে থাকি। কিছু ছত্রাক আমাদের অ্যান্টিবায়োটিকের উৎস। প্রাণঘাতী নানান অসুখের বিরুদ্ধে টিকা তৈরি করা হয় ভাইরাস ব্যবহার করে। পোলিও অসুখটির বিরুদ্ধে টিকা তৈরি করা হয় ভাইরাস ব্যবহার করে।
এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যারা উদ্ভিদকে পরিবেশ থেকে নাইট্রোজেন সংবন্ধন করতে সহায়তা করে। বিজ্ঞানীরা পাটের পাতা এবং কাণ্ডেও বিভিন্ন ধরনের অণুজীব পেয়েছেন, যারা পাটের বৃদ্ধি ও টিকে থাকার জন্য সহযোগিতা করে।
উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়ের কাছ থেকেই পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে অণুজীব। এ ছাড়া উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যুর পর তাদেরকে বিয়োজনের মাধ্যমে প্রকৃতিতে বিভিন্ন উপাদান ফিরিয়ে দেয় তারা। 

★ টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে তো জানলে, কীভাবে তোমাদের কমিউনিটিতে টিকাদান কর্মসূচি আরও শক্তিশালী করতে পারো সে বিষয়ে পরিকল্পনা করো। সম্ভব হলে কোনো টিকাদান কর্মসূচিতে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারো, কিংবা টিকাদান কর্মসূচিকে জনপ্রিয় করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নিতে পারো। দলে বসে পরিকল্পনা করে তা ক্লাসে শেয়ার করো। পরবর্তী সময়ে তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে তোমার অভিজ্ঞতা ক্লাসে শেয়ার করতে ভুলো না।

নমুনা উত্তর:

টিকাদান কর্মসূচি শক্তিশালী করার জন্য পরিকল্পনা :

রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। নির্দিষ্ট একটি টিকা একটি নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। টিকাদানের মাধ্যমে বিশেষ করে শিশুদের অকাল মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব রোধ করা যায়। তাই টিকাদান কর্মসূচি শক্তিশালীকরণ জরুরি। এক্ষেত্রে আমার পরিকল্পনা হলো–

১. সবাইকে টিকা গ্রহণের সুফল সম্পর্কে অবহিত করা।

২. টিকা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রায় ধারণা দূর করা।

৩. সময়মতো টিকা গ্রহণে পরিচিতজনদের উৎসাহিত করা।

৪. টিকাদান কর্মসূচিতে ভলান্টিয়ার হিসেবে অংশগ্রহণ করা।

প্রয়োজনীয় প্রশ্ন :

প্রশ্ন ১। টিকা বা ভ্যাকসিন কী? 

উত্তর : টিকা (Vaccine) টিকা হলো এক ধরনের জৈব রাসায়নিক যৌগ, যা অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াকে উত্তেজিত করে এবং দেহে কোনো একটি রোগের জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন ২। টিকা কেন নিতে হয়?

উত্তর: কোনো রোগ থেকে সুরক্ষা বিকাশে সহায়তা করার জন্য দেহে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে টিকা নিতে হয়। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো টিকা নেওয়া।

প্রশ্ন ৩। টিকা বা ভ্যাকসিন নেওয়ার ফল কী হয়?

উত্তর : টিকা বা ভ্যাকসিন সাধারণত নির্দিষ্ট রোগভিত্তিক হয়ে থাকে। কোনো নির্দিষ্ট রোগের টিকা বা ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে দেহে ঐ রোগের বিরুদ্ধে কৃত্রিমভাবে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ঐ রোগ থেকে সুরক্ষা লাভ করা যায়।

প্রশ্ন ৪। অনুজীব কী?

উত্তর: আমাদের চারপাশে অনেক জীব আছে যাদের আমরা খালি চোখে দেখতে পাইনা। এদের নির্দিষ্ট কেন্দ্রিকাযুক্ত সুগঠিত কোষও নেই। এরাই হলো অণুজীব।

প্রশ্ন ৫। ব্যাকটেরিয়া কী?

উত্তর : ব্যাকটেরিয়া হলো আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত, অসবুজ, এককোষী অণুবীক্ষণিক জীব।

প্রশ্ন ৬। ছত্রাক কী?

উত্তর : ছত্রাক সমাজাদেহী ক্লোরোফিলবিহীন অসবুজ উদ্ভিদ।

প্রশ্ন । ভ্যাকসিন কী?

উত্তর : ভ্যাকসিন হলো এক ধরনের জৈব রাসায়নিক যৌগ, যা অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াকে উত্তেজিত করে এবং দেহে কোনো একটি রোগের জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাতে সাহায্য করে।