পবিত্র শবে মেরাজ কখন? জেনে নিন শবে মেরাজের ফজিলত ও নামাজ

পবিত্র শবে মেরাজ কখন? জেনে নিন শবে মেরাজের ফজিলত ও নামাজ

শবে মেরাজ, যা লাইলাতুল মেরাজ নামেও পরিচিত, ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত।

এই রাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ তাআলার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়।

শবে মেরাজ ২০২৫ সালে কবে?

ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, শবে মেরাজ পালিত হয় ২৭ রজব রাতে। ২০২৫ সালে ২৭ রজব পড়েছে ২৭ জানুয়ারি, সোমবার।

তবে চাঁদের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে তারিখ একদিন আগে বা পরে হতে পারে। বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশন বা স্থানীয় মসজিদের মাধ্যমে সঠিক তারিখ নিশ্চিত করা উচিত।

মেরাজের ঘটনা

মেরাজ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্বগমন। মহানবী (সা.)-এর জীবনের অন্যতম অলৌকিক ঘটনা হলো মেরাজ। এই রাতে তিনি মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে বোরাক নামক বিশেষ বাহনে যাত্রা করে বায়তুল মোকাদ্দাস (মসজিদুল আকসা) পৌঁছান।

সেখানে তিনি পূর্ববর্তী নবীদের সাথে মিলিত হন এবং তাদের ইমামতি করেন। এরপর তিনি ঊর্ধ্বাকাশে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত ভ্রমণ করেন এবং আল্লাহ তাআলার সাথে সাক্ষাৎ করেন।

এই সফরে জান্নাত ও জাহান্নাম পরিদর্শন করেন এবং বিভিন্ন নিদর্শন অবলোকন করেন। মেরাজের এই ঘটনা কুরআনের সুরা বনী ইসরাইলের প্রথম আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে।

শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং বিশেষ আমল

শবে মেরাজ ইসলাম ধর্মের এক বিশেষ রাত, যাকে লাইলাতুল মেরাজ বলা হয়। এই রাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নির্দেশে বোরাক নামক বাহনে চড়ে মিরাজে গমন করেন এবং সেখানে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন।

এই রাতের বিশেষ গুরুত্ব হলো, এখানেই উম্মতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়। শবে মেরাজ উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন এবং নফল নামাজ ও রোজা পালন করেন।

শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

শরিয়তে শবে মেরাজ উপলক্ষে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদতের কথা উল্লেখ নেই। তবে ইসলামিক স্কলারগণ বলেন, এই রাত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ইসলামের অন্যতম অলৌকিক রাতগুলোর মধ্যে একটি।

অনেক মুসলমান এই রাতে বিশেষ ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন, যেমন—

মসজিদে ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিল: বিভিন্ন মসজিদ ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে ওয়াজ মাহফিল, জিকির-আজকার ও দোয়ার আয়োজন করা হয়।
নফল রোজা রাখা: শবে মেরাজের পরদিন নফল রোজা পালন করা অনেকেই পছন্দ করেন। যদিও এটি ফরজ নয়, তবে নফল রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
তাসবীহ-তাহলীল পাঠ: আল্লাহর জিকির, দোয়া ও কুরআন তেলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

রজব মাসের গুরুত্ব
শবে মেরাজ যে মাসে সংঘটিত হয়, সেই রজব মাস ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, এই মাস থেকে রাসুল (সা.) রমজানের প্রস্তুতি শুরু করতেন।

উম্মে সালমা (রা.) বলেন—
“নবী করিম (সা.) রমজান মাস ছাড়া সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করতেন শাবান মাসে, অতঃপর রজব মাসে।”

আয়েশা (রা.) বলেন—
“যখন রজব মাস আসত, তা আমরা নবীজি (সা.)-এর আমলের আধিক্য দেখে বুঝতে পারতাম।”

তাই এই মাসে ইবাদত-বন্দেগি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ।

শবে মেরাজের নামাজ পড়ার নিয়ম

শবে মেরাজের রাতে নফল নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। তবে এটি ফরজ নয়, বরং স্বেচ্ছায় আদায় করা হয়।

নামাজের নিয়ম:
✅ দুই রাকাতের নিয়তে কমপক্ষে ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করা উত্তম।
✅ এছাড়া কেউ চাইলে ২, ৪, ৬, ৮ বা ১০ রাকাত নফল নামাজ পড়তে পারেন।
নিয়ত: অন্যান্য নফল নামাজের মতোই নামাজের নিয়ত করবেন—
“নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাক’আতাইনি নাফলান” (অর্থ: আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করছি)।
✅ এশার নামাজের পর তিন রাকাত বিতির নামাজ আদায় করবেন, তবে সকল নফল নামাজের পর বিতির নামাজ পড়তে হবে।

শবে মেরাজের নামাজের নিয়ত

শবে মেরাজের রাতে নির্দিষ্ট কোনো নামাজের নিয়ত নেই। তবে, কেউ যদি নফল নামাজ আদায় করতে চান, তাহলে সাধারণ নফল নামাজের নিয়ত করতে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ: “নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাক’আতাইনি নাফলান” অর্থাৎ “আমি আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করছি”।

শবে মেরাজের রোজা

শবে মেরাজের পরদিন রোজা রাখার বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। তবে, কেউ চাইলে নফল রোজা রাখতে পারেন। ইসলামে নফল রোজার জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন বাধ্যতামূলক নয়, তাই ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনুযায়ী রোজা রাখা যেতে পারে।

শবে মেরাজ ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা আমাদের নামাজের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়। এই রাতে ইবাদত-বন্দেগি করা যেতে পারে, তবে তা বাধ্যতামূলক নয়।

আমাদের উচিত এই রাতের মূল বার্তা উপলব্ধি করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা।