সাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি – ( শেষ অংশ) সমাধান | বাংলা – ৬ষ্ঠ অধ্যায় | সপ্তম শ্রেণী

সাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি – ( শেষ অংশ) সমাধান | বাংলা – ৬ষ্ঠ অধ্যায় | সপ্তম শ্রেণী

পূর্ববর্তী অংশের সমাধান পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন :

👉 সাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি – (১ম অংশ) সমাধান | বাংলা – ৬ষ্ঠ অধ্যায় | সপ্তম শ্রেণী

এই পোস্টে আমরা জানবো ৭ম শ্রেনীর  বিষয় বাংলা এর ষষ্ঠ অধ্যায়, সাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি সম্পর্কে।

৫ম পরিচ্ছেদ

প্রবন্ধ

বলি ও লিখি

‘বাংলা নববর্ষ’ প্রবন্ধটি নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: নববর্ষ একটি সর্বজনীন উৎসব। আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ও পারস্পরিক কল্যাণ কামনার দিন। বাংলা সনের প্রথম মাসের প্রথম দিনটি হলো বাংলা নববর্ষের দিন। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় দিনটি আমরা উদ্‌যাপন করি।

বর্তমানে আমরা যেভাবে বৃহৎ পরিসরে আনন্দ-উল্লাসের সঙ্গে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করি, পাকিস্তান আমলে এমনটি ছিল না। ‘পাকিস্তানি আদর্শের পরিপন্থী’- এই অজুহাতে তখন বাঙালির প্রাণের উৎসব- বাংলা নববর্ষকে উদযাপন করতে দেওয়া হয়নি। ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক বাংলা নববর্ষের ছুটি ঘোষণা করলেও পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসন জারি হওয়ার কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমানে রমনার বটমূলে নববর্ষ উদ্‌যাপনের শুরুটা করেছিল সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট, ১৯৬৭ সালে। স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় বাধাহীন পরিবেশে আমরা এখন নববর্ষ উদ্‌যাপন করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদের বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা দিয়ে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়। এই শোভাযাত্রায় মুখোশ, কার্টুনসহ আবহমান বাঙালির পরিচয় বহনকারী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীকধর্মী চিত্র বহন করা হয়। বাংলা সনের সুস্পষ্ট কোনো ইতিহাস এখনো জানা যায়নি, তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও পণ্ডিতের ধারণা- মোগল সম্রাট আকবর তাহা কর্তৃক বাংলা সনের প্রবর্তন হয়। বাংলা সন প্রবর্তিত হওয়ার পর নববর্ষের সঙ্গে যুক্ত হয় নানা আনুষ্ঠানিকতা, জমিদার শ্রেণি চালু করে ‘পুণ্যাহ’। এ অনুষ্ঠানের মুখ্য উদ্দেশ্য খাজনা আদায় হলেও এদিন সাধারণ প্রজাদের মিষ্টি, পান-সুপারি ইত্যাদির দ্বারা আপ্যায়ন করা হতো। ব্যবসায়ীরা ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষকেরা ফসলের ওপর নির্ভরশীল। নগদ টাকার অভাবে তাঁরা সারা বছর ব্যবসায়ীদের থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাকিতে নিত এবং ফসল উঠলে তা পরিশোধ করত। এ দিন ব্যবসায়ীরা দোকান সাজাতেন বিভিন্ন রঙের শৌখিন কাগজ দিয়ে এবং গ্রাহক-খরিদ্দারদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এখনো এই প্রথা অল্প পরিসরে হলেও প্রচলিত রয়েছে। বাংলা নববর্ষের প্রধান আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান হলো বৈশাখী মেলা। দেশের বিভিন্ন স্থানে যুগ যুগ ধরে এসব মেলা আয়োজিত হয়ে আসছে। যেমন- ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদের মেলা ও চট্টগ্রামের মহামুনির বুদ্ধপূর্ণিমা মেলা। মেলায় থাকত কবিগান, কীর্তন, যাত্রা, গম্ভীরা গান, পুতুলনাচ, নাগরদোলাসহ নানা আনন্দ-আয়োজন। নানা ধরনের খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া যেত এখানে। এছাড়াও সামাজিক মেলবন্ধনের স্থানও ছিল এসব মেলা। ওপরে বর্ণিত তিন ধরনের অনুষ্ঠান ছাড়াও বাংলাদেশে প্রচলিত আছে বিভিন্ন ধরনের আধ্যলিক অনুষ্ঠান। চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানের বিখ্যাত ‘জব্বারের বলী খেলা’ তথা কুস্তি খেলা এর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরা উদ্যাপন করে ‘বৈসাবি’। মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জের গরুর দৌড়, হাডুডু খেলা; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোরগের লড়াই: কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, নড়াইলের সাঁড়ের লড়াই ইত্যাদিও বিখ্যাত। 

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর বাঙালির সাংস্কৃতিক মুক্তি ঘটে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে তাৎপর্যময় হয়ে ওঠে বাংলা নববর্ষ। বাংলা একাডেমি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ উৎসবের কেন্দ্র। ফুলে-রঙে, মুখোশে-ব্যানারে-ফেস্টুনে, বাঁশির সুরে-সংগীতে বসন্তের নির্মল বাতাসে উদ্বেলিত হয় বাঙালির হৃদয়। বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণে এনে দেয় নতুন ও রঙিন প্রাণের স্পৃহা।

প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্য খুঁজি

উত্তর: 

ক্রমপ্রশ্নহ্যাঁ না
লাইনের শেষে কি মিল-শব্দ আছে?
পড়ার সময়ে কি তাল রক্ষা করতে হয়?
লাইনগুলোতে শব্দসংখ্যা কি সমান?
সুর করে গাওয়া হয় কি?
এটি কি পদ্য-ভাষায় লেখা?
এটি কি গদ্য-ভাষায় লেখা?
এখানে কোনো কাহিনি পাওয়া যায়?
এখানে কোনো চরিত্র আছে কি?
এখানে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে কি না?
১০এটি একাধিক অনুচ্ছেদে ভাগ করা কি না?
১১এর মধ্যে কোনো সংলাপ আছে কি না?
১২এটি অভিনয় করা যায় কি না?

প্রবন্ধ লিখি

উত্তর: 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের শিক্ষার দ্বার উন্মোচন ও উচ্চ শিক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়ে আছে। মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও আন্দোলন- সংগ্রামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান অপরিসীম। এটি দেশের প্রথম স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে এই প্রতিষ্ঠান তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিকাশে এর অবদান অতুলনীয়। এটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামেও সমধিক পরিচিত। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এজন্য প্রতিবছর ১ জুলাই বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। প্রতিষ্ঠাকালে এর আয়তন ছিল ৬০০ একর। 

নবাব সলিমুল্লাহু বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠায় জমি দান করেছিলেন। এ পর্যন্ত ২৮ জন উপাচার্য এখানে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন স্যার পি জে মাউস। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে স্বাধীন জাতিসত্তার বিকাশের লক্ষ্যে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। গর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। ঢাকার তৎকালীন নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ির নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক প্রমুখ এটি প্রতিষ্ঠার আবেদন করেছিলেন। তাঁদের আবেদন ও প্রচেস্টার ফলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা “দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট’ (অ্যাক্ট নং-১৩) পাশ করে। ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি নাম, একটি ইতিহাস। শুধু শিক্ষাই নয় জাতি গঠনে এ প্রতিষ্ঠান যে অবদান রেখে চলেছে, তা চিরঅম্লান। জাতির প্রতিটি ক্রান্তিকালেই এ বিশ্ববিদ্যালয় জেগে উঠেছে রুদ্রমূর্তিতে। দেশবিভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মানুষকে অবমূল্যায়ন শুরু করেছিল। তারা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। পূর্ব বাংলার বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে তখন বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে ছাত্র-শিক্ষক-জনতা। যেখানে মূল ভূমিকা রাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

১৯৭১ সালেও স্বাধীনতা আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল অবদান রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখানকার ছাত্ররা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশরক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। শিক্ষকগণও পিছিয়ে ছিলেন না। তাঁরাও তাঁদের লেখনী ও বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেন। এজন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ কাল-রাতে নিরীহ বাঙালিদের ওপর ইতিহাসের নিকৃষ্টতম হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে যায় এবং হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানেই (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছেন। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- এই দীপ্ত ঘোষণার মধ্য দিয়েই সেদিন গোটা জাতি স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল সেই আন্দোলনের সূতিকাগার। এছাড়া উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি আন্দোলনে এ বিশ্ববিদ্যালয় অপরিসীম অবদান রেখে চলেছে। 

বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক অনন্য নাম। এখান থেকে বিকশিত হয়েছেন দেশের খ্যাতিমান সাহিত্যিক, শিল্পী, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্পসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই এ প্রতিষ্ঠানের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের সাপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পণ্ডিত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, সাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, ডব্লিউ এ জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, স্যার এ. এফ, রহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ এখানে শিক্ষকতা করেছেন। অসংখ্য রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিনিয়ত তাদের কার্যক্রম চালায় দেশের শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)-কে ঘিরে এসব কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার। এ গ্রন্থাগারে ৬ লাখ ৮০ হাজারের বেশি বই রয়েছে। ৩টি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এখানে ১৩টি অনুষদ, ৮৩টি বিভাগ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৫৬টি গবেষণা ব্যুরো ও কেন্দ্র রয়েছে। ছাত্রদের জন্য ১৬টি এবং ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ৫টি আবাসিক হল। অপরাজেয় বাংলা, রাজু স্মারক ভাস্কর্য, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা, দোয়েল চত্বর, শহিদ মিনারসহ বেশ কিছু স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে।

যাচাই করি

প্রবন্ধ লেখা হয়ে গেলে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করো:

১. প্রবন্ধটি কোন বিষয় নিয়ে লেখা?

উত্তর: প্রবন্ধটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস নিয়ে লেখা

২. প্রবন্ধটির ধরন কী এবং কেন?

উত্তর: এটি একটি বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ। কারণ, এ প্রবন্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও অবদান নিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করে তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অবদান, তা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিকাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান ও বিখ্যাত ছাত্র-ছাত্রীদের কথাও উঠে এসেছে এ প্রবন্ধে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিহাসকে সমার্থক বলা হয়েছে। প্রবন্ধটির বৈশিষ্ট্য বিচারে বলা যায় যে এটি একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রকল্প।

৬ষ্ঠ পরিচ্ছেদ

নাটক

নাটকের চরিত্র

এই নাটকে যেসব চরিত্র আছে, তাদের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় লেখ।

উত্তর: সেই ছেলেটি নাটকের চরিত্রগুলো ও তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়:

সাবু: আরজুর বন্ধু, আরজুর সঙ্গে স্কুলে যায়।

আরজু: ‘সেই ছেলেটি’ নাটকের মূল চরিত্র। তার একটি পা অস্বাভাবিক চিকন। তাই সে সবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটতে পারে না। রোজই সে দেরি করে স্কুলে পৌছায়।

আইসক্রিমওয়ালা: স্কুলের গেটে আইসক্রিম বিক্রি করেন। যাওয়াই মিঠাইওয়ালা: যাওয়াই মিঠাই বিক্রি করেন।

লতিফ স্যার: আরজুর স্কুলের শিক্ষক। আরজু রোজ দেরি করে স্কুলে আসে বিধায় তিনি আরজুকে নিয়ে চিন্তিত হন।

সোমেন: আরজুর বন্ধু, তারা একসঙ্গে স্কুলে যায়।

মিঠু: আরজুর স্কুলের সহপাঠী।

বলি ও লিখি

‘সেই ছেলেটি’ নাটকটির কাহিনি প্রথমে গল্পের মতো করে বলো, তারপর লেখো।

উত্তর: গ্রামের পাশ দিয়ে হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাচ্ছে সোমেন, সাবু ও আরজু। সবাই গান গাইতে গাইতে যাচ্ছে, হঠাৎ থেমে যায় আরজু, সোমেন ও সাবু ওকে খেয়াল না করেই এগিয়ে যায়। সাবু যখন বুঝতে পারে, তখন ফিরে আসে। আরজু রোজ দেরি করে পৌছায় বলে স্যারের বকুনি খায়। আজও একই ঘটনা ঘটবে ভেবে আরজুকে পেছনে রেখেই তারা এগিয়ে যায়। সাবু চলে গেলে বসে পড়ে আরজু। এমন সময় পাশ দিয়ে একান আইসক্রিমওয়ালা যায়। তিনি আরজুকে বলেন, স্কুল ফাঁকি দেওয়া খুব খারাপ, পড়ালেখা করলে আজ তাকে আইসক্রিম বিক্রি করতে যতো না। আরজু তখন তাকে জিজ্ঞেস করে, তিনি স্কুলের দিকে যাবেন কি না। কিন্তু আইসক্রিমওয়ালা জবাব দেন যে, তিনি এখন বাজারের দিকে যাবেন। ক্লাস চলে যখন, তখন আইসক্রিম বিক্রি হয় না। এরপর একজন যাওয়াই মিঠাইওয়ালার সঙ্গে আরজুর দেখা হয়। আরজুর সঙ্গে কথা বললে মিঠাইগুলো বাতাসে মিলিয়ে যাবে, তাই তিনিও চলে যান। একা হয়ে পড়ে আরজু। এদিকে টিফিনের ঘন্টা পড়লে লতিফ স্যার সাবুকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন আরজুকে দেখেছ কি না। সাবু পুরো ঘটনার বিবরণ দিলে স্যারকে চিন্তিত দেখায়। তাঁর সন্দেহ হয় যে আরজু ইচ্ছা করে এমন করছে কি না। তখন মিঠু বলে যে আরজুর সঙ্গে তার পলাশতলীর আমবাগানে দেখা হয়েছে। সেখানে আরজু বসে আছে। তখন লতিফ স্যার, সাবু, সোমেন আর মিঠুকে নিয়ে আরজুকে খুঁজতে যান। আরজু তখন মন খারাপ করে বসে আছে। বাড়িতে ফিরে গেলেও বাবা রকবেন, আর স্কুলে গেলে শিক্ষক। একা একা বসে একটি চন্দনা পাখির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে সে। একটু পরে ছোটো পাখি চন্দনাও উড়ে চলে গেলে আরজু আরও অসহায় হয়ে যায়। কাঁদতে শুরু করে সে। এমন সময় লতিফ স্যার উপস্থিত হন সেখানে। আরজুকে জিজ্ঞেস করেন সে কাঁদছে কেন? আরজু তখন জবাব দেয় কিছুক্ষণ হাঁটলেই তার পা দুটি অবশ হয়ে আসে। আরজু তার বাবা-মাকে জানিয়েছে কি না, তা জিজ্ঞেস করেন লতিফ স্যার। আরজু বলে তার বাবা বলেছেন হাঁটাহাঁটি করলে ঠিক হয়ে যাবে। আর মা শুধু কাঁদেন। স্যার তখন আরজুর পা দুটো দেখে নিলেন। তার একটি পা চিকন। স্যার বললেন, এটা কোনো রোগের লক্ষণ। লতিফ স্যার তখন আরজুর ন্ধুদের জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কোনো খেয়াল করেনি, তাদের যদি এমন হতো, তখন তারা বলল, তারা বুঝতে পারেনি। বুঝতে পারলে আরজুকে নিয়ে যেত, এই বলে আরজুকে তারা কাঁধে তুলে নিল। স্যার তখন তাকে জিজ্ঞেস করলেন সে কোথায় যেতে চায় বাড়িতে না স্কুলে। আরজু বলল সে স্কুলে যেতে চায়, বন্ধুদের কাঁধে ভর দিয়ে আরজু তখন স্কুলে গেল। লতিফ স্যার বললেন, ‘চলো, দেখি তোমার চিকিৎসার কী ব্যবস্থা করতে পারি।

জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজি

‘সেই ছেলেটি’ নাটকের সাথে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, কিংবা কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কি না, তা নিচে লেখো।

উত্তর: সেই ছেলেটি’ নাটকের বিষয়বস্তু আমার চারপাশের পরিবেশের একটি পরিচিত ঘটনা। আমাদের স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা লেখাপড়ায় অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে পিছিয়ে থাকে। তখন কোনো শিক্ষকের সহায়তায় তারা তাদের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠে। ‘সেই ছেলেটি’ নাটকের লতিফ স্যার চরিত্রের মাধ্যমে আমরা সেই ঘটনার কাল্পনিক বহিঃপ্রকাশই দেখতে পাই। এছাড়া কখনো কখনো আমাদের শিশুদের কোনো সমস্যা হলে বাবা-মা বুঝতে পারেন না, মায়েরা বুঝতে পারলেও অনেক সময় অসহায় থাকেন যা আরজুর বাবা-মায়ের চরিত্রে ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশে অনেক শিশুই ছোটোবেলায় টিকা না নেওয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। ‘সেই ছেলেটি’ নাটকেও আরজু ছোটোবেলা থেকেই একটি রোগে আক্রান্ত। নাটকে আমাদের সামাজিক জীবনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ‘সেই ছেলেটি’ নাটকও তার ব্যতিক্রম নয়। এই নাটকের সঙ্গে আমার চারপাশের অনেক ঘটনারই মিল আছে।

নাটকের বৈশিষ্ট্য খুঁজি

উত্তর:

ক্রমপ্রশ্নহ্যাঁ না
লাইনের শেষে কি মিল-শব্দ আছে?
পড়ার সময়ে কি তাল রক্ষা করতে হয়?
লাইনগুলোতে শব্দসংখ্যা কি সমান?
সুর করে গাওয়া হয় কি?
এটি কি পদ্য-ভাষায় লেখা?
এটি কি গদ্য-ভাষায় লেখা?
এখানে কোনো কাহিনি পাওয়া যায়?
এখানে কোনো চরিত্র আছে কি?
এখানে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে কি না?
১০এটি একাধিক অনুচ্ছেদে ভাগ করা কি না?
১১এর মধ্যে কোনো সংলাপ আছে কি না?
১২এটি অভিনয় করা যায় কি না?

সংলাপ লিখি

যে কোনো একটি বিষয় নিয়ে দুটি চরিত্রের মধ্যে সংলাপ রচনা করো।

উত্তর: তৃষা নামের একটি মেয়ে বাড়ির পাশের দোকানে কিছু জিনিসপত্র কিনতে এসেছে।

তৃষা : শুভ সকাল, চাচা। কেমন আছেন?

দোকানদার: শুভ সকাল। ভালো আছি, তুমি কেমন আছ?

তৃষা : আমিও ভালো আছি। আমি কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে এসেছি।

দোকানদার: তুমি কী কী কিনতে চাও?

তৃষা : আমাকে কি কলমের কয়েকটি নমুনা দেখানো যাবে?

দোকানদার : অবশ্যই। এই নাও, এগুলোর মধ্যে যে কলম তোমার পছন্দ হবে, সেটিই নিতে পারো।

তৃষা : সব কলমই সুন্দর। তবে আমাকে আপাতত একটি কালো কালির আর একটি নীল কালির কলম দিন। এ দুটির দাম কত?

দোকানদার : দুটি কলমের দাম ২০ টাকা।

তৃষা : আর আমাকে কিছু খাতা দেখান।

দোকানদার : কী খাতা লাগবে?

তৃষা : একটা বাংলা, একটা ইংরেজি আর একটা অঙ্ক খাতা দিন।

দোকানদার : ঠিক আছে, এখনই দিচ্ছি।

তৃষা : এগুলোর একসকো কত টাকা দাম হলো?

দোকানদার : কলম ২০ টাকা, খাতা ৬০ টাকা। মোট ৮০ টাকা।

তৃষা : ঠিক আছে। এই নিন টাকা।

দোকানদার : ধন্যবাদ। আবার এসো।

তৃষা : আপনাকেও ধন্যবাদ।

৭ম পরিচ্ছেদ

সাহিত্যের নানা রূপ

ক্রমবৈশিষ্ট্যকবিতাছড়াগানগল্পপ্রবন্ধনাটক
মিলশব্দ
তাল
নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের লাইন
সুর
পদ্য-ভাষা
গদ্য-ভাষা
কাহিনি
চরিত্র
বিষয়
১০অনুচ্ছেদ
১১সংলাপ
১২অভিনয়

সাহিত্যের রূপ বুঝি

উপরের ছকের ভিত্তিতে এবং তোমার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কবিতা, ছড়া, গান, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক-এগুলোর প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো

কবিতা: কবিতার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো –

  • কবিতা ছন্দোবদ্ধ হয়।
  • কবিতা পদ্যে রচিত হয়।
  • কবিতায় সাধারণত পরপর দুই লাইনের শেষে অন্ত্য মিল থাকে।
  • হাতে তালি দিয়ে দিয়ে সুর করে কবিতা পড়া যায়। কবিতার লাইনগুলো সাধারণত সমান দৈর্ঘ্যের হয়।
  • কবিতায় সাধারণত কোনো কাহিনি থাকে না।
  • কবিতায় সাধারণত কোনো সংলাপ থাকে না। কবিতা পাঠ বা আবৃত্তি করা যায়।

ছড়া: ছড়ার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো –

  • ছড়ায় অবশ্যই লাইনের শেষে মিল-শব্দ থাকবে। 
  • এতে প্রয়োজন অনুসারে শব্দরূপের পরিবর্তন হয়।
  • সাধারণত ছড়ার লাইনগুলোতে ব্যবহৃত শব্দসংখ্যা সমান হয়।
  • ছড়া সবসময়েই তাল রক্ষা করে পড়া সম্ভব
  • ছড়া সাধারণত সহজ-সরল পদ্য ভাষায় লিখিত হয়। 
  • ছড়ার লাইন আকারে ছোটো হয়ে থাকে।

গান: গানের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো-

  • গান কোনো একটি ভাব বা বিষয় নিয়ে রচিত হয়।
  • গান তাল দিয়ে পড়া যায়।
  • গানে এক লাইনের সাথে পরের লাইনের শেষ শব্দে মিল থাকে। তবে কোনো একটি লাইন গানের মধ্যে বারবার ফিরে আসে।
  • গান মূলত গাওয়ার জন্য লেখা হয়।
  • কথা, সুর ও গায়কির সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় গান।
  • গানের ৪টি অংশ। স্থায়ী, অন্তরা, সম্ভারী ও আভোগ।
  • গানের তিনটি সাধারণ সুর ভিন্ন ভিন্ন হয়। সেগুলো হলো স্থায়ী, অন্তরা ও সঞ্চারী।
  • গানের সুর ও তাল ঠিক রাখার জন্য নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়।
  • গানের লেখককে বলা হয় গীতিকার। যিনি সুর দেন তাঁকে বলা হয় সুরকার আর যিনি গেয়ে শোনান তিনি হলেন গায়ক

গল্প: গল্পের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো-

  • গল্পে কাহিনি ও চরিত্র থাকে।
  • গল্পের কাহিনি বাস্তব জীবন থেকে নেওয়া যেতে পারে আবার কল্পিতও হতে পারে।
  • গল্পের পরিধি ছোটো হয়।”
  • একটিমাত্র বিষয়কে কেন্দ্র করে গল্প আবর্তিত হয়।
  • গল্পে শাখাকাহিনি বা উপকাহিনি স্থান পায় না। 
  • ছোটোগল্প শেষ হয় নাটকীয়ভাবে। 
  • গল্প পড়া শেষে পাঠকের মনে অতৃপ্তি রয়ে যাবে।
  • চরিত্র সংখ্যা অনেক হবে না।
  • পুরো জীবনের ঘটনা উঠে আসবে না। টুকরো কোনো ঘটনা নিয়ে গল্প লেখা হবে।
  • গল্প যেমন হঠাৎ করে শুরু হয়, তেমনি হঠাৎ করে শেষও হয়ে যায়।

প্রবন্ধ: প্রবন্ধের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো-

  • প্রবন্ধ মননশীল সাহিত্য। তাই প্রবন্ধের মধ্যে সাধারণত আবেগের চেয়ে যুক্তি প্রাধান্য পায়।
  • প্রবন্ধ সাহিত্যে মানুষের চিন্তা, মনন ও তত্ত্বই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। 
  • প্রবন্ধ মস্তিষ্কপ্রসূত রচনা। তথ্য, তত্ত্ব, যুক্তি, তর্ক, সিদ্ধান্ত প্রবন্ধের প্রধান উপকরণ।
  • সাধারণত প্রবন্ধ সাহিত্যে জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য, ধর্ম ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পেয়ে থাকে। 
  • কোনো বিষয় সম্পর্কে লেখকের চিত্তগ্রাহ্য তত্ত্বকে কেন্দ্র করে প্রবন্ধ গড়ে ওঠে বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদে প্রাবন্ধিক তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন।
  • প্রবন্ধের প্রথম অংশ ‘ভূমিকা’ নামে পরিচিত। ভূমিকায় মূল আলোচনার ইঙ্গিত থাকে। 
  • প্রবন্ধের শেষ অংশ ‘উপসংহার’ নামে পরিচিত। উপসংহারে প্রাবন্ধিকের সমাপ্তিসূচক মন্তব্য থাকে।

নাটক: নাটকের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো-

  • নাটক হবে সংলাপধর্মী। অর্থাৎ সংলাপের মধ্য দিয়েই নাটকের কাহিনি অগ্রসর হবে।
  • নির্দিষ্ট ঘটনা বা কাহিনিকে কেন্দ্র করে নাটক রচিত হবে।
  • নাটকের কাহিনিতে একাধিক উপকাহিনি বা ছোটো ছোটো ঘটনা থাকতে পারে; এগুলোকে ‘দৃশ্য’ বলা হয়।
  • নাটক সাধারণত গদ্যে লিখিত হয়। এতে কথ্যভাষার প্রয়োগই বেশি হয়
  • নাটককে অবশ্যই অভিনয় উপযোগী হতে হবে।
  • সংলাপ বলার জন্য নাটকে বিভিন্ন চরিত্র থাকে।
  • একটি আদর্শ নাটকে পাঁচটি অঙ্ক থাকবে।
  • নাটকের প্রধান উপাদান চারটি। এগুলো হলো- ক. কাহিনিঃ খ. চরিত্র: গ. সংলাপ ও ঘ. ঘটনা-সমাবেশ।

দেয়াল-পত্রিকা বানাই

উত্তর: আমরা সপ্তম শ্রেণির

সহপাঠীরা মিলে কবিতা, ছড়া, গান, প্রবন্ধ ও নাটক নিয়ে একটি দেয়াল-পত্রিকা তৈরি করেছি। এটি নিম্নরূপ-