এই পোস্টে আমরা জানবো ৭ম শ্রেনীর বিষয় বাংলা এর পঞ্চম অধ্যায়, বুঝে পড়ি লিখতে শিখি সম্পর্কে।
১ম পরিচ্ছেদ
প্রায়োগিক লেখা
পড়ে কী বুঝলাম
ক. এই চিঠির প্রেরক ও প্রাপক কে?
উত্তর: এই চিঠির প্রেরক ফেরদৌস কামাল উদ্দীন মাহমুদ নামের একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রাপক তাঁর মা হাসিনা মাহমুদ।
খ. চিঠিটি বাংলাদেশের ইতিহাসের কোন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে লেখা?
উত্তর: চিঠিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে লেখা হয়।
গ. প্রেরক কেন চিঠিটি লিখেছেন?
উত্তর: যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি কেমন আছেন এবং যুদ্ধের পরিস্থিতি কেমন তা জানানোর জন্য প্রেরক তাঁর মাকে চিঠিটি লিখেছেন।
ঘ. একটি চিঠির কোন অংশে কী লিখতে হয়?
উত্তর: চিঠির প্রধান অংশ চারটি। এগুলো হচ্ছে-
১. ঠিকানা ও তারিখ অংশে চিঠি লেখার ঠিকানা ও তারিখ লিখতে হয়।
২. সম্ভাষণ অংশে জনাব, মান্যবরেষু, মধ্যমান্যবরেষু, মহোদয়, মহাশয় ইত্যাদি সম্ভাষণের যেকোনো একটি প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে।
৩. মূল বিষয় অংশে চিঠির মূলবক্তব্য উপস্থাপন করতে হয়।
৪. লেখকের নাম বা স্বাক্ষর অংশে চিঠির লেখকের নাম ও স্বাক্ষর লিখতে হয়।
এছাড়াও প্রেরক ও প্রাপকের নাম লিখে চিঠি খামের ভেতরে পুরতে হয়।
ঙ. চিঠি কেন লেখা হয়?
উত্তর: নানান কারণে আমাদের চিঠি লিখতে হয়। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে পরিবার-পরিজনের কাছ থেকে দূরে অবস্থান করার প্রয়োজন পড়ে। সে সময় তাদের চিঠি লিখলে তারা খুশি হয়। তাদের কুশলাদি জানানো এবং অন্যান্য খবরাখবরের প্রয়োজনে চিঠি লিখতে হয়। চিঠি নানা রকমের হতে পারে। যেমন: ব্যক্তিগত চিঠি, দরখাস্ত বা আবেদন পত্র ইত্যাদি।
বলি ও লিখি
উপরের চিঠিতে প্রেরক প্রাপককে যা যা জানাতে চেয়েছেন, তা নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: চিঠিতে প্রেরক তাঁর মাকে জানাতে চেয়েছেন যে, সব বাধা অতিক্রম করে তিনি লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর প্রতিশোধ নিতে নিজেকে তিনি প্রস্তুত করছেন। তবে তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা ভোলেননি। এখন শুধু উপযুক্ত জবাব দেওয়ার পালা। বনে-বাদাড়ে বাস করে এখন তাঁর চোরা জংলিদের মতো হয়ে গেছে। অবস্থা এমন যে, দেখলে মা হয়তো তাঁকে চিনবেনই না। এই জংলি ভাব তাঁর আচরণেও এসেছে। আগে তিনি যেখানে মোরগ জবাই করতে ভয় পেতেন, সেখানে তিনি এখন রক্তের নদীতে সাঁতার কাটছেন। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ছেলে মাকে এ-ও জানান যে, সামনের যেকোনো দিনই সেই কাঙ্ক্ষিত যুদ্ধ শুরু হতে পারে এবং সেই দিনটির জন্যই তিনি প্রহর গুনছেন। মনি ভাই তার অন্য কালের জন্য তাদের অফিসার করেননি। এখানে তাঁর অনেক পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়েছে। পরিবারের কুশলাদি জেনে তিনি খুশি। এছাড়া মায়ের দোয়া সঙ্গে আছে বলে তাঁর মনে কোনো ভয় নেই।
নিজের অভিজ্ঞতা
চিঠি পড়া, লেখা বা এ সংক্রান্ত তোমার কোনো অভিজ্ঞতা থাকলে তা লেখো।
উত্তর: চিঠি লেখা নিয়ে আমার বেশ কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি সর্বপ্রথম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার বন্ধু মুহিনকে একটা চিঠি লিখি। সেসময় চিঠি লেখার নিয়মাবলি না জানার কারণে আমাকে বেশ জটিলতায় পড়তে হয়। এজন্য চিঠি লেখার বিষয়ে জানতে আমি বাবার কাছে যাই। বাবা আমাকে চিঠি লেখার পদ্ধতি শিখিয়ে দেন এবং লেখা সম্পন্ন হওয়ার পর সেটি ডাকঘরে গিয়ে জমা দিয়ে আসেন। এটিই ছিল আমার জীবনের প্রথম চিঠি লেখার অভিজ্ঞতা।
চিঠি লিখি
এবার তুমি একটি চিঠি লেখো। চিঠি কাকে লিখবে এবং কোন বিষয়ে লিখবে, আগে ভেবে নাও। লেখার সময় বিবেচ্য বিষয়গুলো খেয়াল রেখো।
উত্তর: আমি আলেয়া, আমি আমার আমেরিকা প্রবাসী বন্ধু কণিকাকে আমাদের এলাকায় অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলার বর্ণনা দিয়ে একটি চিঠি লিখেছি। চিঠিটি নিম্নরূপ :-
চিলমারী, কুড়িগ্রাম
১৫ এপ্রিল ২০২৩
প্রিয় কণিকা,
আমার ভালোবাসা নিও। চাচা-চাচিকে আমার সালাম দিও। প্রায় একবছর হয়ে গেল তুমি আমেরিকা চলে গেছ। অথচ কিছুতেই মানতে পারি না তুমি আমাদের কাছে নেই। দেশে কতই না আনন্দমুখর ছিল আমাদের জীবন। বন্ধু হয়েও আমরা ছিলাম বোনের মতো। জান, এখনো আমাদের এলাকায় আগের মতোই লোকজ উৎসব ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়। আমরাও সেগুলো দারুণ ইতি উপভোগ করি। সেসময় তোমার কথা খুব মনে পড়ে। প্রতিবারের মতো এবারো আমাদের এলাকায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বৈশাখী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমি সেই উৎসবের কথা জানাতেই তোমাকে চিঠি লিখছি।
চিলমারীর মানুষের জন্য এবারের বৈশাখ ছিল অনন্য। কেননা, এই প্রথম এখানে এত বিশাল পরিসরে বৈশাখী উৎসব অনুষ্ঠিত হলো। এ উপলক্ষ্যে রুমা, নিশা, সুজনা, বিপ্লব, মুন্না এবং আমি খুব সকালেই আমাদের স্কুলের মাঠে চলে যাই। প্রথমেই শুরু হয় বৈশাখী শোভাযাত্রা। নানা রঙের ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে আমরা শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করি। আমাদের স্কুলের পাশেই বসেছে বৈশাখী মেলা। স্কুলের পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে ছোটো ছোটো বাক্সে নানা ধরনের কাচের ও রেশমি চুড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। তার পাশে বিভিন্ন ধরনের পিঠার দোকান। আমরা সবাই মিলে সেই পিঠাঘর থেকে গরম গরম পিঠা কিনে খেয়েছি। এজাড়াও মাঠের পশ্চিম কোণে বসেছিল নানা ধরনের বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসের দোকান। তার পাশে বাচ্চাদের বিতির খেলনার দোকান। পাতার বাঁশির দোকানেও ছিল প্রচুর ভিড়। এছাড়া বলেছিল পান্তা-ইলিশের মেলা। অনেকেই পান্তা-ইলিশ খেতে সেখানে ভিড় জমিয়েছিল। আমরা বন্ধুরা মিলে চরকিতেও উঠেছিলাম। এর বাইরে স্কুলের পুকুরপাড়ে ছিল সাপুড়ে দলের সাপ খেলা দেখানোর আয়োজন। সেখানে আমরা সাপ খেলা দেখেছি। এভাবে সারাদিন মেলায় ঘুরে বিকেলে আমরা বাসায় ফিরে আসি।
আজ আর লিখছি না। তুমি ভালো থেকো। মাঝে মাঝে তোমার খবর জানিয়ে চিঠি দিও। তোমার বাবা-মাকে আমার সালাম ও শ্রদ্ধা জানিও।
ইতি
তোমার বান্ধবী
আলেয়া
FROM JANNAT-UL FERDOUS ALEYA CHILMARI-5631 KURIGRAM | STAMP To MEHEJABIN KONIKA 138 BROKLYN NEW YORK-10001 USA |
২য় পরিচ্ছেদ
বিবরণমূলক লেখা
পড়ে কী বুঝলাম
ক. লেখক এখানে কীসের বিবরণ দিয়েছেন?
উত্তর: লেখক এখানে পিরামিডগুলোর বিবরণ দিয়েছেন।
খ. পিরামিডগুলো কারা তৈরি করেছিলেন এবং কখন তৈরি করেছিলেন?
উত্তর: মিশরের ফারাওরা পিরামিডগুলো তৈরি করেছিলেন। প্রায় সাড়ে ছয় হাজার বছর আগে পিরামিডগুলো তৈরি হয়।
গ. পিরামিডগুলো কেন তৈরি করা হয়েছিল?
উত্তর: অনন্ত জীবনের প্রত্যাশায় ফারাওরা পিরামিডগুলো তৈরি করেছিলেন। ফারাওদের বিশ্বাস ছিল মানুষের লাশ পচে গেলে তারা অনন্ত জীবনের অধিকারী হতে পারে না। তাই মৃতদেহকে ‘মমি’ বানিয়ে পিরামিডের ভেতরে রেখে দিলে অনন্ত জীবনের পথে আর বাধা থাকে না। কেননা, শক্ত পিরামিডের ভেতরে ঢুকে কেউ ‘মমি’কে ছুঁতেও পারবে না। তাই তারা পিরামিড তৈরি করেন।
ঘ. পিরামিডগুলো কীভাবে তৈরি করা হয়েছিল?
উত্তর: পিরামিডগুলো পাথরের তৈরি। পাথর কেটে পাথরের একটি টুকরার ওপর আরেকটি টুকরা বসিয়ে পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল।
৩. পিরামিড একটি পুরাকীর্তি। বাংলাদেশের যে কোনো পুরাকীর্তির সাথে এর মিল-অমিল খুঁজে বের করো।
উত্তর: বাংলাদেশের বিখ্যাত একটি পুরাকীর্তি হচ্ছে পাহাড়পুরের সোমপুর বিষার। পিরামিডের মতো এটিও প্রাচীন স্থাপনা। তবে পিরামিডের প্রাচীনত্বের চেয়ে এর প্রাচীনত্ব কম। পিরামিড যেমন ফারাও রাজারা তৈরি করেছেন, তেমনি সোমপুর বিহারও পাল রাজাদের কীর্তি। পিরামিডে মৃত রাজাদের দেহ মমি করে রাখা হতো, আর বিহারে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বসবাস করতেন এবং শাস্ত্রচর্চা করতেন। পিরামিড ত্রিকোণ-বিশিষ্ট, আর সোমপুর বিহারটি চতুষ্কোণ-বিশিষ্ট। পিরামিডের ভেতরে যেমন ছোটো ছোটো কুঠুরি রয়েছে, বিষারের ভেতরেও তাই। বিষারের দেয়ালে টেরাকোটা চিত্র থাকলেও পিরামিডের দেয়ালে তেমন চিত্র নেই। তবে মিশরের পিরামিড ও সোমপুর বিহার দুটিই প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন।
বলি ও লিখি
‘পিরামিড’ রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা তোমার নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: ভ্রমণকাহিনিটিতে প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী মিশরের পিরামিড সম্পর্কে বিচিত্র অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। পিরামিড পৃথিবীর একটি আশ্চর্য নিদর্শন এবং তা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন কীর্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। যুগ যুগ ধরে পিরামিডের ভেতর ও বাহিরের রহস্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করছে মানুষ। অনেকে পিরামিডের ভেতরে ঢুকতে চেয়েছে সম্পদের লোভে, কিন্তু নির্মাতারা এমন কৌশলে তা বানিয়েছিলেন যে সহজে কেউ যেন প্রবেশের রাস্তা না পায়। মিশরের ভেতরে-বাইরে আরও পিরামিড থাকলেও গিজে অঞ্চলের তিনটি পিরামিডই জগৎ-বিখ্যাত। পিরামিড তিনটি যেসব রাজা নির্মাণ করেছেন তাঁদের নাম, নির্মাণ কাল এবং পিরামিডগুলোর উচ্চতা ও আকৃতির বর্ণনাও দিয়েছেন লেখক। এসব পিরামিড় তৈরি হয়েছিল পাথর কেটে, পাথরের টুকরা দিয়ে। মোট লেগেছিল তেইশ লক্ষ টুকরা পাথর; এগুলো বানাতেও এক লক্ষ লোকের বিশ বছর সময় লেগেছিল; ব্যয় হয়েছিল প্রচুর অর্থ। পিরামিডগুলো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে মিশরের রাজারা তৈরি করেছিলেন। মূল লক্ষ্য ছিল অনন্ত জীবনের প্রত্যাশা। ফারাওদের বিশ্বাস হিল, মানুষের লাশ পচে গেলে তারা অনন্ত জীবনের অধিকারী হতে পারে না। তাই মৃতদেহকে ‘মমি’ বানিয়ে পিরামিডের ভেতরে রেখে দিলে অনন্ত জীবনের পথে আর বাধা থাকে না। কেননা, শক্ত পিরামিডের ভেতরে ঢুকে কেউ ‘মমি’কে ছুঁতেও পারবে না। কিন্তু তাঁদের সেই আশা পূর্ণ হয়নি। কারণ, এর মধ্যে মানুষ মমিগুলোকে স্পর্শ করতে পেরেছে এবং তা স্থানান্তরিত করে জাদুঘরে রেখেও দিয়েছে।
লেখা নিয়ে মতামত
‘পিরামিড’ রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো। বোঝার সুবিধার জন্যে দুটি নমুনা দেওয়া হলো।
উত্তর:
‘পিরামিড’ রচনায় যা আছে | আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা |
১. এই তিনটে পিরামিড পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো কীর্তিস্তম্ভ | এ তথ্যটি সঠিক কি না যাচাই করতে হবে। |
২. ভেবে কূল-কিনারা পাওয়া যায় না, সে সম্রাটের কতখানি ঐশ্বর্য আর প্রতাপ ছিল, যিনি আপন রাজধানীর পাশে লক্ষ লক্ষ লোককে বিশ বৎসর খাওয়াতে- পরাতে পেরেছিলেন। | শুনেছি আগেকার রাজা-বাদশারা জোর করে বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন ধরে এনে দাস হিসেবে কাজ করাতো, যা অত্যন্ত অমানবিক ছিল। পিরামিড বানানোর সময়ে এ ধরনের কিছু ঘটেছিল কি না জানতে হবে। |
৩. পিরামিডের ঠিক মাঝখানে একটা কুঠুরিতে বিস্তর ধনদৌলত জড়ো করা আছে। | এই তথ্যটির ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। কেননা, পিরমিডগুলো ছিল মূলত সমাধিক্ষেত্র। রাজপ্রাসাদ থাকতে সমাধিক্ষেত্রে ধনদৌলত রাখার কথা নয়। |
৪. মিশরের গিজে অঞ্চলের তিনটি পিরামিড পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম। | আমি শুনেছি, তথ্যটি সঠিক। |
৫. পিরামিড তৈরি করতে তেইশ লক্ষ টুকরা পাথরের প্রয়োজন হয়েছিল। | এ তথ্যটি সঠিক কি না যাচাই করতে হবে। |
৬. সবচেয়ে বড়ো পিরামিডটা বানাতে নাকি এক লক্ষ লোকের বিশ বছর লেগেছিল? | তথ্যটি অবাস্তব। এত সংখ্যক লোককে একটি কাজ এক সঙ্গে করানো সম্ভব কি না, তা ভাববার বিষয়। |
বিবরণ লিখি
তোমার এলাকার অন্তত পঞ্চাশ বছরের পুরানো কোনো স্থাপত্য সম্পর্কে ১০০ থেকে ১৫০ শব্দের মধ্যে একটি বিবরণ লেখো।
উত্তর:
রোমাঞ্চকর পুরাকীর্তি মহাস্থানগড়
রোমাঞ্চকর এক স্থান প্রাচীন বাংলার অন্যতম নিদর্শন বগুড়ার মহাস্থানগড়। এমন প্রাচীন পুরাকীর্তি এখানে রয়েছে যা দেখলে নানা প্রশ্ন ও বিস্ময় জাগবে যেকোনো অনুসন্ধিৎসু মনে। বগুড়া শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তরে শিবগঞ্জ উপজেলার করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এ গড়টি। এর প্রাচীন নাম’ পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। একসময় এটি বাংলাদেশের রাজধানী ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এখানে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। প্রাচীরবেষ্টিত এই নগরের ভেতরে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের অনেক নিদর্শন বিদ্যমান। এর দুর্গের ভেতরে কয়েকটি ঢিবি ও নির্মাণ-নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জিয়ত কুন্ড, মানকালীর ধাপ, পরশুরামের বাসগৃহ, বৈরাগীর ভিটা, খোদার পাথরভিটা ইআদি। ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, একসময়কার মহাস্থানের রাজা নলের সঙ্গে তাঁর ভাই নীলের চরম বিরোধ ছিল। এ সময় মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ভারতের দক্ষিণাত্যের রাম নামের এক ব্রাহ্মণ এখানে প্রায়শ্চিত করতে আসেন। তিনি এসে উক্ত দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান ও রাজা নিযুক্ত হন। ইতিঘাসে এই রাজা রামই পরশুরাম নামে পরিচিত। তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অসংখ্য হিন্দু রাজা ও অন্যান্য ধর্মের রাজারা এখানে রাজত্ব করেন। ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করতে আসা ফকিরবেশী সরবেশ নির্মম হলরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র)-এর সঙ্গে যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন। ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটন প্রথম মহাস্থানগড়ের অবস্থান চিহ্নিত করেন। ২০১৬ সালে এটিকে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
৩য় পরিচ্ছেদ
তথ্যমূলক লেখা
পড়ে কী বুঝলাম
ক. জগদীশচন্দ্র বসু সম্পর্কে এই লেখায় কী কী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে?
উত্তর: এই লেখায় জগদীশচন্দ্র বসু সম্পর্কে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আছে। যেমন; তাঁর জন্ম, পরিচয়, শিক্ষাদীক্ষা, কর্মজীবন ও নানা আবিষ্কারের কথা রয়েছে। এমনকি তাঁকে সম্মান জানিয়ে ব্রিটিশ সরকার কাগজি মুদ্রার নোটে যে ছবি ছাপে, তার তথ্যও প্রবন্ধটিতে রয়েছে।
খ. এই লেখা থেকে সাল-ভিত্তিক তথ্যগুলো ছকের আকারে উপস্থাপন করো:
উত্তর:
সাল | তথ্য |
১৮৫৮ | জগদীশচন্দ্র বসুর জন্ম |
১৮৭৯ | বিএ পাশ করেন। |
১৮৮০ | ডাক্তারি পড়ার জন্য জগদীশচন্দ্র ইংল্যান্ডে যান। |
১৮৮৪ | প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে ট্রাইপস ডিগ্রি করেন। |
১৮৯৪ | কলকাতার টাউন হলে তাঁর আবিষ্কারের কয়েকটা জিনিস প্রকাশ্যে দেখান। |
১৮৯৬ | রেডিওর মাধ্যমে বিনা তারে যোগাযোগের মূল কৌশলটি আবিষ্কার করেন। |
গ. এই ধরনের জীবন-তথ্যমূলক আর কী কী রচনা তুমি পড়েছ?
উত্তর: এই ধরনের জীবন-তথ্যমূলক বিভিন্ন রচনা এর আগে আমি পড়েছি। যেমন: রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, জাতির পিতা বঙ্গাবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইত্যাদি।
ঘ. এই লেখা থেকে জগদীশচন্দ্র বসুর কী কী আবিষ্কারের কথা জানতে পারলে?
উত্তর: এই লেখা থেকে জগদীশচন্দ্র বসুর যেসব আবিষ্কারের কথা জানতে পেরেছি তার মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক চুম্বক-তরঙ্গ, উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে তার আবিষ্কার, উদ্ভিদের বৃদ্ধি মাপার যন্ত্র রেসকোগ্রাফ, রেডিওর মাধ্যমে বিনা তারে যোগাযোগের মূল কৌশল ইত্যাদি।
ঙ. বিবরণমূলক লেখার সাথে তথ্যমূলক লেখার মিল-অমিল খুঁজে বের করো।
উত্তর: বিবরণমূলক লেখায় থাকে কোনো কিছুর বর্ণনা এবং তথ্যমূলক লেখায় থাকে কোনো কিছু সম্পর্কে বিশেষ কোনো তথ্য বা তথ্যাদি। তবে বিবরণমূলক লেখায় যেমন নানা তথ্য থাকতে পারে, তেমনি তথ্যমূলক রচনা বিবরণমূলকও হতে পারে।
বলি ও লিখি
‘জগদীশচন্দ্র বসু’ রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: জগদীশচন্দ্র বসু পৃথিনীর নামকরা একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। এমনই নামকরা যে চাঁদের একটি গর্তের নাম তাঁর
নামানুসারেই হয়েছে। জগদীশচন্দ্র বসুর জন্ম বাংলাদেশে। জন্মেছিলেন একটি সাধারণ পরিবারে। তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। তিনি কেমব্রিজ ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন করেন। ছেলেবেলায় তাঁর প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে পড়াশোনার আগ্রহ তৈরি হয়। কর্মজীবনে জগদীশচন্দ্র বসু নিজেকে পদার্থ-বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হচ্ছে বৈদ্যুতিক চুম্বক-তরঙা, রেডিওর মাধ্যমে বিনা তারে যোগাযোগের মূল কৌশল ইত্যাদি। রেডিও-টেলিভিশন, ইন্টারনেট, মাইক্রোওয়েভ কুকার ইত্যাদি জগদীশচন্দ্র বসুর আবিষ্কারের ওপর নির্ভর করে তৈরি হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক বিজ্ঞানী হিসেবে উদ্ভিদের প্রাণ আছে এই তত্ত্ব ও উদ্ভিদের বৃদ্ধি মাপার যন্ত্র ক্রেসকোগ্রাফ আবিষ্কারও জগদীশচন্দ্রের বিশেষ কীর্তি। তাঁর বিশেষ কীর্তির জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান করে এবং তাঁকে সম্মান জানিয়ে ব্রিটিশ সরকার কাগুজে মুদ্রার নোটে তাঁর ছবিও ছাপে।
লেখা নিয়ে মতামত
‘জগদীশচন্দ্র বসু’ রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো।
উত্তর:
‘জগদীশচন্দ্র বসু’ রচনায় যা আছে | আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা |
১. নানা দেশে পৌছে গেছে বাঙালিরা। এমনকি, পৌছে গেছে চাঁদেও! নভোযানে করে যায়নি। তবে বাংলার নামটা চাঁদে পৌছে গেছে | এই তথ্যটির পেছনের যুক্তিটি দুবল। কারো নাম কোথাও দেখা থাকলেই সেখানে পৌঁছে যায় না। |
২. বিজ্ঞান কথাটার অর্থ আমরা জানি। | ‘বিজ্ঞান’ কথাটির অর্থ এখানে ব্যাখ্যা করা হয়নি। এতে করে বিজ্ঞান বলতে ঠিক কী বোঝায় তার পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় না। |
৩. যিনি বিজ্ঞান বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন, তিনি হলেন বিজ্ঞানী। | বিজ্ঞান বিষয়ে লেখাপড়া করলেই সবাই বিজ্ঞানী হয় না। |
৪. চাঁদের গায়ে কালো কালো অনেক দাগ দেখা যায়। এগুলো আসলে বড়ো বড়ো গর্ত। | এই গর্তগুলো সম্পর্কে আরও জানতে হবে, তাহলে চাঁদ সম্পর্কে আরও গভীর জ্ঞন লাভ করা যাবে। |
৫. এখন ঘরে ঘরে টেলিভিশন দেখা যায় | কথাটি আংশিক সত্য। সবার ঘরেই টেলিভিশন না-ও থাকতে পারে। |
৬. জগদীশ খুব ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের বিদ্যুৎ-তরঙ্গ আবিষ্কার করেন। একে বলে মাইক্রোওয়েভ। | আমি যাচাই করে দেখেছি, তথ্যটি সঠিক। |
তথ্যমূলক রচনা লিখি
উত্তর :
ক. স্কুলের চারপাশের ফলগাছ
বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে নানা ধরনের ফল উৎপাদিত হয়।
আমাদের স্কুলের চারপাশেও হরেক রকমের মৌসুমি ফলের গাছ রয়েছে। একেক ঋতুতে একেক ধরনের ফল পাওয়া যায়। স্কুল থেকে বের হতেই হাতের ডান পাশে রয়েছে দুটি নারকেলগাছ। সারাবছরই সেখানে নারকেল ধরে। এরপরেই রয়েছে কিছু আমগাছ। বসন্তে আমগাছে মুকুল ধরে, গ্রীষ্মে আম পাকে। এছাড়া আমাদের স্কুলের পেছনে রয়েছে আমগাছ। জামও একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। জামগাছের পাশেই একটি সফেদা গাছ আছে। সফেদা অন্যান্য ফলের চেয়ে একটু অপ্রচলিত হলেও খেতে সুস্বাদু। স্কুলের রাস্তার পাশে দুটি কামরাঙা গাছ আছে। কামরাঙা টক ফল, তবে এতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। আমাদের স্কুলের পেছনে রয়েছে ঘন বন। বনেও প্রচুর ফলগাছ আছে। সেখানে রয়েছে লটকন ও গোলাপজামের গাছ। লটকন পাকলে হলুদ বর্ণের হয়। খেতে টক লাগে। আর গোলাপজাম সুমিষ্ট সুস্বাদু একটি ফল। আমাদের স্কুলের পাশে থাকা মোট ফলগাছের সংখ্যা নিম্নরূপ:
নারকেল গাছ – ১টি
আম গাছ – ৫টি
জামগাছ – ১টি
সফেদা গাছ -১টি
কামরাঙ্গা গাছ – ২টি
লটকন গাছ – ৩টি
গোলাপজাম গাছ – ২টি
খ. স্কুলের চারপাশের ফুলের গাছ
আমাদের স্কুল একটি মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে অবস্থিত।”আমাদের স্কুলের সামনের রাস্তার পাশেই রয়েছে নদী। নদীর ধারে কাশফুল ফোটে, স্কুল থেকে সেই দৃশ্য খুবই সুন্দর দেখায়। স্কুলের সামনে রয়েছে একটি বাগান। এই বাগানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ফুল ফোটে, যা আমাদের ঋতুবৈচিত্র্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। বিশেষ করে শীতকালে বাগানের ফুলের আধিক্য লক্ষ করা যায়। এ সময় বাগানে গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি নানা রকমের ফুল ফোটে। স্কুলের রাস্তার পাশে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ রয়েছে। গ্রীষ্মে কৃষ্ণচূড়া ফোটে। কৃষ্ণচূড়ার রং লালচে। এছাড়া রয়েছে কিছু জারুলগাছ। জারুল ফুলের রং হালকা বেগুনি। জারুলও একটি গ্রীষ্মকালীন ফুল। আমাদের স্কুলে বারান্দার সামনেই রয়েছে একটি হাসনাহেনা ও একটি কামিনী ফুলের গাছ। উভয়েই শরৎকালীন ফুল। হাসনাহেনা রাতে ফোটে। দুটি ফুলই ঘ্রাণে চারপাশ মাতোয়ারা করে দেয়। আমাদের স্কুলের পেছনে রয়েছে একটি কদমগাছ। বর্ষাকালে কদম ফুল ফোটে। বর্ষাকালের প্রকৃতিতে কদম ফুল স্নিগ্ধতা সংযোজন করে।
আমাদের স্কুলের চারপাশের ফুলগাছে যে সময় ফুল ফোটে তার তালিকা নিম্নরূপ:
কৃষ্ণচূড়া – গ্রীষ্মকাল
গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা – শীতকাল
জারুল – গ্রীষ্মকাল
হাসনাহেনা – শরৎকাল
কামিনী – শরৎকাল
কদম – বর্ষাকাল
গ. আমার এলাকার পাখি
আমার এলাকা সবুজে সুশোভিত গাছপালা সংবলিত একটি শহর। এখানে সারা বছর পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায়। বিভিন্ন রকম পাখির মধুর ডাকে প্রতিদিন আমার ঘুম ভাঙে। আমার এলাকায় অসংখ্য প্রজাতির পাখি আছে, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে চড়ুই, টুনটুনি, বুলবুলি, কাক, চিল, দোয়েল, ময়না, শালিক, ঘুঘু ইত্যাদি। বিভিন্ন পাখির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেও ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। এগুলোর কোনোটি গান গায়, কোনোটি শিকার করে। পাখির মধ্যে দোয়েল অন্যতম। দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি। দোয়েলের গলার স্বর খুব মিষ্টি। কোকিলের কণ্ঠে ‘কুহু’ ঘর শুনে আমরা বসন্তের পূর্বাভাস পাই। কোকিল মূলত কাকের বাসায় ডিম পাড়ে। এছাড়া রয়েছে বুলবুলি, বউ কথা কও ইত্যাদি পাখি। কিছু পাখি মানুষের পোষ মানে। পোষ মানা পাখিদের মধ্যে ময়না, টিয়া, শালিক ইত্যাদি অন্যতম। কিছু পাখি শিকারি প্রবৃত্তির। যেমন- ইগল, মাছরাঙা। আমাদের এলাকায় ইগল দেখা যায় না তবে বিলে-ঝিলে প্রায়ই মাছরাঙা দেখা যায়। আরেকটি পাখির নাম বাবুই। বাবুই নারকেল, তাল, খেজুর প্রভৃতি গাছে নিজের বাসা বানায়। বাবুই পাখির বাসা খুবই শৈল্পিককারুকাজ সমৃদ্ধ। এজন্য বাবুই পাখিকে শিল্পী পাখিও বলা হয়।
নিচে বিভিন্ন পাখির রঙের বর্ণনা ছক আকারে দেখানো হলো:
দোয়েল – সাদা-কালো
ময়না – চকচকে কালো, মাথার কাছে হলুদ
মাছরাঙা – নীলাভ সবুজ ও কমলা
টিয়া – সবুজ
বাবুই – সোনালি হলুদ ও গাঢ় বাদামি
চড়ুই – ধূসর ও বাদামি
ঘ. আমার এলাকার মানুষের পেশাগত বৈচিত্র্য
আমি একটি মফসসল শহরে থাকি। আমার এলাকায় নানা শ্রেণি- পেশার মানুষ বাস করেন। আমার স্কুলে চার ধরনের পেশার মানুষ রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে আছেন শিক্ষক, পিয়ন, দারোয়ান ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তাঁদের সবাই নিজ কাজকে ভালোবাসেন ও নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন। স্কুলের বাইরে রয়েছে একটি বইয়ের দোকান। সেখানে বই ও অন্যান্য স্টেশনারি সামগ্রী কিনতে পাওয়া যায়। আমাদের শহরে একটি হাসপাতাল রয়েছে। হাসপাতালে আছেন ডাক্তার। মানুষের রোগ হলে ডাক্তার তাঁদের চিকিৎসা করেন। হাসপাতালের পাশেই রয়েছে থানা। থানা পুলিশের কর্মস্থল। পুলিশ আমাদের এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে থাকেন। থানার বাইরে রাস্তার ধারে একজন মুচি বসেন। আমাদের জুতা বা ব্যাগ তিনি ঠিক করে দেন। শহর থেকে অদূরে রয়েছে কৃষি জমি। কৃষকরা সে জমি চাষ করেন। তাঁরা ধান ও অন্যান্য শস্য উৎপাদন করে আমাদের খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। মসজিদে আছেন ইমাম ও মুয়াজ্জিন। ইমাম মসজিদে নামাজ পরিচালনা করেন। মুয়াজ্জিন আজান দিয়ে সাবইকে নামাজ পড়ার জন্য ডাকেন। মন্দিরে রয়েছেন পুরোহিত, তিনি পূর্জা-অর্চনা পরিচালনা করেন।
আমার এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষের কাজের ধরন ছক আকারে দেওয়া হলো;
শিক্ষকতা – শিক্ষাদান করা
পরিচ্ছন্নতাকর্মী – পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা
ডাক্তার – চিকিৎসা দেওয়া
মুচি – জুতা সেলাই করা
ইমাম – নামাজ পরিচালনা করা
মুয়াজ্জিন – আজান দেওয়া
পুরোহিত – পূজা পরিচালনা করা।
ঙ. স্কুলের চারপাশের দোকান
আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪০০। বহু লোকসমাগমের জায়গা বলে স্কুলের আশপাশে নানা ধরনের দোকান গড়ে উঠেছে। আমাদের স্কুল চত্বরে রয়েছে একটি ক্যানটিন। খিদে পেলে আমরা সেখান থেকে হালকা খাবার কিনে খাই। স্কুল চতুরের বাইরে একটি স্টেশনারির দোকান রয়েছে। সেখানে খাতা, কলম, পেনসিল ইত্যাদি পাওয়া যায়। এর পাশেই রয়েছে একটি বইয়ের দোকান। যেখানে আমাদের দরকারি বই কিনতে পারি। স্কুল থেকে বের হয়ে মুল ফটকের ডান পাশে একটি ঝালমুড়ির দোকান ও একটি ফুচকার দোকান রয়েছে। স্কুল ছুটির পরে আমরা সেখানে ঝালমুড়ি ও ফুচকা খেতে যাই। সেখানে একটি আইসক্রিমের দোকান বসে। স্কুলের চারপাশের দোকানগুলোর অধিকাংশই ভাসমান। তাদের নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। স্কুলের সামনে অনেক অভিভাবক অপেক্ষা করেন। তাঁদের কথা মাথায় রেখে ভাসমান বিভিন্ন দোকানের উপস্থিতি সেখানে লক্ষ করা যায়। এছাড়া বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রীর একটি দোকান আছে, সেখান থেকে আমরা খেলার প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করি।
কোন দোকানে কী কী জিনিস পাওয়া যায় তা ছকাকারে দেখানো হলো;
ক্যানটিন – চা, শিঙ্গাড়া, বিস্কুট ইত্যাদি।
স্টেশনারি দোকান – খাতা, কলম, পেন্সিল, ইরেজার ইত্যাদি
ফুচকার দোকান – ফুচকা, চটপটি ইত্যাদি।
বইয়ের দোকান – বই
ক্রীড়া সামগ্রীর দোকান – ফুটবল, ক্রিকেট বল, লুডু, দাবা সেট, ব্যাট ইত্যাদি।
৪র্থ পরিচ্ছেদ
বিশ্লেষণমূলক লেখা
পড়ে কী বুঝলাম
ক. এই রচনাটি কোন বিষয় নিয়ে লেখা?
উত্তর: রচনাটি বাঙালি জাতির ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে লেখা
খ. এই লেখা থেকে কয়েকটি বিশ্লেষণমূলক বাক্য খুঁজে বের করো।
উত্তর: ১) আলো-আঁধারের খেলায় অনেক পুরোনো কথা ঢাকা পড়েছে।
২) লোকজন নিজেরাই যুক্তি পরামর্শ করে কাজ করত, চাষ করত, ঘর বাঁধত, দেশ চালাত।
৩) কত লোক-লস্কর বহাল করা হলো কত ব্যবস্থা, কত নিয়মকানুন দেখা দিলো।
৪) মৌর্য-গুপ্ত, পাল-সেন, পাঠান-মোগল, কোম্পানি-রানি এদের কাল শেষ হয়েছে।
৫) একজন লিখছেন সমৃদ্ধির কথা, বিলাসের কথা, আনন্দের কথা। আরেকজন ছবি আঁকছেন নিদারুণ অভাবের, জ্বালাময় দারিদ্রোর, অপরিসীম বেদনার।
গ. বিবরণমূলক লেখার সাথে এই লেখাটির কী কী মিল-অমিল আছে?
উত্তর: বিবরণমূলক লেখার সঙ্গে এই লেখার মিল ও ‘অমিল দুইই আছে। বিবরণমূলক লেখায় যেমন তথ্যবহুল বর্ণনা থাকে, এখানেও তেমনটি লক্ষ করা যায়। তবে অমিল হলো বিবরণমূলক লেখায় বিশ্লেষণ থাকে না, আর এই লেখাটা হচ্ছে। বিশ্লেষণধর্মী।
ঘ. তথ্যমূলক লেখার সাথে এই লেখাটির কী কী মিল-অমিল আছে?
উত্তর: তথ্যমূলক লেখার সঙ্গে এই লেখার বড়ো মিল হচ্ছে- দুই ধরনের লেখাই বিবরণের মাধ্যমে লিখিত। আবার তথ্যমূলক লেখায় যেখানে তথ্যই প্রধান, এ লেখায়ও নানা রকম তথ্য দেওয়া আছে। তবে অমিল এই যে, তথ্যমূলক লেখায় যেখানে তথ্যই দেওয়া থাকে, এই লেখায় তথ্যের পাশাপাশি তথ্যের বিশ্লেষণও রয়েছে।
ঙ. এই লেখার উপর তোমার মতামত দাও।
উত্তর: এই লেখাটি একটি বিশ্লেষণমূলক লেখা। এই লেখায় আমরা বাঙালি জাতির ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতির নানা পরিচয় পাই। বিশ্লেষণাত্মক ভঙ্গিতে ইতিহাসের ধারা পরিবর্তন, সমাজের বিকাশ এবং সংস্কৃতির বিবর্তনের ধারা সম্পর্কে জানতে পারি।
বলি ও লিখি
‘কত কাল ধরে’ রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।
‘কত কাল ধরে’ রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো।
উত্তর: বাংলাদেশের প্রায় আড়াই হাজার বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসের অনেক কিছুই আমাদের অজানা। এককালে পৃথিবীতে সাধারণ মানুষের গুরুত্ব অনেক বেশি থাকলেও রাজাদের আগমনের পর তাঁরা হয়ে গেলেন ইতিযাসের নায়ক। তবুও সেই প্রজাদের ইতিহাস কিছু কিছু জানা যায়। তখনকার সময়ে পুরুষেরা পরত ধুতি, মেয়েরা পরত শাড়ি। জুতা পরত শুধু যোদ্ধা বা পাহারাদারেরা। আর সাধারণ লোকেরা কাঠের খড়ম পরত। ছেলেরাও লম্বা চুল রাখত, মেয়েরা তাদের চুলে বেণি বা খোঁপা করত, পা রাঙাত আলতা দিয়ে আর চোখে পরত কাজল। ছেলে- মেয়ে উভয়েই বিভিন্ন ধরনের গয়না পরত। তখনকার দিনে বাঙালিদের প্রধান খাদ্য ছিল ভাত। ভালো খাবারের মধ্যে ছিল গরম ভাতের সঙ্গে ঘি, পাটশাক আর মৌরলা মাছ।
ছেলেরা ছিল শিকারপ্রিয়। আর মেয়েরা সাঁতার দিতে ও বাগান করতে পছন্দ করত। যাতায়াতের মাধ্যম ছিল নৌকা, গরুর গাড়ি, ভুলি ও পালকি। তাদের বাড়িগুলো ছিল বাঁশ ও মাটির তৈরি। শুধু ধনী লোকদের বাড়ি হতো ইট-কাঠের। দেশে রাজার শাসন থাকায় সকলের জীবনযাত্রা একরকম হয়নি। কবি-সাহিত্যিকদের বর্ণনায় একই সমাজের ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। রাজার শাসন চলে গেলেও একই সমাজের দুই কূপের কথা শুধু প্রাচীনকালেই না, বর্তমানকালের কবি-সাহিত্যিকদের রচনাতেও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
লেখা নিয়ে মতামত
‘কত কাল ধরে’ রচনায় যা আছে | আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা |
১. বাংলাদেশের ইতিহাস প্রায় আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস | আড়াই হাজার বছর আগে কী কী হয়েছিল, সেই ইতিভাস কী জানা যায়নি? |
২. শুঁটকির চল সেকালেও ছিল বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে। | ‘শুঁটকি তৈরির প্রক্রিয়া কি এখানকার মতোই ছিল? |
৩. যাতায়াতের প্রধান উপায় ছিল নৌকা। | উত্তরাঞ্চলসহ অনেক অঞ্চলই নদীপ্রধান নয়, সেই সকল এলাকায় যাতায়াতের কী ব্যবস্থা ছিল? |
৪. মেয়েরা ‘ডুলি’তে চড়ত। | ‘ডুলি’ কী জিনিস? |
৫. সাধারণ লোকে মাটির পাত্রেই রান্না করত। | মাটির পাত্রগুলো নাড়াচাড়া করতে গিয়ে নিশ্চয়ই ভেঙে যেত। |
উপাত্ত বিশ্লেষণ
এভাবে এই ছকের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আরও কয়েকটি বাক্য রচনা করো।
উত্তর:
১. ছকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের ৭টি ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশে কতগুলো শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র ছিল এবং কেন্দ্রগুলোতে শরণার্থীর সংখ্যা কত ছিল তা উল্লেখ করা হয়েছে।
২. সবচেয়ে বেশি আশ্রয়কেন্দ্র ছিল পশ্চিমবঙ্গে এবং সংখ্যাটি হলো ৪৯২।
৩. সবচেয়ে বেশি শরণার্থী ছিল পশ্চিমবঙ্গে।
৪. সবচেয়ে কম আশ্রয়কেন্দ্র ছিল উত্তর প্রদেশে এবং সংখ্যাটি হলো ১।
৫. সবচেয়ে কম শরণার্থী ছিল উত্তর প্রদেশে।
৬. পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা সম্মিলিতভাবে বাকি ছয়টি প্রদেশে এর চেয়ে বেশি।
৭. আসামে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বিহারের ৩ গুণেরও বেশি ছিল।
৮. আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বিবেচনায় সবচেয়ে কম শরণার্থী ছিল বিহার প্রদেশে।
৯. ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রয়কেন্দের সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গের অর্ধেকের বেশি হলেও শরণার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ ভাগের ১ ভাগ।
১০. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বিভিন্ন প্রদেশের শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করে ভারত বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে উদাহরণ স্থাপন করেছে।
উপরে লেখা বিশ্লেষণমূলক বাক্যগুলোর ভিত্তিতে একটি অনুচ্ছেদ তৈরি করো। লেখার শুরুতে একটি শিরোনাম দাও।
উত্তর:
মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের শরণার্থী ও ভারতের অবদান
বাংলাদেশর মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত ছিল অকৃত্রিম বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। ভারত সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে দেয়। ভারতের ৭টি প্রদেশে সর্বমোট ৮২৫টি শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র নির্মিত হয়। পশ্চিমবক্তা, ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয় ও মধ্যপ্রদেশে প্রধান প্রধান আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। ভারতের শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ১ কোটি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র ছিল। পশ্চিমবফোর পর বেশি সংখ্যক শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র ছিল ত্রিপুরায়।
অন্যদিকে, মধ্য প্রদেশে হিল ৩টি এবং উত্তর প্রদেশে ছিল সবচেয়ে কম সংখ্যক শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্র।
৫ম পরিচ্ছেদ
কল্পনা নির্ভর লেখা
পড়ে কী বুঝলাম
ক. ‘বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি’ বলতে কী বোঝ?
উত্তর: বিজ্ঞানের বিভিন্ন ধারণাকে কেন্দ্র করে লেখা কাল্পনিক গল্পকে ‘বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি’ বলে।
খ. আগে আর কোন ধরনের কল্পকাহিনি তুমি পড়েছ?
উত্তর: এর আগে আমি রূপকথা, পশুপাখির কাহিনি, দৈত্যদানবের কাহিনি জাতীয় কল্পকাহিনি পড়েছি।
গ. ‘আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা’ গল্পের কোন কোন ঘটনা কাল্পনিক?
উত্তর: আমড়া ও ক্লাব নেবুলা’ গল্পে রঙ্গুর বলা ভালুক ও ময়ূরের ঘটনা, মহাকাশের আগন্তুকের ঘটনা, ফ্লাইং সসার থেকে বিদঘুটে প্রাণীর লেজারগান দিয়ে গুলি করার ঘটনা, রোবটের ঘটনা এবং ছাদে-আসা ফ্লাইং সসার ও কাঠির মতো মানুষদের ঘটনাগুলো কাল্পনিক।
ঘ. এই গল্পের কোন কোন ঘটনা বাস্তব?
উত্তর: এই গল্পে রঞ্জুর আব্বা, আম্মা ও বোন শিউলির সকো যেসব ঘটনা ঘটে তা বাস্তবের ঘটনা। যেমন রঞ্জুর বাবা-মার সঙ্গে ঘুমানো, শিউলির সঙ্গে একঘরে শুতে দেওয়া, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথোপকথন, রঞ্জুর চমৎকার চমৎকার গল্পফাঁদা, দোয়াত ভেঙে যাওয়ার ঘটনা, শিউলিকে দেওয়া রঙ্গুর হাতের আমড়া ইত্যাদি।
ঙ. রূপকথার সাথে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মিল-অমিল কোথায়?
উত্তর: রূপকথা ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির প্রধান মিল হচ্ছে দুটিই কল্পিত। রূপকথার কাহিনিতে থাকে লোকমুখে প্রচলিত নানা চরিত্রের গল্প। যেমন, রাজা-রানি, ড্রাগন, রাক্ষস-খোক্কস, পরি, মৎস্যকন্যা, ডাইনি ইত্যাদির গল্প; অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিতে থাকে উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর নানা কাহিনি ও চরিত্রের গল্প। যেমন- মহাকাশ অনুসন্ধান, সময়-ভ্রমণ, মহাবিশ্বের জীবন, রোবট, ফ্লাইং সসার ইত্যাদির গল্প। রূপকথা অনেকের সৃষ্টি, কিন্তু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ব্যক্তিবিশেষের সৃষ্টি।
বলি ও লিখি
‘আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা’ গল্পটি নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা’ গল্পের মূল চরিত্র রঞ্জু। রঘু একজন সমৃদ্ধ কল্পনাশক্তির অধিকারী বালক। সে প্রচুর বানিয়ে গল্প বলে ও ধীরে ধীরে তার এ প্রবণতা বাড়তেই থাকে। সবচেয়ে বেশি বেড়ে যায় যখন সে সায়েন্স ফিকশন পড়া শুরু করে। রজুর গল্পগুলোর সবচেয়ে মনোযোগী শ্রোতা তার বড়ো বোন শিউলি। একদিন রন্ধু শিউলিকে বলল, সে নাকি একটি রোবটের দেখা পেয়েছে। সেই রোবট নাকি স্বরে কথা বলে, তার মাথার দুই পাশ থেকে আলো বের হয় এবং তার চোখগুলো সবুজ। রোবটটি নাকি রন্ধুর কাছে সাহায্যও চেয়েছে, তা হলো রঞ্জু যাতে রোবটের জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে দেয়। রোবট রগুকে বলেছে, তাদের যখন খিদে পায় তখন তাদের মোটা মোটা ডি সাইজের ব্যাটারি খেতে হয়। রঞ্জু তখন রোবটের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাকে দুই ডজন ব্যাটারি কিনে দিলো এবং রোবট সেগুলো কচকচ করে খেয়ে ফেলল। উপকারের বিনিময়ে রোবটটি রঞ্জুকে তেঁতুলের বিচি সদৃশ কিছু দিলো, যেগুলো থেকে গাছ হয় এবং সেই গাছ থেকে ক্যানসারের ওষুধ আবিষ্কার করা যায়। শিউলি মনোযোগ দিয়ে শুনলেও এর কিছুই বিশ্বাস করেনি। একদিন রঞ্জু মায়ের বকা খেয়ে মন খারাপ করে ছাদে গিয়ে বসল। হঠাৎ দেখল একটি ছোটো মহাকাশযান এসে ছাদে নেমেছে। সেখান থেকে মানুষের মতো। দেখতে একটি প্রাণী বের হয়ে আসল। সে দিব্যি বাংলায় কথা বলতে পারে। তাদের, মহাকাশযানের ফুয়েল ট্যাংকে একটি সিকেজ দেখা দেওয়ায় সে রঞ্জুর কাছে সাহায্য চাইতে এসেছে। রন্ধুর কাছে থাকা চুইংগাম দিয়ে সে তার মহাকাশযানের লিকেজ ঠিক করে নিলো। এবার তারা তাদের বাসস্থান ক্র্যাব নেবুলাতে ফিরে যেতে পারবে। ফিরে যাওয়ার সময় অদ্ভুত সেই প্রাণী রঙ্গুকে একটি আমড়া উপহার দিলো।
আমড়ার আঁটি দেখতে ক্র্যাব নেবুলার মতোই। রন্ধু এবার আর শিউলিকে পুরো কাহিনি বলার উৎসাহ পেল না। শিউলি যখন তাকে জিজ্ঞেস করল সে আমড়া কোথায় পেয়েছে, রজু জবাব দিলো, “সবাই যেখানে পায় সেখানেই পেয়েছি।”।
লেখা নিয়ে মতামত
‘আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা’ রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো।
উত্তর :
আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা’ রচনায় যা আছে | আমার মতামত ও জিজ্ঞাসা |
১. সায়েন্স ফিকশনের উদ্ভট কাহিনি পড়ে তার মাথাটা পুরোপুরি বিগড়ে গেল। | এই বক্তব্যটির যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না। সায়েন্স ফিকশন পড়ে অনেকের কল্পনার শক্তি বিকশিত হয়। |
২. তখন রোবটটা আমাকে বলল তাদের যখন খিদে পায় তখন তাদের ব্যাটারি খেতে দিতে হয়। | ব্যাটারি খেলে রোবট শক্তি পায় না, বরং ব্যাটারির চার্জ থেকে শক্তি পায়। |
৩. ব্যাটারি কেনার পয়সা পেলি কই? রোবটটাই দিলো, তার কাছে সব দেশের টাকা আছে। | এটি বিশ্বাসযোগ্য কথা নয়। কোনো দেশের টাকা সে ছাপাতে পারবে না, এটা অপরাধ। তাহলে রোবটের কাছে কীভাবে সব দেশের টাকা থাকবে? |
৪. তোমার বাম পকেটে একটা চুইংগাম আছে। সেটা চিবিয়ে নরম করে দাও, আমাদের ট্যাংকের লিকটাতে সেটা লাগিয়ে নেব | ব্যাপারটি আমার কাছে অবাস্তব মনে হয়েছে। স্পেসশিপের ফুয়েল ট্যাংকের লিক চুইংগামে সারবার কথা নয়। |
৫. এগুলো দেখলে মনে হয় তেঁতুলের বিচি, আসলে এর থেকে যে গাছ বের হয় সেটা থেকে ক্যানসারের ওষুধ বের করা যাবে। | ক্যানসারের ওষুধ আবিষ্কার গবেষণা ছাড়া সম্ভব নয়। তেঁতুলের বিচির মতো দেখতে বীজের গাছ থেকে ক্যানসারের ওষুধ কীভাবে বের করবে তা বলা হয়নি। |
কল্পনানির্ভর রচনা লিখি
উত্তর:
রোবটের কাঁথা
নিলয় নন্দী
খুব আয়েশ করে পান চিবাচ্ছিলেন শরফুদ্দিন মোল্লা। দিন কয়েক আগে কাজের লোকটাকে ভাগিয়ে দিয়ে খুব বিরক্ত ছিলেন তিনি লোকটা কাজ করত খুবই ভালো তবে যখন তখন নানা বিষয়ে তর্ক করত। শেষে দেনা-পাওনা, না চুকিয়েই শরফুদ্দিন তাকে বিদায় করে দেন। লোকটা যাওয়ার আগে খুব হম্বিতম্বি করে গেছে, এক অর্থে অভিশাপ দিয়ে গেছে যে শরফুদ্দিন একদিন উপযুক্ত ফল পাবেন। হাসতে হাসতে সোফার ওপর গড়িয়ে পড়লেন তিনি। দু দিন আগেই রোবটিকন কোম্পানি থেকে একটা সার্ভেন্ট রোবো কিনেছেন তিনি। দামটা একটু বেশি পড়লেও এখন আর কোনো চিন্তা নেই। ফালতু তর্ক আর শুনতে হবে না।
‘স্যার, আপনার চা।’ রোবো-১২৯ চায়ের কাপটা টেবিলে নামিয়ে রাখল। ‘এহহ! চায়ে চিনি দেস নাই ক্যান?’ ধমকে উঠলেন শরফুদ্দিন। ‘চোখের মাথা খাইছস?’
‘স্যার, আপনার ব্লাড-সুগার বিপজ্জনক মাত্রা অতিক্রম করছে। আমি আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে শঙ্কিত।’ ‘তোরে কি কইছিনি আমার সাভ্য নিয়া শংকিত করতে? দুপুরের খাওন কী রানছস?’
‘স্যার, করলার তরকারি, পেঁপের ঘণ্ট আর কাঁচাকলার কোল। আপনার হাটের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমার প্রেগ্রাম সেভাবেই সেট করা হয়েছে।
‘তর পোগরামের আমি নিকুচি করি। তর গুষ্টি কিলাই।’
রোবো-১২৯ তার বুকে লাগানো একটি সুইচে চাপ দিলো, ‘দুঃখিত স্যার, আপনি হয়তো জানেন না আমি মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন দ্বিতীয় প্রজন্মের রোবট। আপনি আমার কোমলানুভূতিতে আঘাত দিতে চাইছেন। আমি আন্তর্জাতিক রোবটাধিকার সংস্থায় আপনার নামে ২২৮ ধারা খ-এ মামলার আবেদন জানিয়েছি।’
শরফুদ্দিন চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে থাকলেন তারপর বললেন, ‘আমি তর খ্যাতা পুড়ি।’
রোবো-১২৯ তার বুকে লাগানো সুইচটায় আবার চাপ দিলো, ‘দুঃখিত স্যার, আমার কোনো কাঁথা নেই। এবার ২২৮ ধারা গ-এ মামলা করা হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই রোবটাধিকার সংস্থার কর্মীরা আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করবে। প্রয়োজনে আপনাকে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হবে।’
শরফুদ্দিন চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে থাকলেন তারপর বিড়বিড় করে কী যে বললেন বোঝা গেল না।