আমাদের জীবনের প্রতিদিনের কার্যক্রমে কখনো না কখনো দরখাস্ত লেখার প্রয়োজন হয়, হোক তা স্কুলে অনুপস্থিতির জন্য বা অফিসে ছুটির আবেদন। দরখাস্ত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু সঠিকভাবে দরখাস্ত লেখার নিয়ম না জানার কারণে, আমরা প্রায়ই ভুল করে ফেলি, যা দরখাস্তের গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে দিতে পারে।
এই পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো দরখাস্ত সম্পর্কে—দরখাস্তের সঠিক সংজ্ঞা, দরখাস্ত লেখার সাধারণ নিয়মকানুন, এবং কিভাবে একটি কার্যকর বাংলা দরখাস্ত লেখা যায়। এছাড়াও, স্কুলে ছুটির দরখাস্ত এবং চাকরির জন্য দরখাস্ত লেখার নিয়মসহ বিভিন্ন ধরনের দরখাস্ত লেখার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা থাকবে।
দরখাস্ত বা আবেদনপত্র কি?
কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে আবেদন করার জন্য যে পত্র লেখা হয়, তাকে দরখাস্ত বা আবেদনপত্র বলা হয়। এটি একটি নির্দিষ্ট গঠন ও নিয়ম অনুসরণ করে লিখতে হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা দরখাস্ত ব্যবহার করি, যেমন প্রাতিষ্ঠানিক, দাপ্তরিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন আবেদন, অফিসে ছুটির জন্য, চাকরির আবেদন ইত্যাদি।
বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম
আমরা বিভিন্ন কাজে দরখাস্ত ব্যবহার করি, এবং কাজের প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে দরখাস্তের ধরন পরিবর্তিত হতে পারে। তবে, দরখাস্ত লেখার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে, যা প্রতিটি দরখাস্তে মানা আবশ্যক। যেকোনো ধরনের দরখাস্ত লেখার সময়, আপনাকে অবশ্যই নিম্নলিখিত বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে:
- তারিখ: প্রথমে বাম পাশে সঠিক তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
- প্রাপকের পদবী ও ঠিকানা: এরপর যার কাছে আবেদন করা হচ্ছে, তার পদবী ও ঠিকানা সঠিকভাবে লিখতে হবে।
- আবেদনের বিষয়: আবেদনের সংক্ষিপ্ত বিষয় উল্লেখ করতে হবে, যাতে প্রাপক সহজেই বুঝতে পারেন।
- সম্ভাষণ: বিষয় উল্লেখ করার পরে সম্ভাষণ লিখতে হবে, যেমন “মহোদয়,” “জনাব” ইত্যাদি।
- আবেদনের মূল অংশ: আবেদনের মূল অংশে, সংক্ষিপ্ত এবং গঠনমূলকভাবে আবেদন সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করতে হবে।
- আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা: শেষে, বিনীত বা নিবেদক লিখে আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা যুক্ত করতে হবে।
দরখাস্তের কাঠামো
দরখাস্ত লেখার একটি নির্দিষ্ট কাঠামো রয়েছে, যা আনুষ্ঠানিক পত্র লেখার সময় মেনে চলা জরুরি।
- তারিখ
- বরাবর
- কর্তৃপক্ষের নাম ও ঠিকানা
- বিষয়
- সম্ভাষণ
- মূল বক্তব্য (এক বা দুই প্যারায় সংক্ষিপ্তভাবে)
- বিদায় সম্ভাষণ (বিনীত/নিবেদক)
- আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা
আবেদনের বিষয় অনুযায়ী কাঠামোতে সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। যেমন চাকরির আবেদনে আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য যুক্ত করা হয়। তবে সাধারণ কাঠামো সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
কি কি বিষয়ে দরখাস্ত লেখা হয়?
দরখাস্ত বিভিন্ন উদ্দেশ্যে লেখা হতে পারে, যেমন:
- ছুটির জন্য আবেদন
- স্কুল বা অফিসে অনুপস্থিতির জন্য
- জরিমানা মওকুফের জন্য
- উপবৃত্তির জন্য আবেদন
- ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য
- চাকরি বা চাকরি ছাড়ার জন্য আবেদন
- সরকারি বা প্রশাসনিক সুবিধা পাওয়ার জন্য
১. স্কুলে অনুপস্থিতির জন্য দরখাস্ত লেখার নিয়ম
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,
[স্কুলের নাম],
[ঠিকানা]।
বিষয়: অনুপস্থিতির জন্য আবেদন।
মহোদয়,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। আমি গত [তারিখ] থেকে [তারিখ] পর্যন্ত অসুস্থতার কারণে স্কুলে অনুপস্থিত ছিলাম। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন ছিল। তাই আমার অনুপস্থিতি ক্ষমা করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।অতএব, আমার অনুপস্থিতি যেন ক্ষমা করা হয়, সে বিষয়ে আপনার সদয় অনুমোদনের জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
বিনীত,
নিবেদক,
[আপনার নাম]
নবম শ্রেণি, রোল নম্বর: [রোল নম্বর]
[স্কুলের নাম], [ঠিকানা]।
২. জরিমানা মওকুফের জন্য দরখাস্ত নমুনা
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,
[স্কুলের নাম],
[ঠিকানা]।
বিষয়: জরিমানা মওকুফের আবেদন।
মহোদয়,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার স্কুলের নবম শ্রেণির একজন ছাত্র। পারিবারিক সমস্যার কারণে নির্ধারিত সময়ে আমার বেতন জমা দিতে পারিনি। এর ফলে আমার উপর জরিমানা আরোপ করা হয়েছে। আমি অত্যন্ত দুঃখিত এবং আমার পরিবার বর্তমানে আর্থিক সমস্যায় আছে।অতএব, জরিমানা মওকুফ করে আমাকে সহযোগিতা করার জন্য আপনার প্রতি বিনীত আবেদন জানাচ্ছি।
বিনীত,
নিবেদক,
[আপনার নাম]
নবম শ্রেণি, রোল নম্বর: [রোল নম্বর]
[স্কুলের নাম], [ঠিকানা]।
৩. উপবৃত্তির জন্য দরখাস্ত লেখার নিয়ম
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,
[স্কুলের নাম],
[ঠিকানা]।
বিষয়: উপবৃত্তির জন্য আবেদন।
মহোদয়,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র এবং আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। পড়াশোনার খরচ বহন করা আমাদের জন্য কষ্টকর।অতএব, আমি যাতে আমার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারি, সেই জন্য উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করার জন্য আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বিনীত,
নিবেদক,
[আপনার নাম]
নবম শ্রেণি, রোল নম্বর: [রোল নম্বর]
[স্কুলের নাম], [ঠিকানা]।
৪. অধ্যক্ষ বরাবর দরখাস্ত লেখার নিয়ম
বরাবর,
অধ্যক্ষ,
[স্কুলের নাম],
[ঠিকানা]।
বিষয়: [বিশেষ কারণ উল্লেখ করে দরখস্ত]
মহোদয়,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। [কারণ উল্লেখ করুন]।অতএব, আমি আপনার সদয় অনুমোদন কামনা করছি যেন [বিশেষ কারণ] এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বিনীত,
নিবেদক,
[আপনার নাম]
নবম শ্রেণি, রোল নম্বর: [রোল নম্বর]
[স্কুলের নাম], [ঠিকানা]।
৫. ছাড়পত্রের জন্য দরখাস্ত
বরাবর,
প্রধান শিক্ষক,
[স্কুলের নাম],
[ঠিকানা]।
বিষয়: ছাড়পত্রের জন্য আবেদন।
মহোদয়,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। ব্যক্তিগত কারণে আমাকে স্কুল পরিবর্তন করতে হচ্ছে।অতএব, আমার ছাড়পত্র প্রদান করে বাধিত করবেন।
বিনীত নিবেদক,
[আপনার নাম]
নবম শ্রেণি, রোল নম্বর: [রোল নম্বর]
[স্কুলের নাম], [ঠিকানা]।
৬. উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দরখাস্ত
বরাবর,
উপজেলা নির্বাহী অফিসার,
[উপজেলার নাম],
[ঠিকানা]।
বিষয়: [বিশেষ কারণ উল্লেখ করে দর্কাস্থ]
মহোদয়,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি [নাম], [ঠিকানা] এর একজন বাসিন্দা। [বিশেষ কারণ] এর জন্য আপনার কাছে এই আবেদন জানাচ্ছি।অতএব, আমার আবেদনটি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।
বিনীত নিবেদক,
[আপনার নাম]
[ঠিকানা]
৭. চাকরির জন্য দরখাস্ত
বরাবর,
ব্যवস্থাপক,
[কোম্পানির নাম],
[ঠিকানা]।
বিষয়: চাকরির জন্য আবেদন।
মহোদয়,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার প্রতিষ্ঠানে [পদের নাম] পদে চাকরির জন্য আবেদন করছি। আমি [শিক্ষাগত যোগ্যতা] এবং [কর্মদক্ষতা] সহ প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।অতএবে আমার আবেদনটি বিবেচনা করে আমাকে উপযুক্ত পদে নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ করছি।
বিনীত নিবেদক,
[আপনার নাম]
[ঠিকানা]
[মোবাইল নম্বর]
৮. চাকরি ছাড়ার জন্য দরখাস্ত
বরাবর,
ব্যवস্থাপক,
[কোম্পানির নাম],
[ঠিকানা]।
বিষয়: চাকরি থেকে পদত্যাগের জন্য আবেদন।
মহোদয়,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি [আপনার নাম], [পদের নাম] পদে আপনার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছি। ব্যক্তিগত কারণে আমি এই পদ থেকে পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক এবং আগামী [তারিখ] হতে আমার চাকরি ছেড়ে দিতে চাই।অতএবে আমার পদত্যাগের আবেদনটি গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি।
বিনীত নিবেদক,
[আপনার নাম]
[ঠিকানা]
[মোবাইল নম্বর]