বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নকশাকার কে?

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে জাতীয় পতাকার গুরুত্ব অপরিসীম। লাল-সবুজের এই পতাকা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতীক।

তবে এই পতাকার নকশা প্রণয়নের ক্ষেত্রে যে মানুষটি মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন, তিনি হলেন ছাত্রনেতা শিব নারায়ণ দাশ

তার নকশা করা জাতীয় পতাকা দেশের প্রথম স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

জাতীয় পতাকা নকশার পটভূমি

১৯৭১ সালের আগে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের উপর অত্যাচার এবং শোষণের প্রতিবাদে বিভিন্ন আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৭০ সালে ঢাকায় ছাত্রনেতারা একটি স্বাধীন বাংলা গঠনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। এই সময়ই প্রয়োজন অনুভূত হয় একটি পতাকার, যা হবে বাঙালির নিজস্ব পরিচয় এবং মুক্তির প্রতীক।

১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ১১৮ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা পতাকা নিয়ে আলোচনায় বসেন। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, শিব নারায়ণ দাশসহ আরও অনেকে।

বৈঠকে একটি সিদ্ধান্ত হয়—সবুজ জমিনের উপর লাল সূর্য এবং সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত থাকবে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিব নারায়ণ দাশ পতাকার নকশাটি সম্পন্ন করেন।

প্রথম পতাকা উত্তোলন

১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে আ স ম আবদুর রব শিব নারায়ণ দাশের নকশা করা প্রথম জাতীয় পতাকাটি উত্তোলন করেন।

সেই পতাকা ছিল সবুজ জমিনে লাল সূর্যের মাঝে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত।

স্বাধীনতার সংগ্রামে পতাকার ভূমিকা

শিব নারায়ণের নকশা করা পতাকাটি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বাঙালির স্বাধীনতার প্রতীক এবং মুক্তি সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরে ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার পর জাতীয় পতাকা থেকে মানচিত্র বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শিল্পী কামরুল হাসান নতুন করে লাল-সবুজ পতাকা ডিজাইন করেন, যা আজকের জাতীয় পতাকা হিসেবে গৃহীত।

শিব নারায়ণ দাশের জীবন

শিব নারায়ণ দাশ কুমিল্লার একজন প্রতিভাবান ছাত্রনেতা ছিলেন। তার পিতা সতীশ চন্দ্র দাশ ছিলেন একজন আয়ূর্বেদ চিকিৎসক, যাকে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী হত্যা করে।

শিব নারায়ণ দাশ ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ভাষা আন্দোলনের সময় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সান্নিধ্যে রাজনীতিতে যোগ দেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন সাহসী এবং মানবিক মানুষ ছিলেন। মৃত্যুর পর তার মরদেহ বারডেম হাসপাতালকে দান করা হয়।

শিব নারায়ণ দাশের নকশা করা জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক।

তিনি শুধু পতাকার নকশাকারই ছিলেন না, বরং মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে জাতির জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তার অবদান চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।