কোরবানি ইসলাম ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শুধু পশু জবাইয়ের একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং এর মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর প্রতি আনুগত্য, ত্যাগ এবং সহমর্মিতার শিক্ষা অর্জন করে।
কোরবানি হলো আত্মশুদ্ধির একটি উপায়, যা আমাদের আত্মা ও সমাজ—দু’টিকে সুন্দর করে গড়ে তোলে।
কোরবানির ইতিহাস ও তাৎপর্য
কোরবানির সূচনা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তার পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে।
- ইব্রাহিম (আঃ)-এর স্বপ্নে আদেশ – আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করার আদেশ পান।
- আনুগত্য ও আত্মত্যাগ – ইব্রাহিম (আঃ) আদেশ পালনে প্রস্তুত হন, ইসমাইল (আঃ) তাতে সায় দেন।
- আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার – আল্লাহ তাদের ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখে একটি দুম্বা কোরবানির আদেশ দেন।
এই ত্যাগ ও আনুগত্যের ইতিহাস স্মরণ করে মুসলমানরা প্রতি বছর কোরবানি করে থাকে, যা ইসলামের গভীর শিক্ষা বহন করে।
কোরবানির ফজিলত
কোরবানি করার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সুযোগ পায়।
- আল্লাহর সন্তুষ্টি
- তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ
- পরকালের সফলতা অর্জনের মাধ্যম
হাদিসে এসেছে, কোরবানির দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো কোরবানি করা। এই ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর প্রতি নিজের ভালবাসা ও আনুগত্য প্রকাশ করে।
কার উপর কোরবানি ওয়াজিব?
প্রত্যেক মুসলমানের জন্য নির্দিষ্ট শর্ত পূরণে কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে।
- প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম
- স্থায়ী বাসিন্দা
- নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক (৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা ৫২.৫ তোলা রূপা বা সমপরিমাণ সম্পদ)
- ঋণমুক্ত ও মৌলিক চাহিদা পূরণ করার পর অতিরিক্ত সম্পদ থাকলে
এই শর্ত পূরণ করলে পুরুষ বা নারী যেকোনো মুসলমানের উপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়।
কোন কোন পশু কোরবানি করা যায়?
শরিয়ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট কয়েকটি পশু কোরবানির জন্য বৈধ।
- গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও উট
- ছাগল/ভেড়া – কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে (ব্যতিক্রম সহ)।
- গরু/মহিষ – ২ বছর পূর্ণ হতে হবে।
- উট – ৫ বছর পূর্ণ হতে হবে।
- পশু হতে হবে সুস্থ ও অঙ্গহীনহীন
অসুস্থ, খোঁড়া বা অন্ধ পশু কোরবানির অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।
কোরবানির সময়সীমা
সুনির্দিষ্ট একটি সময়সীমার মধ্যে কোরবানি আদায় করতে হয়।
- শুরু: ১০ই জিলহজ (ঈদের নামাজের পর)
- শেষ: ১২ই জিলহজ (বিকেল পর্যন্ত)
ঈদের নামাজের আগে কোরবানি করলে তা শুদ্ধ হবে না, তাই যথাযথ সময়ে ইবাদত পালন জরুরি।
কোরবানির মাংস বণ্টন নিয়ম
কোরবানির মাংসের যথাযথ বণ্টন ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।
- এক-তৃতীয়াংশ – দরিদ্র ও মিসকিনদের জন্য
- এক-তৃতীয়াংশ – আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের জন্য
- এক-তৃতীয়াংশ – নিজের পরিবারের জন্য
সম্পূর্ণ মাংস দান করা যেতে পারে, তবে সম্পূর্ণ নিজের কাছে রাখা অনুচিত। এভাবে সমাজে সহানুভূতি ও ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ে।
কোরবানির মূল শিক্ষা
কোরবানির পেছনে রয়েছে চমৎকার আধ্যাত্মিক শিক্ষা।
- আত্মত্যাগ ও আনুগত্যের চূড়ান্ত প্রকাশ
- ধনী ও গরিবের মধ্যে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা
- সহানুভূতি ও সহানুভবতার বিকাশ
- আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা ও ঈমানের পরিপূর্ণতা
কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মানুষকে আল্লাহর প্রতি ত্যাগ ও আনুগত্যের শিক্ষা দেয়।
এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, বরং সমাজে সাম্য, মানবতা এবং ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যম।
তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত কোরবানি পালন করা আন্তরিকতা ও যথাযথ নিয়ম মেনে।