ভূমিকম্প কাকে বলে? What is an Earthquake?
খুব অল্প সময় কয়েক সেকেন্ড থেকে সর্বোচ্চ কয়েক মিনিট মাটি বা ভূমি কেঁপে ওঠার ঘটনাকে আমরা ভূমিকম্প বা Earthquake বলি।
ভূমিকম্প কেন হয়?
সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়- ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়ার কারণে ও শিলাচ্যুতিজনিত কারণে।
ভূমিকম্প হচ্ছে ভূমির কম্পন। ভূ অভ্যন্তরে যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে তখন ভূমি কম্পন হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠের অংশ বিশেষের হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তনই ভূমিকম্প।
ভূমিকম্প মাপার যন্ত্রের নাম কি?
ভূমিকম্প মাপার যন্ত্রের নাম ” সিসমোগ্রাফ “
ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ধারণের জন্য বিশ্বজুড়ে বহুল ব্যবহৃত স্কেলের নাম রিখটার স্কেল। সিসমোগ্রাফ থেকে পাওয়া তথ্য এবং রেখাচিত্র বিশ্লেষণ করে গাণিতিকভাবে ভূমিকম্পকে মাপা হয় রিখটার স্কেলের মাধ্যমে। রিখটার স্কেলে ০ থেকে ১০ মাত্রা পর্যন্ত মাপা যায় ভূমিকম্পের তীব্রতাকে।
ভূমিকম্পের পরিমাপ
যখন ভূমিকম্প হয়, তখন মনে হয় সেটি বুঝি ঠিক পায়ের নিচে ঘটছে। প্রকৃতপক্ষে বেশির ভাগ সময় সেটি কয়েকশত কিলোমিটার কিংবা আরো দূরে কোথাও ঘটে এবং তার কম্পনটি আমরা অনুভব করি। ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে কতদূরে মাটি কতটুকু কাঁপে তার পরিমাণ থেকে ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এ সহজ এবং প্রচলিত পদ্ধতির নাম রিখটার স্কেল। ১৯৩৫ সালে আমেরিকান ভূতত্ত্ববিদ চার্লস এফ, রিখটার এর প্রবর্তন করেন। আমরা যদি ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে থাকি এবং সেখানে ইসে ভূমিকম্প চলাকালীন আনুমানিক ১০০ মিমি (বা ১০ সেন্টিমিটার) বিস্তৃত কম্পন অনুভব করি, তাহলে সেটাকে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প বলা হয়। যে যন্ত্র দিয়ে দিয়ে ভূ-কম্পনের মাত্রা মাপা ও রেকর্ড করা হয় সেটিকে সিসমোগ্রাফ বলে।
রিখটার স্কেলে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে মাঝারি (Moderate) ভূমিকম্প। এর থেকে কম মাত্রার ভূমিকম্প হলে সেভাবে অনুভব করা যায় না। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প ১ মাত্রা বেড়ে গেলে কম্পন ১০ গুণ বেড়ে যায় কাজেই ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের কম্পন ৫ মাত্রার কম্পন থেকে ১০ গুণ বেশি এবং সেটি বড় (Strong) ভূমিকম্প। আবার ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের চাইতেও ১০ গুণ বেশি কম্পন হয় কাজেই সেটি গুরুতর (Major) ভূমিকম্প।
৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ৭ মাত্রা থেকে ১০ গুণ বেশি কম্পন হয়, কাজেই সেটাকে বিশাল অথবা ভয়াবহ (Great) ভূমিকম্প বলা যায়। পৃথিবীতে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের উদাহরণ খুব বেশি নেই।
আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্পকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- অগভীর, মধ্যবর্তী ও গভীর ভূমিকম্প।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী ও ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নেওয়া না থাকার কারণে ২০১০ সালে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে হাইতিতে তিন লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল।
আবার, ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে পুরো জনসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অনেক উদাহরণ থাকলেও ভূমিকম্পের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে রাখার কারণে ২০১৪ সালে চিলিতে মাত্র ছয়জন লোক মারা গিয়েছিল।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে আমরা যত দূরে থাকব আমরা তত কম কম্পন অনুভব করব। উদাহরণস্বরূপ ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্প ১০০ কিলোমিটার থেকে যতটুকু কম্পন পাওয়া যায়, ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের বেলায় ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে থেকে সেই একই পরিমাণ কম্পন অনুভব করা যাবে।
ভূমিকম্প কীভাবে পরিমাপ করা হয়।
আমেরিকান বিজ্ঞানী সি. আর রিখটার ১৯৩৫ সালে ভূমিকম্পের তীব্রতা নির্ণয়ের জন্য যে স্কেল প্রবর্তন করেন, তা রিখটার স্কেল হিসেবে খ্যাত।
রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মান নিম্নরূপ-
ক্রম নং | রিখটার স্কেলের মান | তীব্রতার মাত্রা |
১ | ৩ এর কম | অতি মৃদু |
২ | ৩ – ৩.৯ | মৃদু |
৩ | ৪ – ৪.৯ | হালকা |
৪ | ৫ – ৫.৯ | মধ্যম |
৫ | ৬ – ৬.৯ | শক্তিশালী |
৬ | ৭ – ৭.৯ | প্রবল |
৭ | ৮ + | ভয়াবহ |
ভূমিকম্পের সময় কি করবেন?
- কোন ফাকা ও উম্মুক্ত স্থানে আশ্রয় নিন।
- কখনোই লিফট দিয়ে নামার চেষ্টা করা যাবে না।
- কাচের জানালা থেকে দূরে থাকতে হবে।
- দেয়ালের পাশে বা প্রয়োজনে শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
- ইলেকট্রিক পোল কিংবা বড় বিল্ডিং থেকে দূরে সরে যেতে হবে।
- ম্যাচ জ্বালানো যাবে না, গ্যাস পাইপ ভেঙে বাতাসে গ্যাসের মিশ্রণ আগুনের জন্যে খুবই বিপজ্জনক।
- ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে গাড়ি খোলা জায়গায় থামিয়ে গাড়িতেই থাকুন।
- একবার ভূমিকম্পের পরপরই আরেকটা ছোট ভূমিকম্প হয়, যাকে ‘আফটার শক’ বলে। তাই নিজেকে বিপদমুক্ত রাখতে কিছুটা সময় নিয়ে অপেক্ষা করুন।
- জরুরি প্রয়োজনের জন্য ফায়ার সার্ভিসের মোবাইল নম্ব্র হাতের নাগালে রাখুন।