ডাইনোসরের ফসিলের খোঁজে! – সমাধান | বিজ্ঞান (অনুশীলন বই)  – ১০ম অধ্যায় | সপ্তম শ্রেণী

ডাইনোসরের ফসিলের খোঁজে! - সমাধান | বিজ্ঞান (অনুশীলন বই)  – ১০ম অধ্যায় | সপ্তম শ্রেণী

এই পোস্টে আমরা জানবো ৭ম শ্রেনীর  বিষয় বিজ্ঞান (অনুশীলন বই) এর দশম অধ্যায়, ডাইনোসরের ফসিলের খোঁজে! সম্পর্কে।

পৃথিবীর কোনো মানুষই ডাইনোসর দেখেনি। তারপরেও আশ্চর্য প্রাগৈতিহাসিক প্রাণিটি সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি। তোমাদেরও নিশ্চয়ই অনেক কৌতূহল আছে? ডাইনোসর সম্পর্কে আমরা যতকিছু জানি তা জেনেছি বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত ডাইনোসরের জীবাশ্মে পরিণত হওয়া হাড়গোড় থেকে। আর এইসব হাড়গোড় পাওয়া গেছে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন শিলা স্তরে। তাই এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ডাইনোসর সম্পর্কে যেমন জানবে, তেমনি জানবে বিভিন্ন প্রকার শিলা ও শিলার গঠন নিয়ে।

প্রথম সেশন 

বিভিন্ন ধরনের ডাইনোসরের ছবি দেখে তাদের নাম এবং অন্যান্য তথ্য অনুমান করার চেষ্টা করি। শিক্ষকের কাছ থেকে জেনে এবং ছবি দেখে ডাইনোসরের তথ্য কার্ডগুলো পূরণ করি:

ডাইনোসর সম্পর্কিত নমুনা তথ্যকার্ড

চিত্র ১:


নাম: ব্রাকিওসরাস (Brachiosaurus)
তথ্য: এরা ছিল সবচেয়ে বড় ডাইনোসর। ওজনে প্রয় ১০০ টন, লম্বায় প্রায় ৩০ মিটার। এরা তৃণভোজী এবং নিরীহ প্রকৃতির। তবে আকার-আকৃতিতে বড় হওয়ায় চলফেরা করত ধীর গতিতে। জলে এবং স্থলে উভয় জায়গাতে বিচরণ করত।

চিত্র ২:


নাম: ভেলোসিরাপ্তর (Velociraptor)
তথ্য:  ছোটখাটো আকারের মাংসাশী ডাইনোসর। লম্বায় ৬ মিটার, ওজনে ২৫ কেজি এই ডাইনোসরের পেছনের পায়ে ছিল বড় বড় নখ যা দিয়ে তা মাংস খুবলে খেত।

চিত্র ৩:


নাম: স্টেগোসরাস (Stegosaurus)
তথ্য:  চারপেয়ে তৃণভোজী ডাইনোসর ছিল স্টেগোসরাস। গম্বুজের মত বাঁকা পিঠ, লম্বা লেজ ও ছোট মাথার এই ডাইনোসরের ওজন ছিল ২ টনের। কাছাকাছি, লম্বায় ১০ মিটার। গা ভর্তি খড়ের বর্ম এবং লেজের ডগায় চারটি লম্বা তীক্ষ হাড় থাকায় এদেরকে সহসা কেউ আক্রমণ করার সাহস পেত না।

চিত্র ৪:


নাম: ট্রাইসেরাটপস (triceratops)
তথ্য:  এমন নামকরণ করা হয়েছে মাথায় গণ্ডারের মতো তিনটা শিং থাকার কারণে। নাকের ডগায় একটা মোটাসোটা শিং আর চোখের ওপরে একজোড়া লম্বা তীক্ষ্ণ শিং। হাড্ডিসার কালরও ছিল এদের ঘাড়ের উপরে। ট্রাইসেরাটপদের ওজন ৯ টন এবং দৈর্ঘ্য ১১ মিটার। ঠোঁটের মত চোয়াল তারা গাছের ভালগালা ভাঙার কাজে ব্যবহার করত।

চিত্র ৫:


নাম: টাইরানোসরাস রেক্স/টি-রেক্স (T Rex)
তথ্য:  ডাইনোসর যুগের সবচেয়ে ভয়ংকর এবং হিল্লে স্বভাবের প্রাগৈতিহাসিক জীব হলো টি-রেক্স। ১৫ মিটার লম্বা ও ৬ মিটার উচ্চতার এই ডাইনোসরের ওজন ছিল প্রায় ১০ টন। মাংস ছিঁড়ে খাবার মতো ভয়ানক একসারি দাঁত এবং তিনটি বড় বড় নখ বসানো একজোড়া পেছনের পা দিয়ে তারা অতর্কিত আক্রমণ চালাত তৃণভোজী ডাইনোসরদের উপর। ডাইনোসর যুগের শেষ পর্যন্ত বেঁচে ছিল এরা।

চিত্র ৬:


নাম: আর্কিওপটেরিক্স (archaeopteryx)
তথ্য:  আর্কিওপটেরিক্স মানে ‘আদিম ডানা’। কবুতর আকারের এই উড়ন্ত প্রাণী ছিল প্রথম পাখি। যদিও এরা খুব ভালো উড়তে পারত না। এরা মাটি থেকে উপরে উঠতও না শুধু উঁচু গাছ বা পাহাড় থেকে শূন্যে গা ভাসিয়ে দিত উড়ার জন্য।

বাড়ির কাজ

নিচের ফসিল গুলোর ছবি দেখে অনুমান করে পাশের ফাঁকা বক্সে জীবটির ছবি আঁক।

উত্তর: 

প্রশ্ন-১, পৃথিবী থেকে ডাইনোসরের বিলুপ্তি ঘটেছে কত বছর আগে?

উত্তর: সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে।

প্রশ্ন-২, ডাইনোসর যুগের সব থেকে ভয়ংকর ও হিংস্র ভাইনোসর কোনটি ছিল?

উত্তর: টাইরোনোসরাস রেক্স/টি-রেক্স (T Rex)।

দ্বিতীয় সেশন

শিলার গঠন এবং জীবাশ্মের মধ্যকার সম্পর্ক অনুধাবন করার চেষ্টা করি।

পাঠ সহায়ক বিষয়বস্তুর প্রস্তুতি থেকে বিভিন্ন ধরনের শিলা এবং তার গঠন সম্পর্কে জেনে নেই।

শিলার গঠন ও বৈশিষ্ট্য জেনে তাদের ব্যবহার ও অন্যান্য তথ্য হকে লেখি।

উত্তর: 

শিলার ধরনকীভাবে গঠিত হয়বৈশিষ্ট্যব্যবহার
আগ্নেয়ভূ-অভ্যন্তরস্থ উত্তপ্ত ও গলিত শিলা ক্রমে ঠান্ডা হয়ে গঠিত হয়। এর গঠন প্রক্রিয়া পদার্থের ভৌত পরিবর্তন।i. স্ফটিকাকার
ii. অস্তরীভূত
iii. কঠিন ও কম ভঙ্গুর
iv . জীবাশ্ম নেই
v. অপেক্ষাকৃত ভারী
i. ভাস্কর্য তৈরিতে
ii. নির্মাণ কাজের টাইলস তৈরিতে
iii. টুথপেস্ট তৈরিতে
পাললিকআগ্নেয় শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে । যৌগিক, রাসায়নিক ও জৈবিক উপায়ে গঠিত হয়।i. স্তরবিশিষ্ট
ii. অপেক্ষাকৃত নরম 
iii. জীবাশ্ম থাকে
i. প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র 
ii. উদ্ভিদের আবাসস্থল
iii. নির্মাণ কাজে
iv. তৈজসপত্র তৈরিতে
রূপান্তরিতআগ্নেয় বা পাললিক শিলা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় রূপান্তরিত হয়।i. স্ফটিকযুক্ত 
ii. খুব কঠিন 
iii. জীবাশ্যহীন
iv. পত্রায়িত
i. নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে
ii. শিল্পকলায় 
iii. টুথপেস্ট, প্লাস্টিক ও কাগজ তৈরিতে

ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের ভিত্তিতে শিলা শনাক্তকরণ এবং শিলার উপাদানসমূহ ঋকে লেখি।

উত্তর: 

শিলার ধরনভৌত-রাসায়নিক ধর্মের ভিত্তিতে শনাক্তকরণশিলার উপাদান
আগ্নেয়অভ্যন্তরস্থ বা অনুপ্রবেশকারী আগ্নেয় শিলা সাধারণত অত্যন্ত শক্ত এবং বিভিন্ন খনিজের কেলাস দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে। আবার বহিঃস্থ আগ্নেয় শিলাতে কেলাসের আকার অতিক্ষুদ্র, এমনকি কেলাস অনুপস্থিত থাকতে পারে।ভূঅভ্যস্তরস্থ উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা ও লাভা।
পাললিকপাললিক শিলার ক্ষেত্রে সাধারণত স্তর লক্ষ করা যায়। এই ধরনের শিলায় ফসিল বা জীবাশ্ম উপস্থিত থাকতে পারে।বিচূর্ণীত আগ্নেয় শিলা
রূপান্তরিতরূপান্তরিত শিলার ক্ষেত্রে ফলিয়েশন বা ব্যান্ড দেখা যায়।রাসায়নিক প্রকৃয়ায় পরিবর্তিত অগ্নেয় ও পাললিক শিলার খনিজ।

প্রশ্ন-১, কোন শিলা আগ্নেয় শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে তৈরি হয়? 

উত্তর: পাললিক শিলা। 

প্রশ্ন-২, ফলিয়েশন ব্যান্ড কোন শিলায় দেখা যায়?

উত্তর: রূপান্তরিত শিলা।

তৃতীয় সেশন

বাংলাদেশে ডাইনোসরের ফসিল পাওয়া সম্ভাবনা আছে কি? তোমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি নিচের ফাঁকা জায়গায় লিখে ফেলো।

উত্তর: বাংলাদেশে রয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ। এ বদ্বীপ বঙ্গীয় অববাহিকার এক বিরাট অঞ্চল জুড়ে রয়েছে, যা সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় ৩৫%। এই বদ্বীপ বিকাশের ইতিহাস গন্ডোয়ানাল্যান্ডের বিভাজন, ভারতীয় প্লেটের বিচলন, ভারতীয় প্লেটের সাথে বার্মা ও ইউরেশিয় প্লেটের সংঘর্ষ, বিশাল পর্বতশ্রেণী হিমালয়ের সৃষ্টি, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র নদীপ্রণালীর বিকাশ, বিভিন্ন সময়ে সমূদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তন এবং কোটি কোটি বছর ধরে ভূ-গাঠনিক ক্রিয়াকর্মের সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে আছে।

বদ্বীপটির বিকাশ ভারতীয় প্লেটের নিষ্ক্রিয় ডান প্রান্তে শুরু হয় যখন অবক্ষেপের হার খুব মন্থর ছিল। ভারতীয় প্লেটের উত্তরমুখী সম্বারক ও ইউরোপিয় প্লেটের সঙ্গে এর সংঘর্ষের কারণে বদ্বীপীয় অঞ্চলে বিপুল অবক্ষেপ স্তূপীকৃত হয়ে তিন স্তরে বিবর্তিত হয়েছে। বদ্বীপ গড়ে তোলার প্রক্রিয়া সেনোযোয়িক যুগের টারশিয়ারি ও কোয়াটারনারি আমলে খুবই সক্রিয় ছিল। ১৭০ মিলিয়ন বছর পূর্বে জুরাসিক যুগ ছিল পৃথিবীতে ডাইনোসরের বিচরণক্ষেত্র । ১২৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে গঠিত আমাদের বদ্বীপে তাই ডাইনোসরের ফসিল না পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু জুরাসিক যুগে আমাদের এ অংশের গন্ডোয়ানাল্যান্ড সমগ্র পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের সাথে যুক্ত ছিল। তাই ডাইনোসরের ফসিল পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই, বলা যাবে না।

প্রশ্ন-১, বাংলাদেশে কী ডাইনোসরের ফসিল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে?

উত্তরঃ হ্যা। সম্ভাবনা একদম নেই তা বলা যাবে না।

প্রশ্ন-২, ট্রাইলো বাইট প্রাণী কত বছর আগে পৃথিবীতে ছিল?

উত্তর: আনুমানিক ২৫ কোটি বছর আগে।

চতুর্থ সেশন

কোন ভূপ্রকৃতির ছবির সাথে কোন শিলা সম্পর্কিত থাকতে পারে তা চিহ্নিত করি।

চিত্র ১:

শিলার ধরন: পাললিক

কারণ: পলল জমাট বেঁধে এই শিলা তৈরি হয়েছে।

চিত্র ২:

শিলার ধরন: পাললিক

কারণ: পলল জমাট বেঁধে এই শিলা তৈরি হয়েছে।

চিত্র ৩:

শিলার ধরন: আগ্নেয়

কারণ: গলিত ম্যাগমা ঠান্ডা ও শক্ত হয়ে তৈরি হয়েছে

চিত্র ৪:

শিলার ধরন: রূপান্তরিত

কারণ: আগ্নেয় বা পাললিক শিলা রূপান্তরিত হয়ে তৈরি হয় বলে।

ছবির ভূ-প্রকৃতির সাথে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির কী কী মিল অথবা অমিল রয়েছে তা পাশের সহপাঠীর সতো জোড়ায় আলোচনা করে নিচের ফাঁকা জায়গায় লেখি।

উত্তর: ১ম ও ২য় ছবির ভূ-প্রকৃতিতে পাললিক শিলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা ছবিগুলোতে স্তর দেখা যাচ্ছে এবং বৃক্ষের উপস্থিতি শিলাত্তরগুলো কেমন; তা প্রমাণ। ৩য় ছবিটির স্ফটিকাকার শিলা এবং লাভার উপস্থিতি আগ্নেয় শিলায় গঠিত ভূমিরূপ নির্দেশ করে।

৪র্থ ছবিতে কঠিন কিছু ফলিয়েশন বিশিষ্ট শিলাগুলো রূপান্তরিত শিলা নির্দেশ করে। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতির অধিকাংশ প্লাবন সমভূমি। এ ধরনের ভূমিরূপ পাললিক শিলায় গঠিত। এ ধরনের ভূমিরূপ পলির স্তর পড়ে গঠিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। বাংলাদেশের পাহাড়ি ভূমিরূপও পাললিক শিলায় গঠিত। কেননা ভঙ্গিল পর্বত শ্রেণির সমগোত্রীয় পাহাড়গুলো পাললিক শিলায় ভাঁজ পড়েই গঠিত হয়েছে। তাই বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতিতে পাললিক শিলা ব্যতীত অন্যান্য শিলা পাওয়া যায় না। তবে খনিজ হিসেবে কিছু কঠিন শিলা বাংলাদেশে পাওয়া যায়, যা মূলত রূপান্তরিত শিলা।

প্রশ্ন-১, গলিত ম্যাগমা ঠান্ডা হয়ে তৈরি হয় এমন শিলার নাম কী?

উত্তর: আগ্নেয়।

প্রশ্ন-২, বাংলাদেশের পাহাড়ি ভূমিরূপ কোন শিলায় গঠিত?

উত্তর: পাললিক শিলা।