এই পোস্টে আমরা জানবো ৭ম শ্রেনীর বিষয় বিজ্ঞান (অনুশীলন বই) এর অষ্টম অধ্যায়, ভূমিকম্প! ভূমিকম্প! সম্পর্কে।
ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠনের সাথে এটি সম্পর্কিত। এই অভিজ্ঞতায় আমরা ভূমিকম্পের কারণ উদঘাটন করবো। ভূমিকম্পের পূর্বে, ভূমিকম্পের সময় এবং ভূমিকম্পের পরে আমাদের করণীয় বিষয়গুলো শিখব এবং অনুশীলন করবো।
প্রথম সেশন
ভূমিকম্পে করণীয়
ভূমিকম্পের আগে:
- বাসায় আগুন নেভানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- প্রাথমিক চিকিৎসা কিট, শুকনা খাবার এবং পানি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
- বাসায় গ্যাস, ইলেকট্রিসিটি এবং পানির সরবরাহ কীভাবে বন্ধ করতে হয় সেটি জেনে রাখতে হবে।
ভূমিকম্পের সময়:
- কোনো অবস্থাতেই অহেতুক ভয়ে এবং আতঙ্কে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হওয়া যাবে না। মাথা ঠান্ডা রাখলে বড় ভূমিকম্পের বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।
- বড় ভূমিকম্পের সময় ঘরের ভেতরে থাকলে ভিতরেই থাকতে হবে, ‘বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করা যাবে না। কখনোই লিফট দিয়ে নামার চেষ্টা করা যাবে না। কাচের জানালা থেকে দূরে থাকতে এবং দেয়ালের পাশে বা প্রয়োজনে শস্ত্র টেবিলের নিচে আশ্রয় দিতে হবে।
- ঘরের বাইরে থাকলে, ঘরের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করা যাবে না। ইলেকট্রিক পোল কিংবা বড় বিল্ডিং থেকে দূরে সরে যেতে হবে, অন্যথায় উপর থেকে মাথার উপর কিছু পড়তে পারে।
ভূমিকম্পের পরে:
- ভূমিকম্পে আহত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে। গুরুতর আহত হলে হাসপাতালে নিতে হবে এবং যার প্রয়োজন বেশি তাকে আগে চিকিৎসা দিতে হবে।
- ক্ষতিগ্রস্ত পানি, ইলেকট্রিসিটি, গ্যাস লাইন বন্ধ করে দিতে হবে।
- বাসায় গ্যাসের গন্ধ পেলে ঘরের দরজা-জানালা খুজে ঘরের বাইরে চলে যেতে হবে।
- রেডিওতে খবর শোনার চেষ্টা করতে হবে।
- টেলিফোন খুব কম ব্যবহার করতে হবে, তবে জরুরি কাজের জন্য ত্রাণ বাহিনীকে টেলিফোন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে দিতে হবে।
- ভাঙা কাচ ইত্যাদিতে যেন পা কেটে না যায়, সেজন্য খালি পায়ে হাঁটাহাঁটি করা যাবে না।
- ধ্বংসপ্রাপ্ত বিল্ডিংয়ের নিচে আটকা পড়লে উদ্ধারকারী দল এলে তাদের সংকেত দেয়ার জন্য কোনো কিছুতে নিয়মিতভাবে আঘাত দিয়ে শব্দ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে।
- বড় ভূমিকম্প হলে, আফটার শক হিসেবে আরো ভূমিকম্প হতে পারে, সে জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে।
শিক্ষকের কাছ থেকে চিলি এবং হাইতিতে ঘটে যাওয়া দুইটি ভূমিকম্প সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করো।
ছক : ১
উত্তর:
ভূমিকম্পের স্থান | ভূমিকম্পের কারণ | ভূমিকম্পেরউৎপত্তিস্থল | ভূমিকম্পেরমাত্রা | ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ | বিশেষ কোনো ঘটনা পর্যবেক্ষণ থাকলে |
মধ্য চিলি | নাজকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা প্লেটের সংঘর্ষ নাজকা প্লেট ডেবে যায়। | ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৫ কি.মি. গভীরে | ৮.৮ | ৫৫০ মৃত্যু, ১২,০০০ আহত, ৪ লক্ষ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত। | সান্তিরাখা বিমানবন্দর ব্যাপকভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৫ কি.মি. গভীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় |
রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্স | লিওগেন চ্যুতিতে ক্যারিবিয়ান এবং উত্তর আমেরিকার প্লেটের চলনে সংকোচন। | ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৩ কি.মি. গভীরে | ৭.৭ | প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত, ১-৩ লক্ষ মৃত্যু | প্রতি ৫ জনে ১ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কেননা প্রচুর ভবন ধ্বংস হয়েছিল। যেমন- হাইতির বস্ত্রশিল্প ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল |
উপরের ছক দেখে কোন ভাবনা আসছে মাথায়? ভূমিকম্পের মাত্রা ও এর সাথে দুইটি ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির তুলনা করে দেখো। কোন পার্থক্য কী দেখছ? কী কারণে পার্থক্য ঘটতে পারে? দলগত আলোচনা করে নিচে লিখে রাখো তোমাদের মতামত।
উত্তর:
ভূমিকম্পের মাত্রায় হাইতির চেয়ে চিলিরটি ১.৮ মাত্রা বেশি। কিন্তু হাইতির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ভীতিকর। বিষয়টি নিয়ে শ্রেণিতে আলোচনার পর আমার মনে হলো, যথাযথ সতর্কতা তথা প্রস্তুতির অভাব এবং কী করণীয় তা সম্পর্কে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের জানার অভাব হাইতিতে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করেছে।
দ্বিতীয় সেশন
১। অনুসন্ধানী পাঠ থেকে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন পড়ে নাও। পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠনের চিত্র অংকন করো।
২। টেকটোনিক প্লেটগুলোর স্থানান্তরের ধরনের চিত্র অংকন করো
তৃতীয় সেশন
ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে জেনেছ। এবার ভাবো ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বাভাস আমরা পাই না কেন। দলগত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো।
উত্তর: ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব নয়। মূলত ম্যান্টলে প্লেটের সম্ভারণ সর্বদাই ক্রিয়াশীল: ভূপৃষ্ঠ যেসব প্লেটগুলোর উপর ভাসমান সেগুলো খুব ধীর গতিতে পরস্পরের দিকে অথবা বিপরীত দিকে অথবা পাশাপাশি চলছে। প্লেটের এই স্বাভাবিক সঞ্চারণ গতি সীমানা কখন আলোড়িত হবে যার ফলে ভূপৃষ্ঠের উপরের অবকাঠামো কম্পিত হবে তা আঁচ করা যায় না। অন্যথায় গতি সীমানা এবং ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল স্পষ্টতই চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু এ কম্পন ভূমিকম্পরূপে পৃথিবীতে কখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ে আসবে তার পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব নয়।
১। স্বাভাবিক অবস্থায় যেসব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন:
উত্তর: ভূমিকম্প সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন। সারাদেশে ভবন নির্মাণে জাতীয় ‘বিন্ডিং কোড’ এবং কোডের কাঠামোগত অনুসরণ বাধ্যতামূলক হবে। ঢাকা শহরে রাজউকের ভবন নির্মাণ প্ল্যান অনুমোদনের নীতিমালা যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। সারাদেশে রাস্তা প্রশস্ত করতে হবে। ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কাজে ব্যবহারের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ব্যুরো কর্তৃক তালিকা অনুযায়ী যন্ত্রপাতি প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সংরক্ষণ করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহে স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন ও প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। দুর্যোগকবলিত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীতে ‘ডগ স্কোয়াড’ রাখা। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ফিন্ড হাসপাতাল স্থাপন ও মহড়া অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা।
২। ভূমিকম্পের সময় আমাদের কী করা প্রয়োজন:
উত্তর: বাড়িতে থাকাকালীন বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। গ্যাসের চুলা বন্ধ করতে হবে। তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বের হতে হবে ট্রেনে বা গাড়ির ভিতর থাকাকালীন যদি ভূমিকম্প হয় তবে কোনো জিনিস ধরে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত। লিফটের ভিতরে থাকাকালীন দ্রুত নিচে নামার চেষ্টা করতে হবে। লিফটের ভিতরে আটকে পড়লে লিফট রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতে হবে। মার্কেট, সিনেমা হল, আন্ডারগ্রাউন্ড ও শপিংমলে থাকলে এতদাঞ্চলে ভূমিকম্পে আকস্মিক ভীতিকর এক পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। আগুন লাগাও স্বাভাবিক। তাই এক্ষেত্রে প্রথমে নিচু হয়ে বসে বা শুয়ে থাকা শ্রেয় এবং পরবর্তীতে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে হবে।
২। ভূমিকম্পের পরে আমাদের করণীয়:
উত্তর: ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে আমরা উদ্ধারকার্যে যথাসাধ্য সহায়তা করব। নিজেরা খালি পায়ে হাঁটবো না। বিভিন্ন সাহায্যকারী ফোর্সকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করব। যেমন- কোনো দুর্গত ব্যক্তি সাহায্য চাইছে বা কোথাও ইলেকট্রনিক তার ছিঁড়ে গেছে ইত্যাদি। নিজেদের মোবাইল বা অন্য কোনো প্রযুক্তি তাদের ব্যবহার করতে দিব।
প্রিয় শিক্ষার্থী ভূমিকম্প সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে ক্লিক কর নিচের লিংকে-
👉 ভূমিকম্প কি? ভূমিকম্প কেন হয়? | What is an Earthquake? Why do earthquakes happen?