ক্ষুদে বাগান: টেরারিয়াম ! – সমাধান | বিজ্ঞান – অনুশীলন বই | সপ্তম অধ্যায় | সপ্তম শ্রেণী

ক্ষুদে বাগান: টেরারিয়াম ! - সমাধান | বিজ্ঞান - অনুশীলন বই | সপ্তম অধ্যায় | সপ্তম শ্রেণী

এই পোস্টে আমরা জানব সপ্তম  শ্রেনীর, বিষয় বিজ্ঞান (অনুশীলন বই) এর ৭ম অধ্যায়, ক্ষুদে বাগান: টেরারিয়াম সম্পর্কে।

টেরারিয়াম (Terrarium)!! অবাক লাগছে৷ এটা অনেকটা Aquarium এর মতো দেখতে। ‘টেরারিয়াম” হলো ঘরের কোণে ছোট বাগান। বক্ষপরিসরে স্বয়ং-সম্পূর্ণভাবে বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলা। টেরা অর্থ স্থলভাগ, সে বিবেচনায় বন্ধ স্থলভাগে বাস্তুতন্ত্র। এবার টেরারিয়াম (Terrarium) তৈরি করলে কেমন হয়? যদি টেরারিয়াম (Terrarium) তৈরির মাধ্যমে বিজ্ঞান শেখা যায়, তাহলে তো সেটা আরও আনন্দের!

প্রথম ও দ্বিতীয় সেশন:

দলের পর্যবেক্ষণকৃত তথ্য ছক-১ এ দলের যেকোনো একজন লিখে রাখো।

ছক: ১

দলের নাম: ময়না

নির্বাচিত জীবের নাম (যেকোনো প্রাণী / গাছ)এদের আবাসস্থল কেমন?এরা কীভাবে বেড়ে উঠেছে? এরা টিকে থাকতে কী কী মোকাবিলা করে?এদের খাদ্য কী কী?এদের স্বাস্থ্য কেমন? 
গরুশুষ্ক, উঁচু স্থানএবং আলো- বাতাস গোয়ালঘরজন্মের পর মায়ের দুধ পান করে এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে খড়, কুঁড়া, খৈল, ঘাস, লতাপাতাইত্যাদি খেয়েবেড়ে উঠেছে।বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিকদুর্যোগ যেমন- বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, তীব্র খরা ইত্যাদি এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ মোকাবেলা করে টিকে থাকে।ছোট গাভীর ক্ষেত্রে খড়, (দুধ), খৈল, ঘাস, কুঁড়া, লতাপাতা, পানি ইত্যাদি।সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
পাখিগাছপালার উঁচু শাখা-প্রশাখা, বাসাবাড়ির কার্ণিশ, খাঁচা ইত্যাদি জায়গায় খড় কুটা দিয়ে বাসা তৈরি করে বাস করে।জন্মের পর মায়ের মুখ থেকে খাবার খায়, বড় হলে নিজের খাবার নিজে সংগ্রহ করে এবং মুক্তভাবে বেড়ে উঠেছে।বিভিন্ন ধরনেরপ্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- ঘূর্ণিঝড়,বন্যা, বাসস্থান ধ্বংস, খাদ্য সংকট, শিকারি ইত্যাদিমোকাবেলা করে টিকে থাকে।শস্যদানা, কীটপতঙ্গ,ছোটমাছ ইত্যাদি প্রধান খাদ্য।স্বাস্থ্য ভালো।
আমগাছউঁচু, আলো- বাতাসপূর্ণ পমি,বাড়ির আঙিনা ইত্যাদি জায়গায় এদের আবাসস্থলযৌন ও অযৌন প্রজননের মাধ্যমে বংশধর নতুন সৃষ্টি করে এবং নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরি করে বেড়ে উঠেছে।প্রাকৃতি দুযোর্গ, কীটপতঙ্গ, নদী-ভাঙন,নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংসইত্যাদি মোকাবেলা করে টিকে থাকে।খনিজ, পানি, পুষ্টি, শর্করা জাতীয় খাদ্য ইত্যাদি।
এটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। এর দেহ মূল, কান্ড, শাখা-প্রশাখায় বিবক্ত। এদের কান্ড মোটা ও দৃঢ় হয়।

পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেশন:

এ সেশনে তোমরা পূর্বের দল অনুসারে একত্রিত হও। তোমাদের তৈরি বন্ধ টেরারিয়াম (Terrarium) এর কাছে গিয়ে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। প্রাপ্ত তথ্য ছক-২ এ দলের সবাই লিখে রাখো।

টেরারিয়াম (Terrarium) এর সংরক্ষণের অবস্থা কেমন?উদ্ভিদগুলোকে কেমন দেখলে?উদ্ভিদের পাতার রঙ কেমন দেখছ?বন্ধ টেরারিয়াম(Terrarium) এর উদ্ভিদ টিকে থাকার কারণ কী কী?
টেরারিয়ামের সংরক্ষণের অবস্থা মোটামুটি সঠিক ছিল। টেরারিয়ামের গ্লাসটি ছিল স্বচ্ছ। সূর্যের আলোর ক্ষতি থেকে বাঁচতে এটিকে আলোযুক্ত ছায়ায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।টেরারিয়ামের উদ্ভিদগুলো আকারে ছোট ছিল এগুলো দেখতে খুবই সুন্দর হয়েছে। যেমন- থানকুনি, মস, শেওলা, বনসাই, ক্যাকটাস ইত্যাদিউদ্ভিদগুলো আকারে ছোট এবং এদের পাতাগুলোও ছোট ছোট। অধিকাংশ উদ্ভিদের পাতার রঙ সবুজ হলেও কিছু উদ্ভিদের পাতার রঙ রঙিন। যেমন- লাল, কমলা, হলুদ, বেগুনি ইত্যাদি।বন্ধ টেরারিয়াম আলোযুক্ত ছায়ায় সংরক্ষণ করতে হয়। অর্থাৎ সূর্যের আলো সরাসরি লাগানো যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে যেমন উদ্ভিদ নিজদেহে পানি সংরক্ষণ করতে পারে সেসব উদ্ভিদ নির্বাচন করতে হবে। এ ধরনের টেরারিয়াম ঢাকনা দ্বারা আটকানো থাকে, ঢাকনা সপ্তাহে একবার খুললেই হয়। যখন বানানো হয় এর ভেতরেই নিজস্ব ইকোসিস্টেম তৈরি হওয়ার কারণে এটি বন্ধ অবস্থাতেও ভালোভাবে টিকে থাকে। যেমন: মস ফার্ন, ক্যকটাস ইত্যাদি।

প্রশ্ন: টেরারিয়াম (Terrarium) পর্যবেক্ষণের পর সেটিকে যথাস্থানে রেখে দাও। পর্যবেক্ষণে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে দলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নাও। আলোচনায় ছক-৩ এর প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার চেষ্টা করবে।

প্রশ্ন তোমাদের উত্তর 
বন্ধ টেরারিয়াম (Terrarium) এ সালোকসংশ্লেষণ কীভাবে সম্পন্ন হয়?বন্ধ টেরারিয়ামের পরিবেশ থাকে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও আর্দ্র। এটি বন্ধ থাকার জন্য ভিতরেই পানি চক্র বিদ্যমান থাকে। এখানে আর্দ্রতা কমে গেলে পানি স্প্রে করতে হয়। টেরারিয়ামের মাটি থেকে উদ্ভিদ পানি শোষণ করে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় পাতার তৈরি পানি ঘনীভূত হয়ে আবার মাটির আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেয়। আলোর সাহায্যে এখানের উদ্ভিদগুলো অক্সিজেন তৈরি করে শ্বসন প্রক্রিয়া চালু রাখে এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড উৎপাদন করে। এ কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং পানি ব্যবহার করে বন্ধ টেরারিয়ামে থাকা উদ্ভিদগুলো সালোকসংশ্লেষণ করে।
বন্ধ টেরারিয়াম (Terrarium) এ অক্সিজেন চক্র কীভাবে সম্পন্ন হয়?বন্ধ টেরারিয়ামের উদ্ভিদগুলো আলোর সাহায্যে সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে অক্সিজেন তৈরি করে সনক্রিয়া চালু রাখে। আর হুসনে উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড আবার ঐ সালোকসংশ্লেষণেই ব্যবহৃত হয়। এবাবেই বন্ধ টেরারিয়ামে অক্সিজেন চক্র চালু থাকে।
বন্ধ টেরারিয়াম (Terrarium) এ কীভাবে পানি চক্রকীভাবে সম্পন্ন হয়?বন্ধ টেরারিয়াম বানাতে প্রথমে যথেষ্ট আর্দ্রতা দিয়ে মাটিকে সিল করা হয়। এ মাটি থেকে উদ্ভিদ পানি সংগ্রহ করে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় পাতার তৈরি পানি ঘনীভূত হয়ে আবার মাটির আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেয়। এভাবেই বন্ধ টেরারিয়ামে পানি চক্র সম্পন্ন হয়।

👉 হরেক রকম খেলনার মেলা – সমাধান | বিজ্ঞান – অনুশীলন বই | ৬ষ্ঠ অধ্যায় | সপ্তম শ্রেণী 

প্রশ্ন: পরের সেশনে আবার বন্ধ টেরারিয়াম (Terrarium) দলে পর্যবেক্ষণ করবে। নতুন কোনো পরিবর্তন আছে কি? থাকলে তা দলের সবাই ছক-৪ এ লিখে রাখো।

দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণে নতুন কী কী পরিবর্তন দেখতে পেলে?
১। টেরারিয়ামের উদ্ভিদগুলোর দৈহিক বৃদ্ধি ঘটেছে।২। উদ্ভিদের পাতাগুলো অনেক সবুজ ও সতেজ দেখাচ্ছে। 
৩। এখানে বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করা হয়। যেমন- বোতল, জার ইত্যাদি।
৪। এ ধরনের টেরারিয়ামে প্রাণী না থাকলেও উদ্ভিদ শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করে সালোকসংশ্লেষণ সম্পন্ন করে। 
৫। বাইরের বায়ুর প্রয়োজন হয় না। কারণ ভেতরেই সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করে, যা পরবর্তীতে শ্বসনের ব্যবহার করে।
৬। সরাসরি সূর্যলোকের প্রয়োজন পড়ে না। এটিকে আলোযুক্ত ছায়ায় সংরক্ষণ করতে হবে।
৭। বাইরে থেকে পানি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না এর ভেতরেই পানি চক্র সম্পন্ন হয়। 
৮। এখানে আলাদা করে খনিজ উপাদান দেওয়ার দরকার হয় না। ভেতরে ব্যবহৃত উপকরণ ছারাই এরা পুষ্টি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে।

ফিরে দেখা

প্রশ্ন: টেরারিয়াম (Terrarium) তৈরি করতে তোমাদের কেমন লেগেছে?

উত্তর: টেরারিয়াম তৈরি করতে আমাদের খুবই ভালো লেগেছে। কারণ এটা তৈরি করা সহজ। এটি তৈরির উপকরণগুলো সহজলভ্য এবং আলাদাভাবে কোনো জমির প্রয়োজন হয় না। এটি ঘরের বারান্দায় যেখানে আলো আসে এমন জায়গায় রাখলেই চলে। এছাড়াও নিয়মিত পরিচার্যার প্রয়োজন পড়ে না। এটি বাসাবাড়ি ছাড়াও নামিদামী রেস্টুরেন্টের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্নঃ এ কাজে তোমরা নতুন কী কী শিখছে?

উত্তর:

১। সূর্যের সরাসরি আলো ছাড়াও বাস্তুতন্ত্র তৈরি করা যায়।

২। বন্ধ অবস্থায় অনেক জীব বাঁচতে পারে।

৩। বাইরের থেকে আলাদাভাবে পুষ্টি উপাদান দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

৪। অনেক বড় পরিসরে জমির প্রয়োজন হয় না।

৫। বাসাবাড়িতেই টেরারিয়াম তৈরি করা সম্ভব।