জীবন ও বৃক্ষ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

জীবন ও বৃক্ষ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

এই পোস্টে আমরা জানব জীবন ও বৃক্ষ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর।

জীবন ও বৃক্ষ গল্পের লেখক পরিচিত

নাম
মোতাহের হোসেন চৌধুরী

জন্ম ও পরিচিতি
জন্ম সাল : ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দ
জন্মস্থান ও পৈতৃক নিবাস : নোয়াখালী জেলার কাঞ্চনপুর গ্রাম

শিক্ষাজীবন
মাধ্যমিক : মাতৃভাষা, ইউনিয়ন হাইস্কুল, কুমিল্লা
উচ্চ মাধ্যমিক : ঢাকা, ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা
উচ্চ শিক্ষা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পেশা ও কর্মজীবন
সহকারী শিক্ষক – ইসলামিয়া কলেজ, কলকাতা
প্রধান – ইসলামিয়া কলেজ, কলকাতা
অধ্যাপক – বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ
প্রধান ও অধ্যক্ষ – চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ
স্মরণীয় ঘটনা : ঢাকার মুসলিম সাহিত্য সমাজ (১৯৩৬) প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা

সাহিত্য কর্ম
প্রবন্ধ গ্রন্থ : সংস্কৃতির কথা
অনুবাদ গ্রন্থ : ‘সত্যের’ (ক্রিস্ট বেনেড সিভিলাইজেশনের অনুবাদ),
‘দুঃখ’ (বার্ট্রান্ড রাসেলের Conquest of Happiness-এর Civilization-এর অনুবাদ)

ইন্তেকাল
মৃত্যু তারিখ : ১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ

জীবন ও বৃক্ষ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

সৃজনশীল ১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

এই যে বিটপি শ্রেণি হেরি সারি সারি-

কি আশ্চর্য শোভাময় যাই বলিহারি।

কেহবা সরল সাধু হৃদয় যেমন,

ফলভারে নত কেহ গুণীর মতন।

এদের স্বভাব ভালো মানবের চেয়ে,

ইচ্ছা যার দেখ দেখ জ্ঞানচক্ষে চেয়ে।

যখন মানবকুল ধনবান হয়,

তখন তাদের শির সমুন্নত রয়।

কিন্তু ফলশালী হলে এই তরুগণ,

অহংকারে উচ্চ শির না করে কখন।

ফলশূন্য হলে সদা থাকে সমুন্নত,

নিচ প্রায় কার ঠাঁই নহে অবনত।

ক. মোতাহের হোসের চৌধুরী কোন আন্দোলনের কান্ডারি ছিলেন?

খ. কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নদীকেই মনুষ্যত্বের প্রতীক করতে চেয়েছেন কেন?

গ. ‘বৃক্ষের দিকে তাকালে জীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি সহজ হয়’ প্রবন্ধের এ উক্তিটি উদ্দীপকে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘উদ্দীপকের ‘বৃক্ষ’ এবং ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের ‘বৃক্ষ’ কি একসূত্রে গাঁথা?’- তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।

১ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. মোতাহের হোসেন চৌধুর ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ নামে এক যুগান্তকারী আন্দোলনের কান্ডারি ছিলেন।

খ. নদীর গতিতে মনুষ্যত্বের দুঃখ অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে বলেই কবি নদীকেই মনুষ্যত্বের প্রতীক করতে চেয়েছেন।

কোনো মানুষ কেবল জন্মগ্রহণ করলেই মানুষ হয় না, তাকে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। এই মনুষ্যত্ব অর্জন মোটেই সহজ কোনো বিষয় নয়। নদীকে যেমন বাঁকে বাঁকে বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে চলতে হয়, তেমনি অনেক বাধা ডিঙিয়ে মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। মনুষ্যত্ব অর্জনের সঙ্গে নদীর পথ পেরোনোর বিষয়টি অনেক বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ বলেই কবি নদীকেই মনুষ্যত্বের প্রতীক করতে চেয়েছেন।

গ. বৃক্ষ ফলবান হলে নতমস্তিষ্কে থাকে আর ফলশূন্য হলে থাকে সদা সমুন্নত। যা মানজীবনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য- এভাবেই উদ্দীপকে আলোচ্য উক্তিটি প্রতিফলিত হয়েছে।

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। মানুষ তার মনুষ্যত্বের জন্য সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে বিবেচ্য। পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার মধ্যেই মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত। বিত্তশালী হলেও অহংকার না করে সকলের সঙ্গে বৃক্ষের জীবনকে সাদৃশ্যময় করে তোলা হয়েছে উদ্দীপকে। সরল সাধু বা গুণীরা মূলত ফলভারে নত বৃক্ষের মতোই। ফলশালী বৃক্ষ যেমন অহংকার না করে নতশিরে থাকে মানুষের জীবনার্থও তাই হওয়া উচিত। ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধেও প্রাবন্ধিক একই ধরনের মন্তব্য করে বলেছেন বৃক্ষের দিকে তাকালেই মানবজীবনের তাৎপর্য উপলব্ধি সহজ হয়। কেননা, বৃক্ষ কেবল মাটি থেকে রস গ্রহণ করে নিজের প্রয়োজনই মেটায় না, তাকে অপরের জন্য ফুল আর ফলও ধরাতে হয়। এভাবে পরার্থে জীবনকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়েই জীবনের তাৎপর্য অনুভূত হয়। উদ্দীপকের কবিতাতেও একইভাবে বিত্তশালী হয়েও অহংকার না করে নত থাকায় জীবনের তাৎপর্যকে উপলব্ধির বিষয়টি এসেছে। এভাবেই প্রশ্নোক্ত উক্তিটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের ‘বৃক্ষ এবং ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের ‘বৃক্ষ’ একই সূত্রে গাঁথা।

মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য হলো মনুষ্যত্ব অর্জন করে পরার্থে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া। বৃক্ষও নিজেকে পরিপুষ্ট করে অন্যের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য। এ জন্যই ‘বৃক্ষ’ কবিতা এবং ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে মানুষকে বৃক্ষ থেকে শিক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

পরার্থে আত্মনিবেদিত সুকৃতিময় সার্থক বিবেকবোধসম্পন্ন মানবজীবনের মহত্তম প্রত্যাশা থেকেই লেখক মানুষের জীবন কাঠামোকে বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন বৃক্ষের বিকাশ, পরিপূর্ণতা ও সার্থকতার পেছনে রয়েছে তার নীরব সাধনা। বৃক্ষ ফুলে-ফলে পরিপূর্ণতা পেয়ে সে সব কিছু অন্যকে দান করে সার্থকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে। মানবজীবনের স্বার্থকতার জন্যও তার নিজের সাধনা তেমনই হওয়া উচিত বলে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকের কবিতাতেও একইভাবে মানবজীবনের উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে। প্রকৃত সরলমনা সাধু মানুষদের তুলনা করা হয়েছে ফলভারে নত বৃক্ষের সঙ্গে। বলা হয়েছে, বৃক্ষের যে, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সেই বৈশিষ্ট্যে মানুষকে গুণান্বিত হতে। আর এতেই রয়েছে জীবনের প্রকৃত সার্থকতা।

উদ্দীপকের কবিতায় যেমন প্রকৃত মানবজীবনের সঙ্গে বৃক্ষকে তুলনা করা হয়েছে, ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধেও একই বিষয় এসেছে। মূলত ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উভয় রচনাতেই মানবজীবনের সঙ্গে বৃক্ষের জীবন সাধনাকে সাদৃশ্যপূর্ণ করা হয়েছে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের ‘বৃক্ষ’ এবং ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে বৃক্ষ একই সূত্রে গাঁথা।

সৃজনশীল ২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

সিরাজের অল্প বয়সে মা মারা যায়। কেউ তাকে আদর-যত্ন করেনি। স্কুলেও তাকে কখনো পাঠায়নি। সে টোকাই ছেলেদের সাথে ঘুরে-ফিরে বড় হয়ে উঠেছে। সে টাকা পেলে বোমাবাজি, খুনখারাবি সবকিছুই করতে পারে। সে পেশিশক্তির পূজারি। সে ভালো মানুষের সংস্রববঞ্চিত, তার কাছে দয়া-মায়া মানসিক গুণাবলি অনর্থক বিষয়। প্রেম-সৌন্দর্য বঞ্চিত একটা দানব ছাড়া সে আর অন্য কিছু নয়।

ক. মোতাহের হোসেন চৌধুরীর জন্ম কত সালে?

খ. মানুষের জন্য সমাজের কাজ কী? বুঝিয়ে বল।

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের কোন অংশের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা দাও।

ঘ. ‘প্রেম-সৌন্দর্য বঞ্চিত মানুষ নিষ্ঠুর ও দানব প্রকৃতির হয়।’-মূল্যায়ন কর।

২ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. মোতাহের হোসেন চৌধুরীর জন্ম ১৯০৩ সালে।

খ. মানুষের জন্য সমাজের কাজ হলো টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি বড় করে তোলা এবং বিকশিত জীবনের আগ্রহ জাগিয়ে তোলা।

মানুষ পৃথিবীতে আর দশটি প্রাণীর মতো নয়। তাকে বিকশিত জীবনে উত্তীর্ণ হতে হলে সমাজের অনেক রকম দায়বদ্ধতার সম্মুখীন হতে হয়। অনুকূল পরিবেশ ব্যতিরেকে মানুষ মানুষের মতো মার্জিত ও পরিশীলিত হয়ে উঠতে পারে না। মানুষকে বাইরে থেকে ও ভেতর থেকে মানুষ হওয়ার জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করা সমাজের বড় কাজ। তাহলে মানুষ সুন্দর সভ্য সহমর্মী সমাজের সদস্য হয়ে গড়ে উঠবে। এ কাজটি মানুষের জন্য করে দিতে সমাজ অঙ্গীকারাবদ্ধ।

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের প্রেম-সৌন্দর্য বঞ্চিত মানুষের অমানবিক কদর্য চরিত্রের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। মানুষকে মানুষ হওয়ার জন্য সমাজে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়। প্রেম-প্রীতি-স্নেহ-মমতা ইত্যাদি মানবিক গুণ মানুষ সুষ্ঠু-সুস্থ সামাজিক পরিবেশ থেকে লাভ করে। প্রেম-স্নেহবঞ্চিত মানবশিশুকে আকারে মানুষের মতো দেখালেও কখনো কখনো তার ভেতর অন্যরকম হিংস্র পশু জন্ম নেয়।

উদ্দীপকে দেখা যায়, শৈশবে মাতৃহারা, সমাজের আদর-স্নেহ-মমতাবঞ্চিত সিরাজ টাকার বিনিময়ে সব ধরনের অপকর্ম দ্বিধাহীনচিত্তে করে। সমাজ তার ওপর নজর দেয়নি। সমাজ তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করেনি। ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের প্রথমাংশে দেখা যায়, স্বপ্রাণ বুদ্ধি ও জবরদস্তিপ্রিয় মানুষে সংসার তথা সমাজ ভরে ওঠে। তারা সমাজকে এবং সমাজের মানুষকে পদে পদে বিঘ্ন সৃষ্টি করে পেছনে ঠেলে দেয়। তারা অন্যের জীবনের সার্থকতার অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। প্রেম ও সৌন্দর্যবঞ্চিত মানুষ নিষ্ঠুর ও বিকৃতবুদ্ধির হয়। তাদের কাছে ভালো কিছু আশা করা যায় না। এ কথাই উদ্দীপকে একই সুরে ধ্বনিত হয়েছে।

ঘ. প্রেম-সৌন্দর্যবঞ্চিত মানুষ নিষ্ঠুর ও দানব প্রকৃতির হয়। ‘-উক্তিটি যথাযথ।

মানুষকে মানুষে পরিণত হতে হলে সমাজের ভালো মানুষ থেকে তার দেহ-মনে প্রেম ও সৌন্দর্যের স্পর্শ আরোপ করতে হয়। তা না হলে সমাজে আদরবঞ্চিত-অবহেলিত শিশুরা মানুষ নামের অমানুষরূ পে বেড়ে ওঠে। উদ্দীপকেও ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে সে কথারই বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়।

উদ্দীপকের সিরাজ প্রেম-সৌন্দর্যের স্পর্শবঞ্চিত শিশু। জন্মের পর তার মা মারা যায়। সে সমাজের কাছে উপেক্ষার শিকার হয়। টোকাই শিশুদের সাথে বেড়ে ওঠে। কোনোরকম ভালো শিক্ষা সে জীবনে পায়নি। সে টাকার জন্য বোমাবাজি, খুন-খারাবি সবকিছুই দ্বিধাহীনভাবে করতে পারে। সে পেশিশক্তির পূজারি। তার কাছে দয়া-মায়া অনর্থক বিষয়। সে একটি মানবরূপী দানবে পরিণত হয়েছে। ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের প্রথম অংশ বৈশিষ্ট্যপূর্ণভাবে এই মানুষের অমানুষ হয়ে ওঠার দিকটি আলোকপাত করা হয়েছে।

‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের বর্ণনায় মানুষের বেড়ে ওঠার প্রতি সমাজের দায়বদ্ধতার কথা যুক্তিনিষ্ঠ ভাষায় বলা হয়েছে। প্রেম-সৌন্দর্যের স্পর্শবঞ্চিত মানুষরাই নিষ্ঠুর ও বিকৃতবুদ্ধির হয়ে থাকে। তারা দানবের মত আচরণ করে। উদ্দীপকেও এ কথা সাদৃশ্যপূর্ণভাবে ফুটে উঠেছে, তবে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। উদ্দীপকের সিরাজ তার জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি তাই যথাযথ।

সৃজনশীল ৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

মামুন পড়ার টেবিলের পাশের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকায়। সে দেখতে পায় একটি ডালিম গাছ। তাতে লাল লাল ফুলের সমারোহ। এ গাছের চারাটি তিন বছর আগে বৃক্ষমেলা থেকে কিনে এনেছিল। মাত্র কয়েকটি বছরের মধ্যে গাছটি ফুল ফল দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল। মামুন ভাবে গাছটি মাটির রস টেনে, আর বাতাস থেকে শক্তি সপ্তাহ করে নিজেকে বড় করে তুলেছে। সে তো ফল উৎপাদন করে নিজে খাবে না। পাখি খাবে, মানুষে খাবে। গাছটির জন্ম তাহলে অপরের সেবায়, নিজের জন্য নয়। সে নিজের দিকে তাকায়, তার পড়ালেখাও তো নিজের জন্য নয়, অন্যের তথা মানবকল্যাণের জন্য। সে গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে সাধক পুরুষদের, সৃজনশীল শিল্পীদের মানবকল্যাণের কথা ভাবে।

ক. আত্মাকে মধুর ও পুষ্ট করা হয় কার উপভোগের জন্য?

খ. রবীন্দ্রনাথের সাথে মোতাহের হোসেন চৌধুরীর দর্শনের পার্থক্য হওয়ার কারণ কী?

গ. উদ্দীপকের মামুনের সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির যে মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. “উদ্দীপক ও ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের মূল সুর অভিন্ন”-মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

৩ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. স্রষ্টার উপভোগের জন্য।

খ. রবীন্দ্রনাথের সাথে মোতাহের হোসেন চৌধুরীর দর্শনের চেতনাগত দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ জীবনকে নদীর সাথে তুলনা করেছেন। যেখানে ভাঙা-গড়া আছে, উচ্ছলতা আছে। সে ক্ষতিও করে, উপকারও করে। কিন্তু মোতাহের হোসেন চৌধুরী বৃক্ষের কাছে মানবজীবনের সার্থকতা খুঁজে পেয়েছেন। বৃক্ষ শুধুই মঙ্গলের জন্য, অমঙ্গলের জন্য নয়। নদীতে মঙ্গল ও অমঙ্গল এবং আত্মবিসর্জন আছে, আত্ম-উৎকর্ষ নেই, যা বৃক্ষে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। বৃক্ষের মাঝেই মানবজীবনের সার্থকতার পূর্ণাঙ্গ চিত্র খুঁজে পাওয়া সম্ভব। জীবনদৃষ্টির ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ও মোতাহের হোসেন চৌধুরীর মধ্যে তাই দর্শনগত পার্থক্য দেখা যায়।

গ. উদ্দীপকের মামুনের সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির গভীর মিল রয়েছে।

প্রত্যেক ব্যক্তির নিজ দর্শন থাকে। পৃথিবীতে যেমন মানুষের চেহারায় ভিন্নতা রয়েছে অনুভব ও দৃষ্টিভঙ্গির তেমনি পার্থক্য রয়েছে। কখনো কখনো আবার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির মিলও খুঁজে পাওয়া যায়। তদ্র প উদ্দীপকের মামুনের এবং ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের জীবনদৃষ্টির গভীর মিলের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়।

উদ্দীপকের মামুন ডালিম গাছের বেড়ে ওঠা, তাতে ফুল আসা, ফল ধরা ইত্যাদির মধ্যে বৃক্ষের সার্থকতা খুঁজে দেখেছে। তাতে সে দেখতে পেয়েছে বৃক্ষের জীবন তার নিজের জন্য নয়, সবটাই অপরের সেবায় উৎসর্গীকৃত। মামুন নিজের জীবনকেও সেখানে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেছে। মহাপুরুষ, সাধক, সৃজনশীল শিল্পীরা শিল্পকর্ম নিজের জন্য নয়, অন্যের আনন্দের জন্য সৃষ্টি করেন। যেমনটা ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের লেখক জীবনদৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করেছেন। তুলনামূলক রবীন্দ্রদর্শন ও তাঁর ব্যক্তিদর্শনের যুক্তিতর্কের বিচারে বৃক্ষের মধ্যে মানবজীবনের সার্থকতা খুঁজে পেয়েছেন। প্রবন্ধের লেখক ও উদ্দীপকের মামুনের জীবনবোধ ও মানবজীবনের সার্থকতার মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। তাই উদ্দীপকের মামুনের সাথে ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের লেখকের দৃষ্টিভঙ্গির মিল রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপক ও ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের মূলসুর অভিন্ন।”-মন্তব্যটি যথার্থ।

মানবজীবনের সার্থকতা ধেয়ে চলার মধ্যে নয়। নীরব ও গভীর সাধনার মধ্যদিয়ে বেড়ে ওঠা ও নিজেকে পরিশীলিত ও মার্জিত মানুষ হিসেবে অন্য মানুষের সেবায় নিবেদনের মধ্যেই সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। বৃক্ষ যেমন নীরবে স্থির হয়ে শূন্য থেকে আলো-বাতাস, আর মাটি থেকে শক্তি সংগ্রহ করে অপরের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করার মধ্যে তার জীবনের পূর্ণতা খুঁজে পায়, মানবজীবনও তদ্রু প অপরের জন্য। নিজের জন্য মানবের নিজের জীবন ও সাধনা নয়। উদ্দীপক ও ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে এই মূল চেতনার বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করা যায়।

উদ্দীপকের মামুন পড়ার টেবিলের পাশে জানালার ওপারে, ডালিম গাছের মধ্যে সেবা ও জীবনের সার্থকতা দেখতে পেয়েছে। মহামানব ও সৃজনশীল মানুষের সাধনাও তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ নয়, তা শুধুই অপরের সেবায় নিবেদিত, অন্যের কল্যাণে উৎসর্গীকৃত। ডালিম গাছের ফুল-ফল পাখির জন্য মানুষের সেবা বা খাদ্যের জন্য, ডালিম গাছের স্বার্থে নয়। মামুনের লেখাপড়াও তার নিজের জন্য নয়, মহামানবদের মতোই সব মানুষের সাধনা অন্যের উপকারের জন্য নিবেদিত। এই আত্মোউৎসর্গীকৃত সুর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের মধ্যে বাস্তব ও যুক্তিনিষ্ঠ ভাষায় বিস্তৃত পরিসরে ফুটে উঠেছে। উদ্দীপক ও প্রবন্ধের মৌলবাণী ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে মানবজীবনের সার্থকতার কথা যুক্তিনিষ্ঠ ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। বৃক্ষ ক্রমাগত সাধনার মধ্যদিয়ে পূর্ণতা লাভ করে এবং তার এ পূর্ণতা অপরের সেবায় উৎসর্গীকৃত।

উদ্দীপকে মামুনের কথা ও দৃষ্টিতে সে একই জীবনের কল্যাণকামী সার্থকতার কথা একসুরে ধ্বনিত হয়েছে। তাই উদ্দীপক ও ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের মূলসুর অভিন্ন বলাই যুক্তিসঙ্গত।

সৃজনশীল ৪: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

শিল্পী হাশেম খান শিল্পকলার মধ্য দিয়ে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম ও বিশ্বের ভাষা সৃষ্টির মধ্যে ঐক্য খুঁজে ফিরেছেন। বিশ্বচরাচরের সবকিছুই এক সুতোয় বাঁধা, এক সুরে যেন কথা কয় নীরব ভাষায়। আর তা তিনি যেন শিল্পীর দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পেয়েছেন। শিশুদের তিনি খুবই ভালোবাসতেন, সাহিত্য শিল্পকলার সাধনার মধ্যদিয়ে তিনি একটি সুন্দর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর মতে,

মানুষকে উদার প্রেমিক, রুচিশীল মানুষ বানাতে শিল্পকলা চর্চার বিকল্প নেই।

ক. সাধনার ব্যাপারে প্রাপ্তি একটা কেমন জিনিস?

খ. বৃক্ষ যে কেবল বৃদ্ধির ইশারা, তা নয়-প্রশান্তিরও ইঙ্গিত। কেন?

গ. উদ্দীপকটি ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের সাথে কীভাবে বৈসাদৃশ্য?

ঘ. “রুচিশীল মানুষ সৃষ্টিতে শিল্পকলা চর্চার বিকল্প নেই।”-মন্তব্যটি যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন কর।

৪ নং প্রশ্নের উত্তর

ক. সাধনার ব্যাপারে প্রাপ্তি একটা বড় জিনিস।

খ. বৃক্ষ যে কেবল বৃদ্ধির ইশারা, তা নয় প্রশান্তিরও ইঙ্গিত। কারণ বৃক্ষ জীবনের গুরুভার বহন করে অতি শান্ত ও সহিষ্ণুতার সাথে। ধীরচিত্তে জীবনের গুরুদায়িত্ব বহন করতে হয়। অস্থির হয়ে জীবন চালাতে গেলে পদে পদে বিপদ ঘটতে পারে। এ কারণে জীবনের সমস্ত অর্জন ক্রমাগত ধৈর্য ধরে সাধনা দিয়ে জয় করে নিতে হয়। মূলত কেবল বৃক্ষের কাছেই সেই শিক্ষা পাওয়া যায়। সে কারণেই বলা হয়েছে, বৃক্ষ যে কেবল বৃদ্ধির ইশারা, তা নয় প্রশান্তিরও ইঙ্গিত।

গ. জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে মোতাহের হোসেন চৌধুরী মানবজীবনকে তুলনা করেছেন বৃক্ষের সঙ্গে। তিনি দেখিয়েছেন বৃক্ষের বিকাশ, পরিপূর্ণতা ও সার্থকতার পেছনে রয়েছে তার নীরব সাধনা। বৃক্ষ যেমন করে ফুলে ফলে পরিপূর্ণতা পায়, আর সে সব অন্যকে দান করে সার্থকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে, মানবজীবনের সার্থকতার জন্য তার নিজের সাধনাও তেমনি হওয়া উচিত বৃক্ষের মতো।

উদ্দীপকের শিল্পী হাশেম খান শিল্পকলার মধ্যদিয়ে দেশপ্রেম, মানবপ্রেম ও বিশ্বের ভাষা তথা সকল সৃষ্টির মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে ফিরেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে কল্যাণ চিন্তা তাঁর ভেতর জেগে উঠতো। শিলী-খান সাহেব যেহেতু শিল্পকলার লোক, তিনি শিল্পকলার চর্চার মধ্যদিয়ে মানবকল্যাণ ও বিশ্বের কল্যাণ চিন্তা করেছেন।

আর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধের লেখক যেহেতু সাহিত্যিক, তিনি সাহিত্য ও শিল্পকলা উভয়েরই চর্চার মধ্যদিয়ে মানবসমাজকে এবং সভ্যতাকেও মানবিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। উদ্দীপক ও প্রবন্ধের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত সামান্য পার্থক্য দেখা যায়।

ঘ. রুচিশীল মানুষ সৃষ্টিতে শিল্পকলা চর্চার বিকল্প নেই।”-মন্তব্যটি খুবই সঙ্গতিপূর্ণ।

মানুষের সুকুমার বৃত্তির উৎকর্ষ সাধনের জন্য শিল্পকলা চর্চা আবশ্যক। শিল্পকলা চর্চার মধ্যে আনন্দ আছে। সে আনন্দের স্পর্শে একজন মানুষ অনুভূতিশীল, সচেতন ও বিবেকবান হয়ে ওঠার সুযোগ লাভ করে। উদ্দীপকে ও ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে শিল্পকলা চর্চার মধ্যদিয়ে মানবিক উত্তরণের দিকটির কথা অভিন্ন সুরে ফুটে উঠেছে।

উদ্দীপকে দেখা যায়, শিল্পী সুলতান শিল্পকলা চর্চার মাধ্যমে মানুষকে মানবপ্রেম, দেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমিক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বিশ্ব চরাচরের সবকিছুর মধ্যদিয়ে তিনি এক অভিন্ন ঐক্য লক্ষ অর্জন করেছেন। শিশুদের ভালোবাসা দিয়ে চিত্রকলা শিক্ষা দিয়ে রুচিশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে সমাজকল্যাণ ও দেশ সেবার স্বপ্ন দেখেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে মানুষকে উদার, প্রেমিক, রুচিশীল মানুষ বানাতে শিল্পকলা চর্চার বিকল্প নেই। আর ‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে সেই কথাই একটু বিস্তৃত পরিসরে প্রকাশ পেয়েছে। এখানে শিল্পকলার পাশাপাশি সাহিত্য চর্চার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জীবনের সার্থকতার জন্য বৃক্ষের কাছ থেকে সাধনার শিক্ষা নিয়ে সাহিত্য-শিল্পকলার চর্চার মধ্যদিয়ে মার্জিত প্রেমিক ও ধার্মিক মানুষ হিসেবে পরিপূর্ণ মানব হতে উদাত্ত আহ্বানের পাশাপাশি পরিপত্ত্ব মানসিকতা গড়ে তোলার ও স্রষ্টার সৃষ্টি উপভোগের উপাচার হিসেবে উপস্থাপনের কথা বলা হয়েছে।

‘জীবন ও বৃক্ষ’ প্রবন্ধে মানবজীবনের সার্থকতা অর্জনের জন্য বৃক্ষের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে ‘জীবনের গুরুভার বহনের’ কথা বলা হয়েছে। উদ্দীপকেও শিল্পকলা চর্চার বিষয় গুরুত্বের সাথে অভিন্ন সুরে ফুটে উঠেছে। তাই উদ্দীপক ও প্রবন্ধ পর্যালোচনা করে বলা যায়, রুচিশীল মানুষ সৃষ্টিতে শিল্পকলা চর্চার বিকল্প নেই।