এই পোস্টে আমরা জানব সপ্তম শ্রেনীর, বিষয় বিজ্ঞান (অনুশীলন বই) এর ৩য় অধ্যায়, কোষ পরিভ্রমণ সম্পর্কে।
কোষপ্রাচীরঃ কোষের বাহিরের দিকে তিন স্তর বিশিষ্ট শক্ত আবরনকে বলা হয় কোষপ্রাচীর। উদ্ভিদ কোষে কোষপ্রাচীর থাকে। প্রাণীকোষে কোষপ্রাচীর থাকে না।
কোষপ্রাচীর সেলুলোজ এবং লিগনিন দিয়ে তৈরি।
কোষ ঝিল্লি: কোষের বাহিরের দিকে দুই স্তর বিশিষ্ট নমনীয় আবরণ বা পর্দা(ঝিল্লি) কে কোষ ঝিল্লি বলে। প্রাণী এবং উদ্ভিদ উভয় কোষেই কোষ ঝিল্লি থাকে।
প্রোটোপ্লাজম: কোষ প্রাচীর এবং কোষ ঝিল্লিকে অতিক্রম করে ভিতরের দিকে গেলে যে স্বচ্ছ, ঘন ও জেলির মতো বস্তু দেখা যায় তাকে বলে প্রোটোপ্লাজম। প্রোটোপ্লাজমের শতকরা ৭৫ থেকে ৯৫ ভাগ পানি।
নিউক্লিয়াস: প্রোটোপ্লাজমে অবস্থিত দ্বি-স্তরবিশিষ্ট ঝিল্লি দিয়ে ঘেরা ঘন, অস্বচ্ছ বস্তুটি হলো নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াস কোষভেদে সাধারণত গোলাকার, উপবৃত্তাকার বা নলাকার হয়ে থাকে। নিউক্লিয়াস কোষের সব ধরনের কার্য কলাপের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
স্লাইটোপ্লাজম প্রোটিন দ্বারা গঠিত। সাইট্রোপ্রজমের মধ্যে যে অঙ্গানুগুলো থাকে তাকে বলে সাইট্রোপ্লাজমীয় অঙ্গানু ।
যেমন: কোষ গহ্বর, গলজি বডি, আন্তঃপ্লাজমীয় জালিকা, সেন্ট্রোসোম, লাইসোসোম
মাইটোকন্ড্রিয়া: মাইটোকন্ড্রিয়া দুই স্তর বিশিষ্ট আবরণ বা ঝিল্লি দ্বারা আবৃত থাকে। এই ঝিলিটি প্রোটিন ও লিপিড দিয়ে তৈরি। উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া আছে। মাইটোকন্ড্রিয়া শক্তি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একে কোষের শক্তিঘর বা Power House বলা হয়। মাইটোকন্ড্রিয়ার ঝিলির বাইরের আবরণটি মসৃণ কিন্তু ভিতরের আবরণটি স্থানে স্থানে ভাঁজ হয়ে ভেতরের দিকে ঝুলে থাকে এ ভাঁজগুলোকে ক্রিস্টি বলা হয়। মাইটোকন্ড্রিয়ার ভেতরের অর্ধভরণ দানাদার পদার্থকে ম্যাট্রিক্স বলে।
প্লাস্টিডঃ উদ্ভিদ কোষে বিভিন্ন রঞ্জক কণিকা বহনকারী অঙ্গানুগুলোকে বলা হয় প্লাস্টিড। প্লাস্টিড শুধুমাত্র উদ্ভিদ কোষেই পাওয়া যায়। প্লাস্টিড তিন প্রকার যথা- ক্রোমোপ্লাস্ট, ক্লোরোপ্লাস্ট এবং লিউকোপ্লাস্ট। সবুজ ছাড়া অন্যান্য বর্ণ যেমন লাল, হলুদ ইত্যাদি বর্ণ বহনকারী প্লাস্টিডকে ক্রোমোপ্লাস্ট বলা হয়। ফুলের পাপড়িতে ও ফলে ক্রোমোপ্লাস্ট থাকে। উদ্ভিদে বর্ণহীন যেসব প্লাস্টিড থাকে সেগুলোকে বলা হয় লিউকোপ্লাস্ট। উদ্ভিদের মাটির নিচের অংশ ভূ-নিম্নস্থ কান্ড, মূল প্রভৃতিতে লিউকোপ্লাস্ট থাকে। এরা খাদ্য সঞ্চয় করে।
উদ্ভিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্লাস্টিড হচ্ছে ক্লোরোপ্লাস্ট। ক্লোরোপ্লাস্টে সবুজ বর্ণের ক্লোরোফিল নামের অণু থাকে। এর ফলে উদ্ভিদের পাতা ও কচি শাখা প্রশাখা সবুজ দেখায়। তাছাড়া সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটি সংঘটিত হয় ক্লোরোপ্লাস্টে।
প্রশ্ন: উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষে কী কী কোষ অঙ্গাণু আছে?
উত্তর: উদ্ভিদ কোষে আছে কোষ প্রাচীর, কোষ ঝিল্লি, প্রোটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস, কোষ গহ্বর, গলজি বডি, আন্তঃপাজমীয় জালিকা, মাইটোকন্ড্রিয়া, প্লাস্টিড। প্রাণী কোষে আছে কোষ ঝিল্লি, প্রোটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস, কোষ গহ্বর, গলজি বডি, আন্তপ্রাজমীয় জালিকা, মাইটোকন্ড্রিয়া সেন্ট্রোসোম, লাইসোসোম ইত্যাদি।
প্রশ্ন: প্লাস্টিড, মাইটোকন্ড্রিয়া ও নিউক্লিয়াসে কী কী বিদ্যমান?
প্লাস্টিডে আছে বহিঃস্তর ঝিল্লি, অন্তন্তর ঝিলি, লুমেন, গ্রানাম, স্ট্রোমা, থাইলাকয়েড ইত্যাদি মাইটোকন্ড্রিয়াতে আছে ক্রিস্টি, ম্যাট্রিক্স, অভ্যন্তরীণ ঝিল্লি, বাহ্যিক ঝিল্লি ইত্যাদি। নিউক্লিয়াসে আছে নিউক্লিয়ার ঝিল্লি, ক্রোমাটিন জালিকা, নিউক্লিওলাস, নিউক্লিয়ার রন্দ্র, নিউক্লিওপজমা ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ উদ্ভিদকোষ ও প্রাণীকোষের অঙ্গাণুর মধ্যে মিল-অমিলগুলো লেখ।
উদ্ভিদকোষ ও প্রাণীকোষের মধ্যে মিলসমূহ:
১। উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় কোষেই নিউক্লিয়াস আছে।
২। উভয় কোষেই গলজি বডি আছে।
৩। উভয় কোষেই আত্মপ্লাজমীয় জালিকা আছে।
৪। উভয় কোষেই মাইটোকন্ড্রিয়া জালিকা আছে।
৫। উভয় কোষেই সাইটোপ্লাজম আছে।
৬। উভয় কোষেই কোষ ঝিল্লি আছে।
উদ্ভিদকোষ ও প্রাণীকোষের মধ্যে অমিলসমূহ:
১। উদ্ভিদ কোষে কোষগহ্বর আছে। প্রাণীকোষে নাই থাকলেও আকারে অনেক ছোট।
২। উদ্ভিদ কোষে কোষ প্রাচীর আছে, প্রাণী কোষে নাই ।
৩। উদ্ভিদ কোষে প্লাস্টিড আছে, প্রাণী কোষে নাই।
৪। প্রাণী কোষের নিউক্লিয়াস কেন্দ্রে থাকে, উদ্ভিদকোষের ক্ষেত্রে পাশে থাকে।
৫। প্রাণী কোষে লাইসোসোম ও সেন্ট্রোসোম আছে উদ্ভিদ কোষে নাই।
👉 পদার্থের সুলুকসন্ধান – সমাধান | বিজ্ঞান – অনুশীলন বই | সপ্তম শ্রেণী
প্রশ্ন: টিউমার কীভাবে ক্যান্সারের রূপ নিতে পারে?
উত্তর: মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি এভাবে কোষ বিভাজন হয়। সংখ্যাবৃদ্ধি করার প্রক্রিয়ায় একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে কোষগুলোর মৃত্যু হয়। এভাবে জীবের কোষের সংখ্যার একটি ভারসাম্য রক্ষা হয়। কিন্তু যদি কোনো কারণে কোষের মৃত্যু না হয়, অথচ নতুন নতুন কোষ তৈরি হতেই থাকে তবে শরীরে টিউমার হতে পারে, যা এক পর্যায়ে ক্যান্সারের রূপ গ্রহণ করে।
👉 সূর্যালোকে রান্না – সমাধান | বিজ্ঞান – অনুশীলন বই | ৪র্থ অধ্যায় | সপ্তম শ্রেণী
প্রশ্ন: জীবের স্বাভাবিক প্রজনন ও বৃদ্ধির জন্য স্বাভাবিক কোষ বিভাজন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: মায়োসিস প্রক্রিয়ায় জনন কোষ তৈরি হয়। জননকোষের নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোসোম থাকা দরকার। যদি কোনো কোষে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা কম ক্রোমোসোম থাকে তবে এসব জনন কোষ থেকে অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সন্তান জন্ম নেবে। অন্যদিকে মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় একটি থেকে দুটি, দুটি থেকে চারটি এভাবে কোষ বিভাজন হয়। সংখ্যাবৃদ্ধি করার প্রক্রিয়ায় একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে কোষগুলোর মৃত্যু হয়। এভাবে জীবের কোষের সংখ্যার একটি ভারসাম্য রক্ষা হয়। কিন্তু যদি কোনো কারণে কোষের মৃত্যু না হয়, অথচ নতুন নতুন কোষ তৈরি হতেই থাকে তবে শরীরে টিউমার হতে পারে, যা এক পর্যায়ে ক্যান্সারের রূপ গ্রহণ করে।
তাই বলা যায়, জীবের স্বাভাবিক প্রজনন ও বৃদ্ধির জন্য স্বাভাবিক কোষ বিভাজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ফিরে দেখা
দলের সবার সাথে কাজগুলো করতে তোমাদের কেমন লেগেছে? নতুন কী শিখলে এই শিখন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে?
উত্তর: দলের সবার সাথে কাজগুলো করতে পেরে আমার খুব ভালো লেগেছে। এই শিখন অভিজ্ঞতার মধ্য থেকে জানতে পারলাম- উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষের প্রধান অঙ্গাণুগুলোর গঠন এবং কাজ, কোষের বিভাজন ও সংখ্যা বৃদ্ধি, অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের পরিণতি।