এই পোস্টে আমরা জানব বজ্রপাত সম্পর্কে। চলো জেনে নেওয়া যাক বজ্রপাত কাকে বলে ও কেন হয়?
বজ্রপাত কাকে বলে?
সাধারণত বজ্রপাত (Lightning) বলতে আলোর ঝলকানিকে বোঝায়। বজ্রপাত শব্দের অর্থ ভূ-পৃষ্ঠে বজ্র পড়া বা বাজ পড়া। বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক ঘটনা।
তড়িতাহিত মেঘে যদি তড়িতের পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে তা তড়িৎক্ষণের মাধ্যমে পৃথিবীতে চলে আসে। একে বজ্রপাত বলে
বজ্রপাত কেন হয়? what causes thunder and lightning?
ভূ-পৃষ্ঠের পানি যখন বাষ্প হয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে তখন মেঘের নিচের দিকে ভারী অংশের সাথে জলীয়বাষ্পের সংঘর্ষ হয়। এর ফলে অনেক জলকণা ইলেকট্রন ত্যাগ কৃত হয়ে ধনাত্মক চার্জ এ পরিণত হয় এবং অনেক জলকণা সে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক চার্জে পরিণত হয়। এ চার্জিত জলীয় বাষ্প মেঘে পরিণত হলে মেঘে বিপুল পরিমাণ স্থির তড়িৎ উৎপন্ন হয়। এ সময় অপেক্ষাকৃত হালকা ধনাত্মক আধান মেঘের উপরে এবং অপেক্ষাকৃত ভারী ঋণাত্মক চার্জ নিচে অবস্থান করে। মেঘে এই ২ বিপরীত চার্জের পরিমাণ যথেষ্ট হলে ডিসচার্জ(ইলেকট্রনের আদান-প্রদান) প্রক্রিয়া শুরু হয়। ডিসচার্জিং এর ফলে বাতাসের মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক স্পার্ক প্রবাহিত হয়। এ বৈদ্যুতিক স্পার্ক এর প্রবাহই ‘বজ্রপাত’। কিন্তু সব বজ্র ভূপৃষ্ঠে পড়ে না। শুধু ক্লাউড টু গ্রাউন্ড ডিসচার্জিং এর ফলে সৃষ্ট বজ্রই ভূপৃষ্ঠে পড়ে। বজ্রপাতের সময় বৃষ্টির ফলে মাটিতে NO3+ মুলকের পরিমান বৃদ্ধি পাই।
বজ্রপাতের সময় আলো ও শব্দ হওয়ার কারণ
যখন বজ্রপাত হয়, তখন আমরা দেখতে পাই বিকট এক শব্দ এবং আলো ছড়িয়ে পরে চারপাশে। এবং যে আলো দেখি তা মূলত এই সংকীর্ণ চ্যানেলের আয়নিত পরমাণু থেকে বিকিরিত তীব্র আলো। এই সংকীর্ণ, আয়নযুক্ত এবং বৈদ্যুতিকভাবে পরিবাহী চ্যানেলগুলি নির্মাণের সময়, বাতাসের তাপমাত্রা প্রায় 26,000 – 28000 ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এবং চাপ প্রায় 10-100 গুণ বেড়ে যায়। কিন্তু এই পুরো ব্যাপারটি ঘটে ন্যানো সেকেন্ডে বা সেকেন্ডের হাজার ভাগের এক ভাগে। এই পরিবর্তন উচ্চ গতিতে বিস্ফোরণের মতো চারপাশের বায়ু প্রসারিত করে। ফলে এটি উচ্চ আওয়াজ তৈরি করে। এই শব্দটি আমরা বজ্রপাতের শব্দ হিসেবে শুনি।
বজ্রপাতের সময় ৩০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সৃষ্টি হয়। যা সহজে কোন বস্তুকে জ্বালিয়ে দিতে পারে।
কোথায় বেশি বজ্রপাত হয়?
বজ্রপাতের দেশ বলা হয় ভুটানকে। ভুটান পূর্ব হিমালয়ের একটি দেশ। ভুটানের ভূপ্রকৃতি অত্যন্ত পাহাড় দ্বারা আবদ্ধ। এই পাহাড় গুলোর উচ্চতা ৮,০০০ মিটার পর্যন্ত। এই পাহাড়গুলির কারণে ভুটানে প্রচুর পরিমাণে বজ্রপাত হয়। ভুটানে প্রতি বছর গড়ে ৩০০ দিন বজ্রপাত হয়। এর কারণে ভুটানে প্রতি বছর প্রায় ১০০ জনের বেশি মানুষ মারা যায়।
তবে আরো একটি তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় ভেনেজুয়েলার মারাকাইবো হ্রদে। এইখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে 230 টি গড়ে বজ্রপাত হয়ে থাকে।
এছাড়া সবচেয়ে দ্রুত পরপর অনেকবার বজ্রপাত হয় আফ্রিকার কঙ্গোতে, কিফুকা গ্রামের আশপাশের পাহাড়ি এলাকায়। এই অঞ্চলে বছরে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১৫৮টি করে বজ্রপাত হয়।
প্রতি বছর বজ্রপাতে প্রায় ১৫০ জন মানুষ মারা যায়। তাই আমরা নিজেদের এই বিপদজনক বজ্রপাত থেকে নিজেকে বাচিয়ে রাখার চেষ্টা করব।
বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়
- খোলা জায়গায় না দাঁড়িয়ে কোন পাকা দালানের নচে আশ্রয় নিতে হবে।
- বৈদ্যুতিক লাইন থেকে দূরে থাকুন।
- জানালা থেকে দূরে অবস্থান করুন।
- ইলেকট্রনিক পণ্য যেমন, টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি প্লাগ খুলে রাখুন। এবং টিভি ফ্রিজ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন
- বজ্রপাতের সময় রাস্তায় পানি থাকলে নিজেকে যতটুকু সম্ভব পানি থেকে দূরে রাকুন।
- বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে থাকা বিপদজনক।
- বৈদ্যুতিক খুঁটি বা ধাতব পদার্থ মোবাইল টাওয়ার থেকে দূরে থাকুন।