নক্ষত্রের জন্ম মৃত্যু কিভাবে হয়? এবং ব্ল্যাক হোল কি?

নক্ষত্রের জন্ম মৃত্যু কিভাবে হয়? এবং ব্ল্যাক হোল কি?

আজকে আমরা জানব নক্ষত্রের জন্ম মৃত্যু কিভাবে ঘটে আর ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে। তাহলে চলো শুরু করা যাক।

প্রথমে আমরা জানব নিউক্লিয়ার ফিউশান সম্পর্কে।

নিউক্লিয়ার ফিউশান কি?

নিউক্লিয়ার ফিউশান বিক্রিয়া সূর্য ও অন্যান্য নক্ষত্রের শক্তির উৎস। এ বিক্রিয়ায় দুইটি হালকা নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে একটি ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে। নতুন নিউক্লিয়াসের ভর হালকা দুইটি নিউক্লিয়াসের সম্মিলিত ভরের চেয়ে কম হয়। ভরের পার্থক্য তৈরি হয় কারণ পার্থক্য পরিমাণ ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। নক্ষত্র সৃষ্টির সময় মহাকর্ষ বলের প্রভাবে হাইড্রোজেন গ্যাসের পিন্ড সংকুচিত হতে থাকে এবং সংকোচনের সাথে সাথে তাপমাত্রাও ক্রমশ বাড়তে থাকে। একসময় হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াস পরস্পরের সাথে যুক্ত হতে থাকে। চারটি হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস মিলে একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং প্রচুর পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়।

নক্ষত্রের জন্ম কিভাবে হয়?

গ্যালাক্সিতে শুধুমাত্র কোটি কোটি তারাই নয়, প্রচুর গ্যাস (হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম) এবং ধূলিও রয়েছে। তারাদের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় এসব গ্যাস এবং ধূলি অবস্থান করে। এ গ্যাস এবং ধূলাময় অঞ্চলকে আণবিক মেঘ বলে। আণবিক মেঘের ভর সূর্যের চেয়ে কয়েকশ হাজার গুণ বেশি হতে পারে। আণবিক মেঘ মহাকর্ষ বলের প্রভাবে ক্রমশ সংকুচিত হতে থাকে এবং সংকোচনের সাথে সাথে মেঘের ঘনত্ব ও তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে। পর্যাপ্ত ঘনত্ব ও তাপমাত্রায় পৌছালে নিউক্লিয় ফিউশান বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রচণ্ড পরিমাণ শক্তি বের হয়, নক্ষত্রটি তাপ ও আলো দেয়া শুরু করে। এভাবেই একটি নক্ষত্রের জন্ম হয়। তেমনই একটি নক্ষত্র সূর্য, যা প্রায় পাঁচ বিলিয়ন (পাঁচশ কোটি) বছর আগে এইভাবে জন্ম নিয়েছিল। নক্ষত্র সৃষ্টি হওয়ার পর যেসব পদার্থ অবশিষ্ট থাকে, সেগুলো থেকে গ্রহের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলো সূর্য সৃষ্টির পর যেসব পদার্থ অবশিষ্ট ছিল, তা থেকে তৈরি।

নক্ষত্রের মৃত্যু কিভাবে হয়?

অধিকাংশ নক্ষত্রের মৃত্যু হতে লক্ষ লক্ষ বছর লাগে। যেসব নক্ষত্র সূর্যের মতো, তাদের হাইড্রোজেন ফুরিয়ে এলে নিউক্লিয়ার ফিউশান চালানোর মতো যখন কোনো জ্বালানি থাকে না, তখন এরা রেড জায়ান্ট বা রক্তিম দৈত্য নামক অতি উজ্জ্বল এবং নিম্ন তাপমাত্রার বড় নক্ষত্রে পরিণত হয়। নক্ষত্রটির বাইরের স্তর আস্তে আস্তে ঝরে পড়ে। তখন একে হোয়াইট ডোয়ার্ফ বা সাদা বামন বলে। এটি আস্তে আস্তে শীতল এবং অদৃশ্য হয়ে যায়। আমাদের সূর্য এমনি করে আরও পাঁচ বিলিয়ন (পাঁচশ কোটি) বছর পর নিষ্প্রভ হয়ে যাবে। 

সূর্যের ভরের চেয়ে আট গুণেরও বেশি ভারী নক্ষত্রগুলো হঠাৎ করেই তাদের জীবন শেষ করে দেয়। ভারী নক্ষত্রগুলোর হাইড্রোজেন জ্বালানি যখন ফুরিয়ে যায়, তখন অন্যান্য জ্বালানি জ্বালিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু এটি মাত্র কয়েক মিলিয়ন বছর কাজ করে। 

তারপর তারা বিশাল এক সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিজেদের জীবন শেষ করে দেয়। এক সপ্তাহ বা তার চেয়ে কিছু বেশি সময় সুপারনোভা তার ছায়াপথের অন্য সব নক্ষত্রের চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে। তারপর এটি খুব দ্রুত বিবর্ণ হয়ে যায়। সুপারনোভা বিস্ফোরণে নক্ষত্রের বাইরের অংশটুকু ছিন্নভিন্ন হয়ে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। একে স্টারডাস্ট বলা হয়। স্টারডাস্ট শেষ পর্যন্ত অন্যান্য নক্ষত্র ও গ্রহ তৈরি করে। আর ভিতরের অংশটুকু মহাকর্ষ বলের প্রচণ্ড আকর্ষণে সংকুচিত হতে হতে ক্ষুদ্র, ঘন বস্তু ব্ল্যাক হোল অথবা নিউট্রন তারকায় পরিণত হয়।

ব্ল্যাক হোল কি?

ব্ল্যাক হোল কি?

মধ্যবিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত বস্তু ব্ল‍্যাক হোল। গ্রহ বা নক্ষত্রের মতো ব্ল্যাক হোলের কোনো পৃষ্ঠ নেই। ব্ল‍্যাক হোলে খুব অল্প জায়গায় বিপুল পরিমাণ ভর পুঞ্জীভূত থাকে। তাই ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষীয় টান তীব্র। এতই তীব্র যে এটি যেকোনো বস্তুকে গ্রাস করে ফেলে। এমনকি আলোও ব্ল‍্যাক হোল থেকে ফিরে আসে না। ব্ল‍্যাক হোল বিভিন্ন আকারের হয়। এদের মধ্যে অনেকগুলো সূর্যের চেয়ে কয়েকগুণ বিশাল। মিল্কিওয়েসহ বেশিরভাগ গ্যালাক্সির কেন্দ্রে বিশাল ব্ল‍্যাক হোল রয়েছে। এগুলো আমাদের সূর্যের চেয়ে লক্ষ লক্ষ বা বিলিয়ন গুণ ভারী হতে পারে।