এই পোস্টে আমরা জানব ষষ্ঠ শ্রেনীর, বিষয় জীবন ও জীবিকা এর ষষ্ঠ অধ্যায়, দশে মিলে করি কাজ সম্পর্কে।
দশে মিলে করি কাজ
কাজ ১ : অনুপদের ক্লাসে সবাই মিলে কেন ডিসপ্লে বোর্ড বানালো?
উত্তর: অনুপদের স্কুলটি বেশ সুন্দর। ক্লাসরুম গুলো অনেক বড়। ক্লাসের শিক্ষকরা বিভিন্ন প্রয়োজনে ওদেরকে পোস্টার বানাতে বলে। ওরা পোস্টার বানিয়ে রশিতে ঝুলিয়ে রাখে। কিন্তু রশিতে পোস্টার ঝুলালে ক্লাসরুমের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। এছাড়া ফ্যানের বাতাসে পোস্টারগুলো ছিড়ে যায়। তাই সবাই মিলে পরামর্শ করে ঠিক করল যে তারা একটি ডিসপ্লে বোর্ড বানাবে।
কাজ ২ : শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে দলে বিভক্ত হয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থান পরিদর্শন করি এবং দলগত আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজ দলের ঘরটি পুরণ করি-
ছক ৬.১: সমস্যা অনুসন্ধান
দল | সমস্যার ধরন | সমস্যা |
ক দল | অবকাঠামোগত | ১. ওয়াশরুম সংকট ২. পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সমস্যা। ৩. অভিভাবকদের বসার জায়গা সংকট। |
খ দল | খেলাধুলা, ক্রীড়াসংক্রান্ত | ১. পর্যাপ্ত খেলার সামগ্রী নেই। ২. ক্রীড়া প্রশিক্ষক নেই। ৩. খেলার মাঠটি অনেক ছোট। |
গ দল | সাংস্কৃতিক কার্যক্রমসংক্রান্ত | ১. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য জায়গার সমস্যা। ২. পরিচালনাগত সমস্যা। ৩. আর্থিক সমস্যা। |
ঘ দল | বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের উপযোগী পরিবেশ সংক্রান্ত | ১. বিদ্যালয়ে আসার পরিবহন সমস্যা। ২. সেবা-যত্নের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল সমস্যা। ৩. বিশেষ শিক্ষার্থীদের সাথে কীভাবে আচরণ করবে তার প্রশিক্ষণের সমস্যা। |
ঙ দল | ঝরে পড়া ও অনিয়মিত শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক কোনো সমস্যা | ১. শিক্ষার্থীর পরিবারের আর্থিক সমস্যা। ২. কুসংস্কারজনিত সমস্যা। ৩. সামাজিক সমস্যা। |
চ দল | বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ে আসা- যাওয়ার পথের কোনো সমস্যা | ১. পরিবহনের সমস্যা। ২. অপ্রশস্ত ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাবিহীন ভঙ্গুর রাস্তা। ৩. আসা-যাওয়ার পথে ময়লার গন্ধ। ৪. বখাটে ছেলেদের আড্ডা। |
কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতার অনুশীলন
কাজ ৩: এখানে কয়েকটি ঘটনা দেওয়া আছে। এগুলো পড়ে তোমাদের দলে আলোচনা কর এবং কীভাবে কার্যকর যোগাযোগ করে সমস্যাটি কাটিয়ে ওঠা যায় তা লেখ। ভূমিকাভিনয় করে অন্য বন্ধুদের দেখাও ।
ক) তুমি বাসে ওঠার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছ। লম্বা লাইন। এমন সময় একজন এসে মাঝখানে তোমার সামনে ঢুকে গেল। লোকটা নিয়ম ভঙ্গ করেছে। তুমি এখন কী করবে? | বিনয়ের সাথে তাকে পিছনের লাইনে দাড়াতে বলব। কাজ না হলে বাস কর্তৃপক্ষের নিকট বলব। |
খ) তুমি ফুটবল খেলতে ভালোবাসো। কিন্তু প্রতিদিনই ফুটবল খেলতে গিয়ে তুমি হাতে, পায়ে, নাকে, মুখে বা কোথাও ব্যথা পেয়ে বাড়ি ফিরে আসো। এতে মা রাগ করে বললেন, এখন থেকে তোমার ফুটবল খেলতে যাওয়া বন্ধ।” তুমি এখন কী করবে? | প্রথমে মায়ের কথাই মেনে নেব। পরে যখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাব তখন মাকে মানাতে চেষ্টা করব। পরবর্তীতে সাবধানে খেলব এ কথা বলে মাকে বোঝানোর চেষ্টা করব। |
গ) তুমি প্রতিদিন বান্ধবীদের সঙ্গে স্কুলে যাও। রাস্তায় যাওয়ার পথে চায়ের দোকানের সামনে প্রায়ই কয়েকজন দুষ্ট ছেলে তোমাকে ও তোমার বান্ধবীদের উদ্দেশ্য করে টিপ্পনী কাটে, হাসাহাসি করে। তুমি/তোমরা এখন কী করবে? | আমরা প্রথমে তাদের বিনয়ের সাথে বুঝাবো। পরে কাজ না হলে এলাকার মুরুব্বি অভিভাবকদের বলব। তারপরেও যদি কাজ না হয় তাহলে অভিভাবকদের মাধ্যমে আইনী সহায়তা নেব। |
ঘ) টিফিন ঘন্টায় তোমরা কয়েকজন মিলে মাঠে বসে গল্প করছিলে। এমন সময় দোতলার বারান্দা থেকে একজন বোতল থেকে পানি নিয়ে হাত ধুচ্ছিল আর পানির ছিটা এসে তোমাদের পায়ে পড়ল। তোমরা এখন কী করবে? | প্রথমে তাকে বিনয়ের সাথে বলব যাতে সে সতর্ক হয় এবং এ ধরনের কাজ না করে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের সাথে বিষয়টি শেয়ার করব। |
ঙ) তোমাদের ক্লাসে গণিতের স্যার ভীষণ কড়া। তিনি একটানা অঙ্ক করিয়ে যান। মাঝখানে কেউ প্রশ্ন করলে রাগ করেন। তুমি কিছুতেই অঙ্কের দুটো জায়গায় বুঝতে পারছ না। তোমার পাশের জনও বুঝতে পারছে না। তুমি/তোমরা এখন কী করবে? | প্রথমে নিজের থেকে মনোযোগী হব। আরো ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করব। একেবারেই না বুঝতে পারলে বিনয়ের সাথে সম্মান বজায় রেখে স্যারকে জিজ্ঞেস |
চ) তোমাদের ক্লাসে একজন সহপাঠী খুব আবেগপ্রবণ। অল্পতেই কষ্ট পায়; কান্নাকাটি করে। দুষ্টামীর ছলে কেউ তাকে কিছু বললেও সে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে। একদিন বেঞ্চ টান দিতে গিয়ে ওর ব্যাগটি নিচে পড়ে যায়। তখন বাংলার ক্লাস চলছিল। ও চিৎকার দিয়ে কাঁদতে শুরু করল। সবাই ঘাবড়ে গেল। তুমি/তোমরা এখন কী করবে? | সহপাঠিরা সবাই মিলে তাকে বোঝাবো এবং শান্ত করব। কাজ না হলে অভিভাবকদের ডেকে আনবো। |
কাজ ৪ : যেকোনো সমস্যা থেকে উত্তরণের অনেক পথ থাকে। অর্থাৎ সমস্যা হয়তো একটাই, কিন্তু সমাধান অনেকগুলো। তাই চল-
একের অধিক উপায় খুঁজি
সমস্যার সমাধান করি।
উত্তর : আমার নাম জিহান। আমাদের বিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত পরিমাণে ওয়াশরুম নেই। তাই আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ব্যাপক সমস্যা হয়। এ সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার জন্য ১০ সদস্যের একটি দল তৈরি করেছি। দলের নাম দোয়েল।
ছক ৬.২: সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করা
দলের নাম: দোয়েল সমস্যার ক্ষেত্র: বিদ্যালয় কেন্দ্রিক সমস্যার বিবরণ: ওয়াশরুম সংকট, ওয়াশরুমে পানির সংকট, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। | সম্ভাব্য সমাধানসমূহ |
উপায় ১: প্রধান শিক্ষকের নিকট আবেদন করে সমস্যা সমাধান করা। | |
উপায় ২: আমরা নিজেরাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের থেকে চাঁদা তুলে ওয়াশরুম তৈরি এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ করব। | |
উপায় ৩: এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তির কাছে সমস্যা তুলে ধরা এবং তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওয়াশরুম তৈরি করা।নিজেরা কমিটি গঠনের মাধ্যমে তা রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিবেশ সুন্দর করা। |
কাজ ৫: সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়া মানেই হলো সমস্যার সঙ্গে আরও কিছুদিন বসবাস করা। তাতে আমরা সবকাজেই পিছিয়ে পড়বো। তাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এসো সবাই-
বিচার করে সূক্ষ্মভাবে, তথ্য জমাই ভাণ্ডারে,
যোগাযোগে পটু হয়ে সমস্যাকে যাই উতরে।
সমস্যার সমাধান পর্যালোচনা
সমস্যা | সমস্যা সমাধানের উপায় | উপায়টি বেছে নেওয়ার যৌক্তিক কারণ |
বিদ্যালয়ে আসার পথে মাটির রাস্তা বন্যায় ভেঙে গেছে। | ১৫-২০ জনের একটি দল তৈরি করে নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রম ও অর্থ সংগ্রহের ভিত্তিতে রাস্তা নির্মাণ। | প্রক্রিয়াগত জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং অল্প সময়ের মধ্যে রাস্তা তৈরি হবে। |
সমস্যা সমাধানে আমার প্রয়াস
উত্তর : সমাধানের উপায় বিবেচনা করে কে কোন দায়িত্ব পালন করবে, কখন পালন করবে, কীভাবে পালন করবে তার একটি সম্পূর্ণ পরিকল্পনা তৈরি করে এবং সমস্যা সমাধান সম্পর্কে শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক রিপোর্ট করা হলো:-
আমার নাম জীবন সরকার। আমাদের বিদ্যালয়ে আমার পথে মাটির ভাঙা রাস্তাটি নির্মাণের উপায় হিসেবে ১৫-২০ জনের একটি দল তৈরি করেছি যা পূর্বেই আলোচনা করেছি। আগের দিন আমরা ৫ জন মিলে একটা মিটিং করলাম কীভাবে রাস্তাটি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পুনর্নির্মাণ করা যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্কুলের পাশেই একজন মুরুব্বির সাথে মাটি সংগ্রহের ব্যাপারে আলোচনা করলাম। তিনি সম্পর্কে আমাদের নানা হন। তিনি বললেন রাস্তা নির্মাণের জন্য যত মাটি প্রয়োজন পাশেই আমার একটা পুকুর আছে সেখান থেকে নিবে। তোমাদের স্কুলের রাস্তা নির্মাণের ব্যাপারে মাটি দিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। পরের দিন সকাল থেকে কাজে লেগে গেলাম। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে ৩ জনকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম কোদাল, টুকরি আর বড় ডিম সংগ্রহের জন্য। পরের দিন ৩টি কোদাল, ৫টি টুকরি ও ৩টি ডিম নিয়ে আসা হলো। ৩ অনকে দায়িত্ব দেওয়া হলো পুকুরে নেমে মাটি কাটার। ৩ জন মাটি মাথায় করে পুকুরের উপরে উঠিয়ে নিবে। ১০ জন পুকুরের উপর থেকে মাটি নির্ধারিত স্থানে ফেলবে। একজন দক্ষ শ্রমিক রাখা হলো রাস্তায় মাটিগুলো ঠিকমতো বসানোর জন্য বা সাইজ করার জন্য। প্রতি ১ ঘণ্টা পর পর বিশ্রাম নিয়ে নাস্তা খাওয়া হয়। এভাবে সকাল থেকে শুরু করে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থীর নির্মিত দলের নিরলস প্রচেষ্টায় রাস্তাটি পুনঃনির্মাণ হলো। সার্বিক তত্ত্বাবধানে দুইজন শিক্ষক ও দুইজন স্থানীয় মুরুব্বি ছিলেন। তারা কাজটি যাতে শৃঙ্খলভাবে হয় সেটা তদারকি করেছেন। কাজটি করতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শতভাগ চেইন অফ কমান্ড মানা হয়েছে। একজনের কাজের সাথে অন্যজনের কাজের যে সমন্বয় থাকার কথা ছিল তাই হয়েছে। এককথায় কাজটি সঠিক প্রক্রিয়ায় নিয়ম মেনে শতভাগ শৃঙ্খলতার সাথে করা হয়েছে। প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে সক্ষম হয়েছে। মোট কথা সুন্দর এবং সুশৃঙ্খলভাবেই সবার পরিশ্রমের বিনিময়ে রাস্তাটির পুনর্নির্মাণ করা সম্পন্ন হয়েছে। এমন সুন্দর একটি কাজ করতে পেরে আমরা সকলেই আনন্দিত এবং গর্ববোধ করছি। |