এই পোস্টে আমরা জানবো ৭ম শ্রেনীর বিষয় বাংলা এর তৃতীয় অধ্যায়, অর্থ বুঝে বাক্য লিখি সম্পর্কে।
১ম পরিচ্ছেদ
শ্রেণি অনুযায়ী শব্দ আলাদা করি
নিচের নমুনা থেকে বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া, ক্রিয়াবিশেষণ, অনুসর্গ, যোজক ও আবেগ-এই আট শ্রেণির শব্দ চিহ্নিত করো :
নমুনা উত্তর: অনুচ্ছেদটিতে ব্যবহৃত শব্দের শ্রেণি আলাদা করে দেখানো হলো:
বিশেষ্য | বাংলাদেশ, জেলা, কক্সবাজার, পর্যটক, পৃথিবী, সমুদ্র-সৈকত, সৌন্দর্য, মানুষ, আনন্দ, বালি, ঘর, ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স, ইস্ট ইন্ডিয়া। কোম্পানি, অফিসার, পালংকি, পরিচালক, প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, মোটেল, হোটেল, দোকান, জিনিসপত্র, হিমছড়ি পর্যটন কেন্দ্র, পাহাড়। |
সর্বনাম | এর, তাদের, কেউ কেউ, তারা, তাঁর, যার। |
বিশেষণ | সবচেয়ে, আকর্ষণীয়, একজন, ছোটো-বড়ো, বাহারি, সুন্দর, রোমাঞ্চকর, বৈচিত্র্যময়। |
ক্রিয়া | আছড়ে পড়ে, এসেছে, ছিলেন, ছিল, নিযুক্ত হন, করা হয়, দেওয়া হয়, গড়ে উঠেছে, নির্মাণ করেছে, তৈরি হয়েছে, আছে, পাওয়া যায়, রয়েছে, বেড়াতে যায়। |
ক্রিয়াবিশেষণ | জোরে জোরে, আনন্দে, প্রতিদিন। |
অনুসর্গ | দিয়ে, থেকে, আগে, করে, কাছে, জন্য। |
যোজক | আর, তবু, এছাড়া, ও, কি। |
আবেগ | বাহ, আহা। |
শ্রেণি অনুযায়ী বাক্য আলাদা করি
নিচের নমুনা থেকে বিবৃতিবাচক, প্রশ্নবাচক, অনুজ্ঞাবাচক ও আবেগবাচক-এই চার রকমের বাক্য চিহ্নিত করো।
নমুনা উত্তর: শ্রেণি অনুযায়ী বাক্য আলাদা করি:
বিবৃতিবাচক বাক্য | বিকাল সাড়ে চারটায় সবার মাঠে আসার কথা। আজ কোনো খেলা হবে না, জরুরি সভা হবে। ইমনদের পুরোনো ভিটায় একটা পোড়োবাড়ি আছে। সেখানে কয়েকদিন ধরে কিছু অপরিচিত লোকের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। কামাল বলছিল, ‘ওখানে গুপ্তধন থাকতে পারে।’ আসলেই কোনো গুপ্তধন আছে কি না, তা যাচাই করার জন্য অভিযানের প্রস্তাব দিয়েছিল কামাল। ইমনদের পোড়োবাড়িতে কবে এবং কীভাবে অভিযান চালানো হবে, তা নিয়ে আলোচনার জন্যই আজকের সভা। আমার অবশ্য খানিক ভয় ভয় করছে। তাছাড়া লোকগুলো হয়তো গুপ্তধন খুঁজতে আসেনি, অন্য কাজে এসেছে। তবু সেখানে যেতে আমার ভয় করবে। দিনের বেলাতেও বাড়ির ভেতরটা অন্ধকার হয়ে থাকে। সেখানে এমনিতেই সহজে কেউ ঢুকতে চায় না। |
প্রশ্নবাচক বাক্য | কী রে ইমন, ওই বাড়িতে গুপ্তধন আছে নাকি? তবে ঠিক তারা প্রশ্ন করবে, ‘এখানে কী করছ তোমরা?’ তখন আমরা কী উত্তর দেবো? |
অনুজ্ঞাবাচক বাক্য | ‘চল, আমরাই খোঁজ করে দেখি। গুপ্তধন থাকলে ঠিক খুঁজে পাব।এখানে আর আসবে না। যাও, চলে যাও। |
আবেগবাচক বাক্য | তাই নাকি! আমি তো জানি না।’ অপরিচিত লোকগুলো যদি ঠিক গুপ্তধন খুঁজতে আসে! যদি আমাদের সাথে ওদের দেখা হয়ে যায়ঃ যে পুরোনো বাড়ি! বাড়ির চারপাশে কত বড়ো বড়ো গাছ! |
২য় পরিচ্ছেদ
নমুনা – ১
শব্দের গঠন
অনুচ্ছেদটি ভালোভাবে পড়ো। এখানে দুটি অর্থযুক্ত শব্দ জোড়া দিয়ে তৈরি বেশকিছু নতুন শব্দ রয়েছে। শব্দগুলো আলাদা করে লেখো।
নমুনা উত্তর: দুটি অর্থযুক্ত শব্দ জোড়া দিয়ে তৈরি নতুন শব্দ
রেলগাড়ি, রেললাইন, দেশে-বিদেশে, যানবাহন, জনপ্রিয়, ছেলেবুড়ো, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত, কুঁড়েঘর, ধানখেত, নীলাকাশ, ডিমসিদ্ধ, ঝালমুড়ি, চিড়াভাজা, পত্র-পত্রিকা, একতারা, পল্লিগীতি, হাততালি, রেল-ভ্রমণ।
সমাস-সাধিত শব্দ বানাই
নিচে বাম কলামে কিছু শব্দ দেওয়া আছে, ডান কলামেও কিছু শব্দ দেওয়া আছে। দুটি কলামের শব্দ মিলিয়ে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করো। যেমন: বাম কলাম থেকে ‘ফুল’ আর ডান কলাম থেকে ‘বাগান’ নিয়ে ‘ফুলবাগান’ শব্দটি তৈরি করতে পারো।
নমুনা উত্তর: দুটি অর্থযুক্ত শব্দ জোড়া দিয়ে তৈরি নতুন শব্দ।
ফুলবাগান, ফুলগাছ, ফলগাছ, গোলাপবাগান, গোলাপজল, গোলাপগাছ, জীবজগৎ, প্রাণিবিজ্ঞান, বইঘর, বই-খাতা, বই-পুস্তক, পাঠ্যপুস্তক, পাঠ্যবই, ঠেলাগাড়ি, সবজিবাগান, আলুভর্তা।
কোনো একটি বিষয় নিয়ে ১০০ শব্দের মধ্যে একটি অনুচ্ছেদ লেখো। লেখা হয়ে গেলে সমাস প্রক্রিয়ায় গঠিত শব্দগুলোর নিচে দাগ দাও।
নমুনা উত্তর: সুর করে গাওয়া কথাকে গান বলে। গানের মধ্যে বিশেষ কোনো আবেগ বা অনুভূতি প্রকাশ পায়। গানের কথা যাঁরা লেখেন, তাঁদের বলা হয় গীতিকার। গীতিকাররা গানের কথাকে কবিতার মতো করে লেখেন। এই কথা অনুযায়ী গানের নানা রকম নাম হয়, যেমন: পল্লিগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত ইত্যাদি। গানের কথায় নানা রকম সুর থাকে। সুর হলো কন্ঠস্বরের ওঠা-নামা। সুরের এককের নাম স্বর। এই স্বর মূলত সাতটি: সা রে গা মা পা ধা নি। যাঁরা গানে সুর দেন, তাদের বলে সুরকার।
গানে নানা রকম তাল থাকে। গানের সুর ও তাল ঠিক রাখার জন্য অনেক রকম বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়, যেমন: হারমোনিয়াম, তবলা, একতারা, তানপুরা, গিটার ইত্যাদি। যাঁরা বাদ্যযন্ত্র বাজান, তাঁদের বলা হয় বাদক বা যন্ত্রশিল্পী।
গানের কথা, সুর ও তাল মেনে যিনি গান পরিবেশন করেন, তাঁকে বলা হয় গায়ক বা শিল্পী।
নমুনা – ২
কোনো কোনো শব্দের প্রথম অংশের নির্দিষ্ট কোনো অর্থ নেই, কিন্তু দ্বিতীয় অংশের অর্থ আছে। তার মানে, অর্থযুক্ত শব্দের আগে অর্থহীন অংশ জোড়া দিয়েও নতুন শব্দ তৈরি হতে পারে। নিচের অনুচ্ছেদটি থেকে এরকম শব্দ খুঁজে বের করো এবং নিচের খালি জায়গায় লেখো।
নমুনা উত্তর: অর্থযুক্ত শব্দের আগে অর্থহীন অংশ জোড়া দিয়ে তৈরি নতুন শব্দ খুঁজে বের করা হলো:
উপহার, প্রতিদিন, বিশেষ, নিঃসন্দেহ, নিখাদ, অচেনা, অজানা, পরাজয়, প্রতিযোগিতা, অবস্থান, সুকীর্তি, অবদান, সম্মান, উপভোগ, আজীবন।
উপসর্গ দিয়ে শব্দ বানাই
নিচে বাম কলামে কিছু উপসর্গ দেওয়া আছে, আর ডান কলামে কিছু শব্দ দেওয়া আছে। ডান কলামের শব্দের আগে বাম কলামের উপসর্গ মিলিয়ে নতুন নতুন শব্দ তৈরি করো। যেমন: বাম কলাম থেকে ‘বি’ আর ডান কলাম থেকে ‘শেষ’ নিয়ে ‘বিশেষ’ শব্দটি তৈরি করতে পারো।
নমুনা উত্তর: উপসর্গ দিয়ে শব্দ:
বিফল, সফল, কুফল, সুফল, বিজয়, অজয়, পরাজয়, সুযোগ, উপযোগ, বেখেয়াল, বিকাল, সকাল, অকাল, আকাল, বেজন্ম, আজন্ম, বিকার, বেকার, আকার, প্রকার, উপকার, উপগ্রহ, বিশেষ, অশেষ, আবৃত্তি, প্রবৃত্তি, উপবৃত্তি।
অনুচ্ছেদ লিখে উপসর্গ-সাধিত শব্দ খুঁজি
কোনো একটি বিষয় নিয়ে ১০০ শব্দের মধ্যে একটি অনুচ্ছেদ লেখো। লেখা হয়ে গেলে উপসর্গের মাধ্যমে গঠিত শব্দগুলোর নিচে দাগ দাও।
নমুনা উত্তর: এ বছর অনাবৃষ্টিতে কাঞ্চনপুর গ্রামের ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। যদিও গ্রামের অভিজাত লোকেরা এ অভাব টের পায়নি কিন্তু অসহায় দরিদ্র অনেক মানুষ ক্ষুধার তাড়নায় বিপথে চলে গেছে। যার ফলে এলাকায় অপকর্ম বেড়ে গিয়েছে। আবার অনেক মানুষ যারা একবেলাও ঠিকমতো খেতে পায় না তারা সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও বিপথগামী হয়নি। তারা বিশ্বাস করে পরিশ্রম করে সুদিন ফিরিয়ে আনা যায়। তাই তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পরিশ্রম করে। তারা জানে এই পরিশ্রমের সুফল তারা অবশ্যই পাবে। এবং সেই সফলতা খুব দূরে নয়।
নমুনা – ৩
কোনো কোনো শব্দের প্রথম অংশ অর্থপূর্ণ কিন্তু দ্বিতীয় অংশ অর্থহীন। তার মানে, অর্থপূর্ণ শব্দের পরে অর্থহীন অংশ জোড়া দিয়ে নতুন শব্দ তৈরি হতে পারে। নিচের অনুচ্ছেদটি থেকে এ রকম শব্দ খুঁজে বের করো এবং ছকে লেখো।
নমুনা উত্তর: খেলার, চানাচুরওয়ালাকে, রঙিন, হাতা, মানানসই, ছাত্রীরা, ভাঙা, খেলনা, দামি, মধুর, হাসি, বুদ্ধিমান, সরলতা।
প্রত্যয় দিয়ে শব্দ বানাই
নমুনা উত্তর: প্রত্যয় দিয়ে গঠিত শব্দ–
ঢাকাই, ফুলদানি, ফুলওয়ালা, করা, করণীয়, দয়াবান, কলমদানি, দরিদ্রতা, গুরুত্ব, বুদ্ধিমান, চলা, চলনসই, চলমান, পাহারাদার।
কোনো একটি বিষয় নিয়ে ১০০ শব্দের মধ্যে একটি অনুচ্ছেদ লেখো। লেখা হয়ে গেলে প্রত্যয়ের মাধ্যমে গঠিত শব্দগুলোর নিচে দাগ দাও
নমুনা উত্তর: একদিন বাবা বলছিলেন, শৈশবে তার দোলনায় দুলতে ভীষণ ভালো লাগত। আমাদের বাড়ির উত্তর দিকে না কি একটি বিরাট তেঁতুলগাছ ছিল, সেই গাছেরই একটি ভালে দাদু বাবার জন্য দোলনা বেঁধে দিয়েছিলেন। বাবার প্রিয় খেলনা ছিল একটি কাঠের ঘোড়া। বাড়ির সামনের ফসলের খেতে চাষি নানা রকম ফসল ফলাতেন, বাবা সেসব মুগ্ধ হয়ে দেখতেন। জগতের সকল প্রাণীকে বাবা ভালোবাসলেও তার প্রিয় প্রাণী ছিল বাঘা নামের একটি বিড়াল। বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে গাড়োয়ান যখন গান গাইতে গাইতে যেত বাবা তখন একছুটে রাস্তার ধারে এসে দাঁড়াতেন। বাবা নিজেও খুব ভালো গান গাইতে পারেন। বাবার শৈশবের গল্প শুনতে আমার অনেক ভালো লাগে কিন্তু আমার শৈশবের সঙ্গে বাবার শৈশবের খুব একটি মিল নেই ভেবে মন খারাপও হয়।
৩য় পরিচ্ছেদ
শব্দের অর্থ
অর্থ বুঝে বাক্য লিখি
নিচের শব্দগুলো ব্যবহার করে মুখ্য অর্থ এবং এক বা একাধিক গৌণ অর্থের প্রয়োগ দেখাও।
নমুনা উত্তর:
১. পাকা | মুখ্য অর্থ গৌণ অর্থ ১ গৌণ অর্থ ২ | পরিপক্ক হওয়া ইট বা পাথরের তৈরি স্থায়ী | (মা আমাকে দুইটি পাকা কলা দিয়েছেন।) (পিয়াস ভাই একটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন।) (এ কাপড়ের রং পাকা।) |
২. ধরা | মুখ্য অর্থ গৌণ অর্থ ১ গৌণ অর্থ ২ | ধারণ করা যন্ত্রণা বোধ করা আরম্ভ করা | (এ ব্যাগে অনেক কাপড় ধরবে।) (মালিহার মাথা ধরেছে, ও আজ স্কুলে যাবে না।) ( আমাদের অনুরোধে সোহান আনসারী গান ধরল।) |
৩. কথা | মুখ্য অর্থ গৌণ অর্থ ১ গৌণ অর্থ ২ | উক্তি প্রতিশ্রুতি তর্ক | (হিরণ স্যারের কথা শুনে আমার ভালো লাগলো।) (পিউ কথা দিয়ে কথা রাখতে জানে।) (তিথির সঙ্গে কথায় পেরে ওঠা মুশকিল।) |
৪. বড়ো | মুখ্য অর্থ গৌণ অর্থ ১ গৌণ অর্থ ২ | বৃহৎ উদার চিৎকার করে | (রাস্তার ধারে একটা বড়ো আমগাছ আছে।) (মাহাদী বড়ো মনের মানুষ।) (চুরি করার পরও সে বড়ো গলায় কথা বলছে।) |
৫. মুখ | মুখ্য অর্থ গৌণ অর্থ ১ গৌণ অর্থ ২ | প্রত্যঙ্গ কথা সম্মান | (হাবিবার মুখে হাসি লেগেই আছে।) (এবার কাকলির মুখ ছুটেছে।) (মেয়েটা বংশের মুখ রেখেছে।) |
৬. পাগল | মুখ্য অর্থ গৌণ অর্থ ১ গৌণ অর্থ ২ | মানসিক ভারসাম্যহীন অস্থির বিমুগ্ধ/বিমোহিত | (বড়ো ছেলে মারা যাওয়ার পর তিনি পাগল হয়ে গেছেন।) ( প্রচণ্ড গরমে সবার পাগল পাগল অবস্থা!) ( তার গান শুনে পাগল হয়ে গেলাম।) |
প্রতিশব্দ
উপরের ছক থেকে একই রকম অর্থ প্রকাশ করে এমন শব্দগুলো আলাদা করো। একটি নমুনা করে দেখানো হলো।
নমুনা উত্তর: একই রকম অর্থ প্রকাশ করে এমন শব্দ
১. অন্ধকার, আঁধার, তিমির
২. দুঃখ, যন্ত্রণা, কষ্ট
৩. গাছ, তরু, বৃক্ষ
৪. পাড়, কুল, তীর
৫. মন্দ, খারাপ, নিকৃষ্ট
৬. চন্দ্র, চাঁদ, শশী
৭. পাথর, শিলা, প্রস্তর
৮. চুল, চিকুর, অলক
৯. ঘোড়া, ঘোটক, অশ্ব
১০. তরঙ্গ, ঢেউ, উর্মি
প্রতিশব্দ বসিয়ে আবার লিখি
নিচের অনুচ্ছেদটি পড়ো। এরপর এখানকার অন্তত দশটি শব্দের বদল ঘটিয়ে অনুচ্ছেদটি লেখো।
নমুনা উত্তর: রাত যত গভীর হয়, ভোর তত নিকটে আসে। এ কথার অর্থ হলো দুর্দশা দেখে শঙ্কা পাওয়ার কিছু নেই। সংকট যেমন আছে, তেমনি সেই সংকট সমাধানের উপায়ও আছে। দুনিয়ায় নানা রকম ঘটনা ঘটে বলেই জগৎ এত বৈচিত্র্যময়। দুঃখের ঘটনা যেমন ঘটে, তেমনি সুখের ঘটনাও ঘটে। অন্যের দুঃখে দুঃখী হতে হয়, আর অন্যের সুখে সুখী হতে হয়। তবে অনেক সময় নিজের বিপদের দিনে কাউকে কাছে পাওয়া যায় না। তাতে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। মেঘ কেটে যেমন সূর্য ওঠে, তেমনি দুঃসময় কেটে মনোরোম সময় আসে।
বিপরীত শব্দ
দাগ দেওয়া শব্দগুলোর বিপরীত শব্দ বসিয়ে বাক্যগুলো আবার লেখো। প্রথমটি করে দেখানো হলো।
এই গ্লাসের পানি ঠান্ডা। | এই গ্লাসের পানি গরম। |
তিনি শক্ত মনের মানুষ। | তিনি নরম মনের মানুষ। |
কথাটি সত্য নয়। | কথাটি মিথ্যা নয়। |
নতুন রাস্তাটি অনেক সরু। | নতুন রাস্তাটি অনেক প্রশস্ত। |
এ আয়নাতে সব ঝাপসা দেখা যায়। | এ আয়নাতে সব স্পষ্ট দেখা যায়। |
কাজটি যৌথভাবে করো। | কাজটি এককভাবে করো। |
কাল দিনের বেলায় এসো। | কাল রাতের বেলায় এসো। |
লোকটি কৃপণ। | লোকটি দানশীল। |
টেবিলে বইগুলো গোছানো আছে। | টেবিলে বইগুলো এলোমেলো আছে। |
আজকের খেলা তাড়াতাড়ি শেষ হলো। | আজকের খেলা দেরিতে শেষ হলো। |
বাক্যের অর্থ ঠিক রেখে বিপরীত শব্দ বসাই
উত্তর:
এই গ্লাসের পানি ঠান্ডা। | এই গ্লাসের পানি গরম নয়। |
তিনি শক্ত মনের মানুষ। | তিনি নরম মনের মানুষ নয়। |
কথাটি সত্য নয়। | কথাটি মিথ্যা। |
নতুন রাস্তাটি অনেক সরু। | নতুন রাস্তাটি অনেক প্রশস্ত নয়। |
এ আয়নাতে সব ঝাপসা দেখা যায়। | এ আয়নাতে সব স্পষ্ট দেখা যায় না। |
কাজটি যৌথভাবে করো। | কাজটি এককভাবে করো না। |
কাল দিনের বেলায় এসো। | কাল রাতের বেলায় এসো না। |
লোকটি কৃপণ। | লোকটি দানশীল নয়। |
টেবিলে বইগুলো গোছানো আছে। | টেবিলে বইগুলো এলোমেলো নেই। |
আজকের খেলা তাড়াতাড়ি শেষ হলো। | আজকের খেলা দেরিতে শেষ হয়নি। |
৪র্থ পরিচ্ছেদ
যতিচিহ্ন
নিচের খালি ঘরগুলোতে যথাযথ বিরামচিহ্ন বসাও:
এক দেশে ছিল এক রাজা।
লোকটিকে মুদি দোকান থেকে চাল, ডাল, ডিম আর আলু কিনতে দেখলাম।
পারুল গল্প লেখে; আমি কবিতা লিখি।
আপনি কখন এলেন?
বলো কী! এই কলমের দাম একশ টাকা!
ভালো – মন্দ নিয়েই আমাদের সমাজ।
আমার বড়ো চাচা – যিনি মালয়েশিয়ায় ছিলেন – গতকাল বাড়ি ফিরেছেন।
প্রমিত ভাষার দুই রূপ : কথ্য ও লেখ্য।
মা বললেন, ‘তুমি দাঁড়াও, আমি আসছি।’’
বুঝতে চেষ্টা করি
সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করো।
উত্তর:
যতিচিহ্ন কেন ব্যবহার করা হয়? | লেখার সময়ে মনের ভাব যাতে অর্থ অনুযায়ী ভালোভাবে প্রকাশ পায়, তাই যতিচিহ্ন ব্যবহার করা হয়। |
মুখের ভাষায় যতিচিহ্ন লাগে না কেন? | মুখের ভাষায় উচ্চারিত বাক্যের বিভিন্ন স্থানে আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী থামি এবং বাক্য বুঝে কন্ঠস্বরের ভঙ্গির পরিবর্তন করি, তাই মুখের ভাষায় যতিচিহ্ন লাগে না। |
লেখার ভাষায় যতিচিহ্ন কেন দিতে হয়? | লেখার ভাষায় বাক্যের সমাপ্তি বোঝার জন্য, বাক্যের বক্তব্য ও ভাব স্পষ্ট করার জন্য যতিচিহ্ন দিতে হয়। |
বাক্যের শেষে কোন কোন যতিচিহ্ন বসে? | দাঁড়ি (।), প্রশ্নচিহ্ন (?), বিস্ময়চিহ্ন (!) |
বাক্যের ভিতরে কোন কোন যতিচিহ্ন বসে? | কমা (,), সেমিকোলন (;), কোলন (:), ভ্যাশ (-), হাইফেন (–) ইত্যাদি। |
কোথায় কোন যতিচিহ্ন বসে
আবেগ শব্দ ও আবেগবাচক বাক্যের শেষে | ( ! ) |
উদাহরণ দেওয়ার আগে | ( : ) |
এক ধরনের কয়েকটি শব্দ পরপর থাকলে | ( , ) |
একজোড়া শব্দের মাঝখানে | ( – ) |
দুটি বাক্যকে এক করতে | ( – ) |
নাটকের সংলাপে চরিত্রের নামের পরে | ( : ) |
পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি বাক্যের মাঝে | ( ; ) |
‘প্রশ্নবাচক বাক্যের শেষে | ( ? ) |
বইয়ের নামে | ( ‘’ ) |
বক্তার কথা সরাসরি বোঝাতে | ( ‘’ ) |
বাক্যের বিভিন্ন অংশকে আলাদা করতে | ( , ) |
বিবৃতিবাচক ও অনুজ্ঞাবাচক বাক্যের শেষে | ( । ) |
শব্দ সংক্ষেপ করার কাজে | ( . ) |
যতিচিহ্ন বসাই
নিচের অনুচ্ছেদে কিছু যতিচিহ্ন বসানো আছে, কিছু যতিচিহ্ন বসানো নেই। বাদ পড়া যতিচিহ্নগুলো বসিয়ে অনুচ্ছেদটি আবার লেখো:
উত্তর:
আকমল স্যার সেদিন ক্লাসে এসে বললেন, ‘শোনো ছেলে-মেয়েরা, তোমাদের জন্য একটা খুশির খবর আছে।’
সব শিক্ষার্থী খুশির খবরটা শোনার জন্য তাঁর দিকে তাকিয়ে রইল। স্যার বললেন, ‘স্কুল থেকে প্রতিটি শ্রেণিতে একটি করে বুক-শেলফ দি দেওয়া হচ্ছে।’
বিন বলল, ‘বুক-শেলফ দিয়ে কী হবে, স্যার।’
স্যার বললেন, ‘এই বুক-শেলফে আমরা নানা রকম বই রাখব। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক-পছন্দমতো যেকোনো ধরনের বই আমরা রাখতে পারি।’
শানু প্রশ্ন করল, ‘বইগুলো আমরা কোথায় পাব, স্যার?’ স্যার বললেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে একটি করে বই জমা
দেবে। সেসব বই এই শেলফে থাকবে। এভাবে আমরা একটি ক্লাসরুম লাইব্রেরি গড়ে তুলব। এই সেলফ থেকে বই নিয়ে সবাই পড়তে পারবে।’
মিতু খুশি খুশি গলায় বলল, ‘বাহ! দারুণ হবে।’
যতিচিহ্ন ব্যবহার করে অনুচ্ছেদ লিখি
একটি অনুচ্ছেদ লেখো যেখানে বিভিন্ন রকম যতিচিহ্নের ব্যবহার আছে।
উত্তর: আরজু পাখিকে বলে পাখি, একটু নিচে নামো! তোমার সাথে কথা কই। আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে? সাবু, সোমেন ওরা কেউ নিয়ে গেল না। তুমি নিয়ে যাও না! তোমার ডানায় ভর করে চলে যাব। কী হলো? নেমে গেলে কেন? মেঘ আমায় নিয়ে যাও না। তোমার কোলে বসে চলে যাব স্কুলে। কী বলছ? ভিজে যাব? ভিজলাম। আবার শুকিয়ে যাব- তবুও তো স্যার বুঝবেন, ছোটো পাখি চন্দনা, এই যে শালিক আমাকে দেখতে পাচ্ছ না? আমি একলা বসে আছি। আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আমার সাথে কথা বলো না- চন্দনা আমায় নিল না, মেঘ আমায় নিল না- শালিক আমার সাথে কথা বলে না।
৫ম পরিচ্ছেদ
বাক্য
বুঝতে চেষ্টা করি
নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করো।
উত্তর:
উপরের বাক্যগুলো একই অর্থ প্রকাশ করছে কি না? | হ্যাঁ |
বাক্য তিনটির গঠন এক রকমের কি না? | না |
কোন বাক্যে কেবল একটি সমাপিকা ক্রিয়া আছে? | চেষ্টা করলে সফল হবে। |
কোন বাক্যের একটি অংশ অন্য অংশের সাহায্য ছাড়া পুরোপুরি অর্থ প্রকাশ করে না? | যদি চেষ্টা করো, তবে সফল হবে। |
কোন বাক্যে একাধিক সমাপিকা ক্রিয়া আছে? | চেষ্টা করো, সফল হবে। |
খুঁজে বের করি
নিচে তিন ধরনের বাক্যের নমুনা দেওয়া হলো। এগুলো কোন ধরনের বাক্য এবং তার কারণ কী, তা খুঁজে বের করো। প্রথমটি করে দেখানো হলো।
উত্তর:
৪. তুমি কোথা থেকে এসেছ?
এটি একটি সরল বাক্য। কারণ, এখানে একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া আছে। ক্রিয়াটি হলো: এসেছ।
৫. যেমন কাজ করেছ, তেমন ফল পেয়েছ।
এটি একটি জটিল বাক্য। কারণ, এখানে জোড়া শব্দ আছে।
শব্দ দুটি হলো: যেমন-তেমন।
৬. আমি সকালে হাঁটি, আর তিনি বিকালে হাঁটেন।
এটি একটি যৌগিক বাক্য। কারণ, এখানে দুটি বাক্য একটি যোজক দিয়ে সংযুক্ত হয়েছে। যোজকটি হলো; আর। তাছাড়া এখানে দুটি সমাপিকা ক্রিয়া আছে। সমাপিকা ক্রিয়া দুটি হলো: ভাঁটি, হাঁটেন।
৭. সে ভাত খেয়ে স্কুলে গেল।
এটি একটি সরল বাক্য। কারণ, এখানে একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া আছে। ক্রিয়াটি হলো; গেল।
৮. আমি পড়াশোনা শেষ করব, তারপর খেলতে যাব।
এটি একটি যৌগিক বাক্য। কারণ, এখানে, দুটি বাক্য একটি যোজক দ্বারা যুক্ত। যোজকটি হলো: তারপর। তাছাড়া এখানে দুটি সমাপিকা ক্রিয়া আছে। সমাপিকা ক্রিয়া দুটি হলো; করব, যাব।
৯. যখন তুমি আসবে, তখন আমরা রান্না শুরু করব।
এটি একটি জটিল বাক্য। কারণ, এখানে জোড়া শব্দ আছে।
শব্দ দুটি হলো: যখন-তখন।
১০. আজ ভোরে সুন্দর একটা পাখি দেখতে পেলাম।
এটি একটি সরল বাক্য। কারণ, এখানে একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া আছে। ক্রিয়াটি হলো: দেখতে পেলাম।
বাক্য তৈরি করি
নিচের খালি জায়গায় দুটি করে সরল বাক্য, জটিল বাক্য ও যৌগিক বাক্য তৈরি করো:
সরল বাক্য ১: হাবিবার গান শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে গেল।
সরল বাক্য ২: বাংলা আমাদের মাতৃভাষা।
জটিল বাক্য ১: যদি বৃষ্টি আসে তবে ফসল ভালো হবে।
জটিল বাক্য ২: যার লেখা সুন্দর হবে তাকে পুরস্কার দেবো।
যৌগিক বাক্য ১: মেয়েটি চঞ্চল কিন্তু পড়ালেখায় ভালো।
যৌগিক বাক্য ২: যে লোক পরিশ্রম করে, সে সাফল্য লাভ করে।