এই পোস্টে আমরা জানব সপ্তম শ্রেনীর, বিষয় বিজ্ঞান (অনুশীলন বই) এর ৪র্থ অধ্যায়, সূর্যালোকে রান্না সম্পর্কে।
সম্পুর্ন সেশনঃ
কোন কোন বস্তু রোদে রাখলে বেশি গরম হয় একটু চিন্তা করে নিচে লিখে রাখো-
১। লোহার বস্তু – রেল লাইন, রেল লাইনের চাকা, পেরেক, রড় ইত্যাদি।
২। স্টিলের বস্তু হাড়ি, কড়াই, চামচ ইত্যাদি।
৩। কাচের বস্তু আয়না, কাচের গ্লাস থাই গ্লাস।
৪। পীতলের বস্তু – পিতলের থালা-বাসন, হাড়ি-পাতিল, গ্লাস ইত্যাদি।
৫। চামড়ার বস্তু জুতা, বেল্ট, ব্যাগ ইত্যাদি।
থার্মোমিটার দিয়ে পাঁচটি পৃথক বস্তুর (লোহার বস্তু, কাচের বস্তু, পানি, সাদা কাপড় ও রঙিন কাপড়) তাপমাত্রা পরিমাপ করো এবং নিচের ছকে লিখে রাখো।
বস্তুর নাম | সূর্যের আলোতে রাখার পূর্বের তাপমাত্রা |
লোহার বস্তু | ২৬° C |
কাচের বস্তু | ২৪° C |
পানি | ২৭° C |
সাদা কাপড় | ২৫° C |
রঙিন কাপড় | ২৭° C |
অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট রোদে রেখে দেওয়ার পর থার্মোমিটার দিয়ে বস্তু পাঁচটির তাপমাত্রা পুনরায় পরিমাপ করো এবং নিচের ছকে দুইবার নেয়া তাপমাত্রার তথ্যই লিখে রাখো।
বস্তুর নাম | সূর্যের আলোতে রাখার পূর্বের তাপমাত্রা | সূর্যের আলোতে রাখার পরের তাপমাত্রা | মন্তব্য |
লোহার বস্তু | ২৬° C | ৮০° C | সূর্যের আলোতে রাখার পূর্বে তাপমাত্রা ছিল ২৬°C এবং রাখার পর তাপমাত্রা ৮০° C হয়েছে । অর্থাৎ তিনগুণ বেশি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। |
কাচের বস্তু | ২৪° C | ৭৬° C | সূর্যের আলোতে রাখার পূর্বে তাপমাত্রা ছিল ২৪°C এবং রাখার পর তাপমাত্রা হয়েছে ৭৬° C । অর্থাৎ তিনগুণ বেশি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। |
পানি | ২৭° C | ৮২° C | সূর্যের আলোতে রাখার পূর্বেতাপমাত্রা ছিল ২৭°C এবং রাখার পর তাপমাত্রা হয়েছে ৮২°C । অর্থাৎ তিনগুণ বেশি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। |
সাদা কাপড় | ২৫° C | ৭২° C | সূর্যের আলোতে রাখার পূর্বেতাপমাত্রা ছিল ২৫°C এবং রাখার পর তাপমাত্রা হয়েছে ৭২°C । অর্থাৎ তিনগুণ বেশি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। |
রঙিন কাপড় | ২৭° C | ৭৫° C | সূর্যের আলোতে রাখার পূর্বেতাপমাত্রা ছিল ২৭°C এবং রাখার পর তাপমাত্রা হয়েছে ৭৫°C । অর্থাৎ তিনগুণ বেশি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। |
👉 কোষ পরিভ্রমণ – সমাধান | বিজ্ঞান – অনুশীলন বই | তৃতীয় অধ্যায় | সপ্তম শ্রেণী
প্রশ্ন: আগের আর পরের তাপমাত্রার কোন পার্থক্য কি দেখতে পাচ্ছ?
উত্তর: হ্যা, আগের আর পরের তাপমাত্রার পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি।
প্রশ্ন: পার্থক্য থেকে থাকলে কারণ কী হতে পারে?
উত্তর: সূর্য থেকে আসা তাপশক্তি শোষণ করে বস্তুগুলো অর্থাৎ লোহা, কাচ, পানি এবং কাপড়ের তাপমাত্রা আগের তাপমাত্রা থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রশ্ন: প্রতিটি বস্তুর তাপমাত্রার পরিবর্তন কি একইরকম ঘটছে?
উত্তর: লোহার বস্তুগুলো তাপ সুপরিবাহী হওয়ায় অধিক পরিমাণ তাপ গ্রহণ করে অন্যান্য বস্তু থেকে বেশি উত্তপ্ত হয় অন্যদিকে কাচ, পানি, এবং কাপড়ের বস্তুগুলোর তাপ পরিবাহিতা কম হওয়ায় কম পরিমাণ তাপ গ্রহণ করতে পারে ফলে তাপমাত্রাও হয় কম। বস্তুর তাপমাত্রা রঙের উপরও নির্ভরীশল। সাদা কাপড়ের তাপ ধারণ বা শোষণ ক্ষমতা কম। রঙিন কাপড়ের তাপ বেশি শোষিত হয় ফলে সাদা কাপড় অপেক্ষা রঙিন কাপড়ের তাপমাত্রা বেশি হয়।
সৌরচুল্লী বানানোর উপকরণ
উপকরণের নাম:
১। ফাইবোর্ড/কাঠ বোর্ড
২। ককসিট
৩। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার
৪। পেরেক
৫। কাচের পাত
৬। আঠা
৭। আয়না
৮। হাতল
৯। কবজা
১০। বাইসাইকেল স্পোক
তোমাদের দলের বানানো সৌরচুল্লীর একটা ছবি নিচের ফাঁকা জায়গায় এঁকে রাখো। আর পাশে কী কী উপকরণ ব্যবহার করলে তার তালিকা টুকে রাখো।
ব্যবহৃত উপকরণ | সৌরচুল্লীর ছবি |
১। ফ্লাইবোর্ড/কাঠ বোর্ড ২। ককসিট ৩। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার ৪। পেরেক ৫। কাচের পাত ৬। আঠা ৭। আয়না ৮। হাতল ৯। কবজা ১০। বাইসাইকেল স্পোক |
আধা ঘন্টা পর্যবেক্ষণ করে দেখো চুলার মধ্যে তাপমাত্রা ও ডিমে কোনো পরিবর্তন হয় কি না।
সময় | ০ মিনিট | ৫ মিনিট | ১০ মিনিট | ১৫ মিনিট | ২০ মিনিট | ২৫ মিনিট | ৩০ মিনিট |
তাপমাত্রা (°সেলসিয়াস) | পরিবর্তন হয়নি। | ৬°C | ১৬°C | ৩৭°C | ৪৮°C | ৬৪°C | ৮০°C |
ছক পূরনঃ
শক্তির কোন কোন রূপ লক্ষ করেছ? | শক্তি কোথা থেকে কোথায় স্থানান্তরিত হয়েছে? | কোন কোন ক্ষেত্রে শক্তির কোন একটি রূপ থেকে অন্য একটি রূপে রূপান্তর ঘটেছে? |
আলোক শক্তি | রাসায়নিক শক্তি থেকে আলোক শক্তিতে স্থানান্তর। | সৌর চুল্লিতে যখন সৌরশক্তি প্রয়োগ করা হয় তখন রাসায়নিক শক্তি আলোক শক্তিতে রূপান্তর হয়। |
তাপশক্তি | আলোকশক্তি থেকে তাপ শক্তিতে স্থানান্তর | সৌর চুরিতে বা আয়নায় যখন দীর্ঘক্ষণ ধরে সৌর আলো ফেলবো তখন আলোক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তর হয়। |
শব্দশক্তি | তাপশক্তি থেকে শব্দ শক্তিতেস্থানান্তর | সৌর চুড়িতে তাপ প্রয়োগের ফলে ডিম ভাজা তেল কিংবা ভাত ফুটার শব্দ পাওয়া যায়। ফলে তাপশক্তি শব্দ শক্তিতে রুপান্তর হয়। |
👉 পদার্থের সুলুকসন্ধান – সমাধান | বিজ্ঞান – অনুশীলন বই | সপ্তম শ্রেণী
সৌরচুল্লী তৈরির উপকরণগুলোর কোনটা কেন ব্যবহার করা হয়েছে বলতে পারো? সৌরচুল্লীকে কার্যকর করতে এই উপকরণগুলো কেন বেছে নেয়া হল? এই বিষয়ে তোমাদের মতামত কী? দলে বসে আলোচনা কর এবং নিচের ছকে লিখে রাখো –
উপকরণের নাম | উপকরণ নির্বাচনের কারণ |
১। ফ্লাইবোর্ড/কাঠ বোর্ড | এটি টেকসই, সহজেই নষ্ট হয় না ফলে অনেক দিন ব্যবহার করা যায়। |
২। ককসিট | ফ্লাইবোর্ডকে তাপ থেকে মুক্ত রাখে। |
৩। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার | এটির ফলে ভেতরের তাপমাত্রা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। |
৪। পেরেক | ফ্লাইবোর্ড গুলোকে একে অপরের সাথে আটকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। |
৫। কাচের পাত | কাচের পাত দেওয়ার কারণে তাপ বাহিরে যেতে পারে না। |
৬। আঠা | করুসেট এবং অ্যালুমিনিয়াম পেপার লাগানোর জন্য কাজে লাগে। |
৭। আয়না | সূর্যের আলোর প্রতিফলেন সাহায্য করে। |
৮। হাতল | সৌরচুল্লী যেকোন জায়গায় বহনের জন্য ব্যবহৃত হয়। |
৯। কবজা | সৌরচুল্লীকে সহজেই উঠানো এবং নামানো যায়। |
১০। বাইসাইকেল স্পোক | সৌরচুল্লী খোলা রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। |
অন্যান্য দলের বানানো সৌরচুল্লীর সাথে তোমাদেরটার তুলনা করে দেখো। অন্যদের ছকের তথ্যগুলোও মিলিয়ে নাও। অন্য দলগুলোর ক্ষেত্রে চুল্লীর ভেতরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত ছিল? কোন দলের ডিম সেদ্ধ হতে সময় বেশি লেগেছে তুলনামূলক আলোচনা করে দেখো, তোমাদের চুল্লীর পরিকল্পনায় কোন পরিবর্তন আনলে কি আলো ভালোভাবে কাজ হতো? তোমাদের মতামত নিচে লিখে রাখো-
প্রশ্ন: অন্য দলগুলোর ক্ষেত্রে চুল্লীর ভেতরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কত ছিলা
উত্তর: ৮৫°C
প্রশ্ন। কোন দলের ডিম সেদ্ধ হতে সময় বেশি লেগেছে?
উত্তর: আলফা দলের ডিম সেদ্ধ হতে সময় বেশি লেগেছে কারণ তাদের সৌরচুল্লীতে আলো ঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। চুন্নীতে বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি ছিল। অন্যদিকে ভিটা দলের সবচেয়ে কম লেগেছে তাদের সৌরচুলীটা অনেক কার্যকরী ছিল যার ফলে সবার প্রথমে ডিম সেদ্ধ হয়েছে। গামা দলের চুলাটাই কিছুটা সমস্যা ছিল তবে সবকিছুই ঠিক ছিল।
প্রশ্ন: তোমাদের চুল্লীর পরিকল্পনায় কোন পরিবর্তন আনলে কি আলো ভালোভাবে কাজ হতো?
উত্তর: আমাদের চুন্নীর সবকিছুই ঠিক ছিল কিন্তু এর আকার ছিল অনেক ছোট যার কারণে তাপশক্তি কম লাগায় ডিম সেদ্ধ হতে দেরি হয়েছে।
ফিরে দেখা
প্রশ্ন: অভিজ্ঞতার কাজগুলো করতে তোমাদের কেমন লেগেছে?
উত্তর: অভিজ্ঞতামূলক কাজগুলো করতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। এর ফলে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারার মাধ্যমে আমার অভিজ্ঞতা বেড়েছে। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে নতুন কিছু করার চেষ্টা করবো।
প্রশ্নঃ সৌর চুলা পরিবেশ রক্ষায় কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে?
সৌরচুলা পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্নভাবে ভূমিকা পালন করে। যেমন:
অ-নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার হ্রাস: চিরাচরিত রান্নার পদ্ধতিগুলি প্রায়শই জীবাশ্ম
জ্বালানির মতো অ-নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলির উপর নির্ভর করে, যা বায়ু দূষণে অবদান রাখে। অন্যদিকে সৌর চুলা সূর্যের শক্তির উপর নির্ভর করে যার দরুন পরিবেশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।
বন উজাড় হ্রাস: চিরাচরিত রান্নার পদ্ধতিতে জ্বালানি হিসেবে কাঠের উপর নির্ভর করতে হয়। এটি বন উজাড় হতে পারে, যা জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিতে অবদান রাখে। সৌর চুলায় কোন জ্বালানীর প্রয়োজন হয় না ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে।
উন্নত স্বাস্থ্য: চিরাচরিত রান্নার পদ্ধতি যা পোড়ানো কাঠ বা অন্যান্য জৈব জ্বালানীর উপর নির্ভর করে বায়ু দূষণ তৈরি করে, যা শ্বাসকষ্ট এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। কিন্তু সৌর চুলায় তেমনটা হয় না।
সামগ্রিকভাবে, সৌর চুলা চিরাচরিত রান্নার পদ্ধতির একটি টেকসই এবং পরিবেশ বান্ধব বিকল্প অফার করে। অ-নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের উপর নির্ভরতা হ্রাস করে, বন উজাড় এবং বর্জ্য হ্রাস করে এবং উন্নত স্বাস্থ্যের প্রচার করে, সৌর চুলা পরিবেশ রক্ষা করতে এবং আরও টেকসই ভবিষ্যতে অবদান রাখতে সহায়তা করতে পারে।